বিপ্লবের যত উদ্ভাবন
- লিডারশিপ ডেস্ক
নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত পাঠাতে থাকবে যন্ত্র। এমনকি বন্যার পানি বাড়ার অনেক আগে থেকেই অবিরাম সাইরেনের আওয়াজে সতর্ক করবে নদীতীরবর্তী জনপদের লোকজনকে। সুযোগ মিলবে জানমাল নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার। শুষ্ক মৌসুমেও নদীর স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক গতিপথ দূর থেকে জানা যাবে স্বয়ংক্রিয় এ যন্ত্রের মাধ্যমে। অভিনব যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন বগুড়ার যন্ত্রপ্রকৌশলী মাহমুদুন নবী বিপ্লব।
স্বয়ংক্রিয় বন্যা সতর্কতার যন্ত্রটি তৈরিতে খরচ পড়বে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা বলে জানান প্রকৌশলী বিপ্লব। ডিভাইসটি পরিচালিত হবে মূলত ব্যাটারি ও সৌর প্যানেল দিয়ে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রটি উপস্থাপনের পর এটি চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়। সরকারি সহযোগিতায় যন্ত্রটি নদীতীরবর্তী এলাকায় স্থাপন করে জানমালের সুরক্ষা সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্ভাবক।
বিপ্লব জানান, যন্ত্রটি স্থাপন করতে হবে নদীতীরের সুবিধাজনক স্থানে ২৫ মিটার উঁচু টাওয়ারের ওপর। সৌরশক্তিচালিত যন্ত্রটিতে একটি স্বয়ংক্রিয় সেন্সর রয়েছে যা পানির উচ্চতার তারতম্যের ফলে টাওয়ারে সংকেত পাঠাবে। সেখান থেকে তিন রঙের (লাল, হলুদ ও সবুজ) স্বয়ংক্রিয় বাতির মাধ্যমে পানির উচ্চতার তারতম্যের সংকেত দিতে থাকবে যন্ত্রটি। এতে করে নদীতীরবর্তী মানুষগুলো বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপর্যয় নেমে আসার আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সুযোগ পাবে। যন্ত্রটি স্থাপন করে সুফল পাওয়া যাবে সাগরতীরবর্তী জনপদেও।
এই যন্ত্র প্রকৌশলী আরো জানান, নদীতে পানির উচ্চতা সেট করা মান থেকে কম হলে যন্ত্রে সবুজ রঙের বাতি জ্বলবে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ নিশ্চিত হবে যে নদীর পানির উচ্চতা এখন স্বাভাবিক রয়েছে। পানির উচ্চতা সেট করা স্বাভাবিক মান থেকে বেশি হলেও তা বিপজ্জনক মান থেকে কম থাকলে জ্বলবে হলুদ রঙের বাতি। তাতে করে এলাকার মানুষ বুঝতে পারবে যে পানির উচ্চতা স্বাভাবিক থেকে বেশি। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে বন্যার পানি ওই এলাকায় বিপত্সীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা আছে। আর পানির উচ্চতা সেট করা বিপত্সীমার মান অতিক্রম করলে লাল রঙের বাতি জ্বলবে। তাতে করে তাত্ক্ষণিক সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাবে নদীতীরবর্তী ও চর এলাকার মানুষ। তারা সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরবাড়ি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে পারবে। তাঁর মতে, যন্ত্রটি নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হলে প্রতিবছর বন্যার কবল থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি বাঁচবে মানুষের জীবন।
বিপ্লবের আরো উদ্ভাবন : বিপ্লবের উদ্ভাবিত আরেকটি প্রযুক্তি হলো ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেম। এটি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী একটি যন্ত্র। তাঁর তৈরি এই যন্ত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তৈরিতে খরচও তুলনামূলক বেশ কম, ৩৫-৩৬ হাজার টাকা। দুই টনের একটি এসি (দুই হাজার ৪০০ ওয়াট) প্রতি ঘণ্টায় ১৬ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। সেখানে এই ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেমে (৯৫ ওয়াট) প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র ১ দশমিক ৫২ ওয়াট। এরই মধ্যে বিভিন্ন মোবাইল কম্পানির বিটিএস কক্ষে (টাওয়ার) তাঁর এই ডিসি ভেন্টিলেশন সিস্টেমের এক হাজার ৩০০ ইউনিট সংযোজন করা হয়েছে। এতে করে বাতাসে কার্বন নির্গমনও অনেক কমে গিয়ে পরিবেশদূষণ রোধ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
প্রকৌশলী বিপ্লব বর্তমানে আরেকটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছেন। এটি হলো বেবি ইউরিন অ্যালার্ম সিস্টেম—ওয়াটার প্রুফ বিছানা। এই বিছানায় রয়েছে একটি কন্ট্রোল সার্কিট ও একটি ওয়্যারলেস কলিং বেল। বিছানায় বাচ্চা প্রস্রাব করলে সিস্টেমটি একটি সিগনাল থ্রো করবে কলিং বেলে। সঙ্গে সঙ্গে কলিং বেলটি সিগনালের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেবে যে বাচ্চা প্রস্রাব করেছে।