সাব্বির-শান্তার অনন্য উদ্যোগ

সাব্বির-শান্তার অনন্য উদ্যোগ

  • লিডারশিপ ডেস্ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন সাব্বির হোসাইন। অবসর কাটে বই পড়ে। মূল আগ্রহ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই। সংগ্রহে খুব বেশি বই ছিল না। লাইব্রেরিই প্রধান ভরসা। কিন্তু দেখলেন এ ধরনের বইয়ের পর্যাপ্ত সংগ্রহ নেই। ২০০৭ সালে তাই নিজেই শুরু করলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা এবং প্রচারণার কাজ।

এ কাজ করতে গিয়েই ২০১৪ সালে ফেসবুকে শান্তার সঙ্গে পরিচয়। শান্তা আনোয়ারের চার মামা মুক্তিযুদ্ধে যান। কিন্তু বেঁচে ফিরে আসেন মাত্র একজন, বাকি তিনজনই শহীদ। ছোটবেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধার এসব গল্প শুনে বড় হন তিনি। একসময় পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যে। ছিলেন দীর্ঘ ৯ বছর। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পুনরায় শুরু হলে ফিরে আসেন দেশে। মুক্তিযুদ্ধের দলিল নিয়ে সাব্বির হোসাইনের কাজ তাঁকে আকৃষ্ট করে। প্রধান অর্থদাতা হিসেবে যুক্ত হতে চাইলে সাগ্রহে রাজী হন সাব্বির। মুক্তিযুদ্ধের বই, দলিল, ভিডিও, গান ইত্যাদি ডিজিটাল করা হলে অনলাইনে ঘরে বসেই যে কেউ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবেন। বেঁচে যাবে সময়। এমন চিন্তা থেকেই ডিজিটাল আর্কাইভ করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ২০১৪ সালের ৪ মে শুরু হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ’-এ আপলোডের কাজ। এর পর একে একে যুক্ত হন জাহিদ খান, এম আই খান, এস এ খান, মারুফ হোসেন, দেওয়ান মাহমুদসহ আরো অনেকে।

যা আছে

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ আসলে মুক্তিযুদ্ধের বই, দলিল, ভিডিও ফুটেজ, চলচ্চিত্র, অডিও ও ছবির একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনার পেপার কাটিং, মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট ও অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনাসংক্রান্ত বিভাগে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভিডিও-সাক্ষাত্কার, বাংলাদেশের স্বাধিকার সংগ্রামের ইতিহাস, একাত্তরের গণহত্যা ও নারী নির্যাতনসহ নানা তথ্য। বর্ণানুক্রমিক, সময়ক্রমিক এবং লেখক তালিকা—এই তিন পদ্ধতিতে আর্কাইভে ব্রাউজ করা যাবে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এরই মধ্যে প্রায় ১০ লাখ পাঠক নিবন্ধন করেছেন সাইটটিতে।

যেভাবে তথ্য পাবেন

indexতথ্যগুলো ওয়েবসাইটে রয়েছে বিভাগ আকারে। এগুলো পড়া ও ডাউনলোড করা যাবে। বই-দলিলপত্র-সংবাদপত্র হোস্ট করা হয়েছে মিডিয়াফায়ার ও গুগল ড্রাইভে। গুগল ড্রাইভে ফাইলগুলো ‘রিড অনলি’ করা, তাই ডাউনলোড করা যাবে না। ড্রাইভ থেকেই ফাইলগুলো পড়তে হবে। ভিডিও ও চলচ্চিত্রগুলো হোস্ট করা হয়েছে ইউটিউবে। এখান থেকে ভিডিও দেখা ও ডাউনলোড করা যাবে। অডিও ফাইলগুলো ওয়ানড্রাইভ এবং ছবি ফ্লিকারে হোস্ট করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন গেজেটের তথ্য রয়েছে এই ডিজিটাল লাইব্রেরিতে।

আর্কাইভে যুক্ত হতে চাইলে

সাব্বির হোসাইন জানান, যে কেউ সংগ্রহে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ও দলিলপত্র স্ক্যান করে আলোকচিত্র, ভিডিও ফুটেজ, প্রামাণ্যচিত্র, চলচ্চিত্র অডিও ফাইল ওয়েবসাইটের আপলোড পেইজে গিয়ে আপলোড করে দিতে পারে। স্ক্যানের সুবিধা না থাকলে মূল বই ও দলিলপত্র মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ টিমকে দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে আনা-নেওয়ার খরচ মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ কর্তৃপক্ষ বহন করবে। স্ক্যান শেষে স্বল্প সময়ের মধ্যে অক্ষত অবস্থায় তা মালিককে ফেরত দেওয়া হবে। চাইলে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করা যাবে। বই ও দলিল সংরক্ষণের জন্য স্ক্যানার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্কও দেওয়া যাবে। আর্কাইভে এ পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণ প্রায় এক টেরাবাইট। এ পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট হোস্টিং ও ব্যাকআপের ক্ষেত্রেও অনেক ব্যয় হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত ব্যয় বহন করেও মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভের সঙ্গে যুক্ত থাকা যাবে।

পরবর্তী পরিকল্পনা

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চান ট্রাস্টের পরিচালক সাব্বির হোসাইন। শুধু মুক্তিযুদ্ধের তথ্যের প্রচারই নয়, তরুণ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় হতে পারে ও দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় সে লক্ষ্যে কাজ করা হবে বলে জানান তিন। সাব্বির বলেন, যেহেতু এটি একটি অবাণিজ্যিক ও অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান এবং এতে সংরক্ষিত বইপড়ার জন্য পাঠককে কোনো খরচ করতে হয় না। তাই মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভকে কপিরাইটবিষয়ক ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা কম। এর পরও যদি কোনো প্রকাশক বা লেখকের যৌক্তিক আপত্তি থাকে, তাহলে আলোচনা সাপেক্ষে সেসব বই ও তথ্য সাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

যোগাযোগ

এ ডিজিটাল লাইব্রেরিতে মন্তব্যের সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে ই-মেইল করা যাবে liberationwarbangladesh@gmail.com ঠিকানায়। ফেইসবুকে যোগাযোগ করা যাবে https://www.facebook.com/liberationwarbangladesh.org-এ গিয়ে।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment