সুযোগ সারাক্ষণ অপেক্ষা করে : কিরণ মজুমদার শাহ
- লিডারশিপ ডেস্ক
ভারতে ধনীদের তালিকায় নারীদের সংখ্যা হাতে গোনা। তাদের মধ্যে এক নম্বরে উঠে এসে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন কিরণ মজুমদার। নিজের অবিরাম চেষ্টায় হয়েছেন বিলিওনেয়ার। কিরণকে প্রথম প্রজন্মের প্রথম উদ্যোক্তা নারী বিলিওনেয়ার বলা হয়। বায়োফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান বায়োকন-এর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিরণ। ১৯৭৮ সালে বেঙ্গালুরুতে নিজের ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাটের গ্যারেজে গড়ে তোলেন প্রথম বায়োকন অফিস। এখন বায়োকন এশিয়ার সবচেয়ে বড় ইনসুলিন প্রস্তুতকারক।
বিশ্বে কিরণ নামেই পরিচিত। পুরো নাম কিরণ মজুমদার শাহ। বিখ্যাত ফোর্বসের তালিকায় উঠে এসেছেন বিশ্বের ১১তম শক্তিশালী নারী উদ্যোক্তার পরিচয়ে। বয়স তখন ২৫ সবে। ভারতের চাকরিহীন উদ্যোমী তরুণী কিরণ মজুমদার প্রাণিবিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করে অষ্ট্রেলিয়ার ব্যালারত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিউইং বিষয়ে মাস্টার্স শেষে ভারতে ফিরে আসেন। দফায় দফায় চাকরি অন্বেষণে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমান। সে দেশের একজনের অনুপ্রেরণায় নিজভূমি ভারতে ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যিকভাবে বায়োটেকনোজিক্যাল পণ্য উদ্ভাবন ও তৈরি করা। ঋণের জন্য বহু ব্যাংকে দৌঁড়ঝাপ করেও ঋণের দেখা পাননি। অবশেষে ঋণের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেই কিছু করার ভাবনা পেয়ে বসে কিরণ মজুমদারের। ১৯৭৮ সালে বায়োটেকনোজিক্যাল পণ্যের যে বাজার চাহিদা আছে সে সময় ভারতে এ নিয়ে কারো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। কিরণের এ ‘উদ্ভূত’ আইডিয়া দেখে অনেকে ঠাট্টাও করেছেন। নিজের কষ্টার্জিত মাত্র ১০ হাজার রুপির পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে ভাড়া বাড়ির গ্যারেজে দু’জন কর্মচারী নিয়ে ‘বায়োকন’ নামে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আজ সেই ১০ হাজার রুপির মূলধনের প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্য ১৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গ্যারেজে চালু দু’জন কর্মীর জায়গায় বর্তমানে কর্মী সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৯৫০টির মতো প্যাটেন্টের আবেদনের মধ্যে ১৪৮টির বাণিজ্যিক অনুমতি পেয়েছে বায়োকন। ২০১৪ সালের ‘অথমার গোল্ড’ মেডেল দেয়া হয় বায়োকনের প্রতিষ্ঠাতা কিরণ মজুমদার শাহকে। প্রথম ভারতীয় ও বিশ্বের তৃতীয় নারী হিসেবে এ সন্মানের অধিকারী হন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার কেমিক্যাল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ সম্মান দেয়া শুরু করে। শিক্ষা, বাণিজ্য, গবেষণা, উদ্ভাবনী ও মানবপ্রেমের বিবেচনায় এ পুরস্কার দেয়া হয়।
২৫ বছরের মেয়ে নিজেই শিল্প-উদ্যোগ, তা-ও আবার এনজাইম উৎপাদন, চেনাজানা লোকেরাও অনেকেই বলেছিলেন, ‘ধুর!’ ব্যাংক থেকে ধার পাওয়া কঠিন। তাছাড়া কাজের জন্য ভালো লোক পাওয়া আরও দুঃসাধ্য। এখন বায়োকন শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বায়োটেকনোলজি, মানে জৈবপ্রযুক্তির দুনিয়ায় স্বনামধন্য। ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের মতো ব্যাধির ওষুধ তৈরিতে তার ভূমিকা প্রথম সারিতে। এ ছাড়াও চলছে ওষুধ নিয়ে মৌলিক গবেষণা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা চালানোর বিরাট কর্মযজ্ঞ। দেশি-বিদেশি বহু সম্মান পেয়েছেন কিরণ মজুমদার। ২০০৫ সালে পেয়েছেন পদ্মভূষণ।
এ প্রসঙ্গে কিরণ মজুমদার শাহ বলেন, নারী উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন কাজ। তাছাড়া একেবারেই নতুন ঘরানার ব্যবসা শুরু করা ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। ফলে সামনে ছিল অন্যরকম একটা চ্যালেঞ্জ।
কিরণ বিশ্বাস করেন, আগে নিজের ধারণা, প্রযুক্তি, দক্ষতা, পরিকাঠামো, সব কিছু যথেষ্ট ভালো করে তৈরি করে, পরে উদ্যোগ বাড়ানো। অপ্রস্তুত অবস্থায় অনেক বড় করে ব্যবসা পেতে বসলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কিরণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, সবাই যা করে, যেভাবে করে, তিনি সেভাবে করবেন না। প্রথম কথা হল ‘অন্য রকম’ হওয়ার, ‘অন্য ভাবে’ কাজ করার অকৃত্রিম তাগিদ। মূলত এ তাগিদই প্রকৃত উদ্যোগীকে ইঙ্গিত করে। এ জন্য কিরণের প্রতিষ্ঠানের স্লোগান ‘দ্য ডিফারেন্স লাইজ ইন আওয়ার ডিএনএ’।
‘সুযোগ সারাক্ষণ অপেক্ষা করছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা। এটা বহুবার প্রতীক্ষিত। কিউবা জৈবপ্রযুক্তিতে খুবই এগিয়ে। একবার কিউবার এক জৈবপ্রযুক্তি প্রকল্পের কর্তাব্যক্তির সঙ্গে দেখা। খুব ভালো প্রযুক্তির সন্ধান পেলাম তার কাছে। কিনলাম সেটি, খুব কাজে লাগল। সুযোগ এল, প্রস্তুত ছিলাম, সুযোগটা কাজে লাগালাম। এটা হতেই থাকে।’