ক্লিনার থেকে প্রেসিডেন্ট
- লিডারশিপ ডেস্ক
আফ্রিকার ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে আছেন তিনি। অভাবের তাড়নায় পড়ালেখার অর্জনটা তার একেবারেই কম। করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রেলস্টেশনের সাধারণ ক্লিনারের কাজ। কীভাবে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা যায়, এ নিয়ে তার ভাবনার কমতি ছিল না। এক সময় নেমে পড়েন রাজনৈতিক অঙ্গনে। গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল। নিজের জন্য নয় বরং গোটা কৃষ্ণ আফ্রিকানদের মুক্তির জন্য লড়াই করেন। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামও হয় তার নেতৃত্বে। অবশেষে অর্জিত হয় নামিবিয়ার স্বাধীনতা।
কৃষ্ণ-আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনে কয়েকজন মহানায়ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। সে তালিকায় নামিবিয়ার চাষির ছেলে শ্যাম নাজোমা অন্যতম। তিনি নামিবিয়ার জাতির পিতা। ১৯২৯ সালের ১২ মে জন্ম নেন নাজোমা। পুরো নাম স্যামুয়েল ড্যানিয়েল নাজোমা। হেলভি মিখানা কন্দম্বলো এবং ড্যানিয়েল আটনি নাজোমা দম্পতির বড় সন্তান শ্যাম নাজোমা। ওংগ্যান্ডজিরা একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। গ্রামটি ওকাহাও শহরের একেবারে কাছাকাছি অবস্থিত। এগারো ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
 তাই তো দায়িত্বটাও পাহাড়সম। মহান এই নায়কের ছেলেবেলা কেটেছে ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা করে। চাষ আর গবাদিপশু পালনই ছিল দরিদ্র নাজোমা পরিবারের আয়-উপার্জনের একমাত্র পথ। ছেলেবেলা থেকেই পরিবার, পিতা-মাতার সঙ্গে তিনি  গবাদিপশু আর জমি চাষ করতেন। কয়েকটি গবাদিপশু আর ছাগল ছিল তাদের পরিবারে। প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণ করেন ওকাহাওয়ের ফিনিশ মিশনারি স্কুলে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে পড়াশোনায় খুব বেশি এগুতে পারেননি। প্রাইমারি স্কুলই থেমে যায় পড়াশোনা। ১০ বছর বয়সে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির গণ্ডি পেরোন। কৃষ্ণবর্ণের হওয়াতে সে সময় এই গণ্ডি পেরোনোয় ছিল অসম্ভব।
তাই তো দায়িত্বটাও পাহাড়সম। মহান এই নায়কের ছেলেবেলা কেটেছে ছোট ভাই-বোনদের দেখাশোনা করে। চাষ আর গবাদিপশু পালনই ছিল দরিদ্র নাজোমা পরিবারের আয়-উপার্জনের একমাত্র পথ। ছেলেবেলা থেকেই পরিবার, পিতা-মাতার সঙ্গে তিনি  গবাদিপশু আর জমি চাষ করতেন। কয়েকটি গবাদিপশু আর ছাগল ছিল তাদের পরিবারে। প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণ করেন ওকাহাওয়ের ফিনিশ মিশনারি স্কুলে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন বলে পড়াশোনায় খুব বেশি এগুতে পারেননি। প্রাইমারি স্কুলই থেমে যায় পড়াশোনা। ১০ বছর বয়সে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণির গণ্ডি পেরোন। কৃষ্ণবর্ণের হওয়াতে সে সময় এই গণ্ডি পেরোনোয় ছিল অসম্ভব।
ওয়ালভিসবেতে এক আত্মীয়ার বাসায় চলে আসেন। পড়াশোনার ইতি ঘটিয়ে এখান থেকেই শুরু করে জীবনের প্রথম কর্মসংস্থান। মাত্র ১০ শিলিং বেতনে তিনি একটি জেনারেল স্টোরে কেরানির কাজ করেন। এরপর কাজ করেন একটি হুইল স্টেশনে। এখান থেকেই শ্যাম নাজোমার রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বেড়ে ওঠে। ১৬ বছর বয়সে, তখন তিনি রেলওয়ে ডাইনিং কার-স্টুয়ার্ডে যোগ দেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় এক কর্মী গুরুতর আহত হলে কোনো রকম ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি তার হৃদয়ে দাগ কাটে। তখন থেকেই তিনি সুবিধাবঞ্চিত কর্মীদের কথা ভেবে একটি বাণিজ্য সংগঠন গড়ে তোলেন।
নরওয়ে এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে এসেছিলেন। এই স্টেশনেই তিনি আর্জেন্টিনা থেকে আগত অসংখ্য সৈন্য আর বিশ্ব রাজনীতির বহু গুরুত্বপুর্ণ রাজনীতিবিদদের দেখা পান। নাজোমা ১৯৪৯ সালে ওয়ান্ডবইক চলে আসেন। এখানে তিনি সাউথ আফ্রিকান রেলওয়েতে (এসএআর) কাজ পান। তিনি ছিলেন স্টেশনটির একজন সাধারণ ক্লিনার। ক্লিনার থাকা অবস্থায় স্টেশনের যাত্রীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করতেন। কীভাবে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা যায়, দেশকে কীভাবে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাযোগ্য স্থান দেওয়া যায় এসব বিষয়ে আলোচনা করতেন। তখন থেকেই তিনি রাজনীতি ও নামিবিয়ার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার নিয়ে ভাবেন। এরপর তিনি পুরনো ওয়ান্ডবইকের স্টেট বার্নবাস অ্যাংলিক্যান চার্চ স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি নৈশকালীন পড়াশোনা শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন। এরপর তিনি ট্রান্স আফ্রিকা কলেজ থেকে জুনিয়র সার্টিফিকেট অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই শুরু হয় তার নামিবিয়ার শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তার জাতির পিতা হয়ে ওঠার গল্প।
১৯৫০ সালে বাণিজ্য ইউনিয়নের মাধ্যমে প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হন। শুরু থেকেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ প্রশংসা কুড়ান। সম্পূর্ণ বাস্তবতার আলোকে তিনি রাজনৈতিক হিসাব কষতেন। নামিবিয়ার শোষিত শ্রমব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন। এরপর রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নানা মতবিনিময়, তার তীক্ষ বুদ্ধিমত্তা আর রাজনৈতিক দূরদর্শী ভাবনা ছড়িয়েছে নামিবিয়ার পরতে পরতে। ১৯৫৬ সালে যখন তিনি ‘এসএআর’ নামের একটি রাজনৈতিক দলে কাজ করতেন। কিন্তু দলটির সঙ্গে তার মতাদর্শে বেমিল হওয়ায় তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। দলটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন নাজোমা।
সে সময় তিনি ওভম্বোল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ওপো) প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ছিলেন দলটির প্রথম সভাপতি। ১৯৬০ সালে তিরি দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান রাজনৈতিক দল পিপলস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউএপিও) এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়ান ভূখণ্ডটি ছিল বর্ণবাদ নীতিমালার ঘোর অনুসারী। যার পুরোটা ছিল সাদাদের দখলে। সাদারা নামিবিয়ানদের তখন প্রচণ্ড নিগৃহীত করত। ১৯৬৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধের অনুমোদন দেন। শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে চলে যুদ্ধ। কৃষ্ণ আফ্রিকানদের মুক্তির লড়াইয়ের নায়ক তিনি। ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতা।
১৯৮৯ সালের নির্বাচনে নাজোমা হন স্বাধীন নামিবিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট। একই সময়ে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক দল এসডব্লিউএপিও-এরও প্রধান। নামিবিয়ার এই মহানায়ক ১৯৫৬ সালে কোভাম্বো ক্যাতিজমুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে নাজোমা দম্পতির সুখের সংসার। ২০০৭ সালে স্বাধীন নামিবিয়া তাকে জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা করেন।
এক নজরে শ্যাম নাজোমা
♦ স্বাধীন নামিবিয়ার জাতির পিতা ও দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট (১৯৯০-২০০৫)
♦ জন্ম: ১২ মে ১৯২৯ (বর্তমানে ৮৭ বছর বয়স)
♦ রাজনৈতিক দল ওপো এবং এসডব্লিউএপিও-এর প্রেসিডেন্ট (১৯৯০-২০০৭)
♦ প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন ওকাহাও ফিনিশ মিশন স্কুল (১৯৩৭-১৯৪৫)
♦ ১৯৯৬ সালের ৬ মে কোভাম্বো ক্যাতিজমুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং নাজোমা দম্পতির সংসারে ৫ সন্তান।

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	