তিনি বইয়ের ফেরিওয়ালা
- লিডারশিপ ডেস্ক
ফেনী শহর থেকে খানিক দূরের গ্রাম মাটিয়াগোধার মানুষ ইউনুছ খান। তাদের গ্রামে এখনো বিদ্যুতের আলো নেই, কিন্তু সবার ঘরে ঠিকই পৌঁছে গেছে জ্ঞানের আলো। গত দু’দশক ধরে ফেরিওয়ালার মতো করে আলো ছড়ানোর এই কাজটিই করে যাচ্ছেন ইউনুছ। প্রতিদিন কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে হাজির হন নিজের গ্রামের মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে। পৌঁছে দেন বই। একসপ্তাহ পর সেটি পড়া শেষ হলে ফেরত নিয়ে দিয়ে আসেন নতুন বই। এখন কেবল ইউনুছ একা নন, তার সঙ্গে এই মহত্ কাজে যোগ দিয়েছেন আরও ক’জন তরুণ। মানুষের মাঝে আলো ছড়িয়ে দেওয়া ও আনন্দ দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
ছোটবেলা থেকেই বই আর পত্রিকার প্রতি টান ছিল ইউনুছের। কিন্তু আশপাশে ১০-১২টি গ্রামের কোথাও পাঠাগার ছিল না। নিজের পড়ার শখ মেটাতে ইউনুছকে উপজেলা শহরে যেতে হতো। তখন থেকেই নিজের গ্রামে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তার। প্রথমদিকে অনেকেই এ পরিকল্পনার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ইউনুছ দমেননি।
এসএসসি পাসের পর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ২০০১ সালে ইউনুছ গড়ে তোলেন মহামায়া গণপাঠাগার। তার সঙ্গে হাত মেলান জাহাঙ্গীর কবির রাজিব, শেখ জুটন, রেজাউল করিম, আবদুল্লাহ ইবনে মনির বাবু, আবু বকর, গরীব শাহ হোসেন বাদশা, দেলোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকজন তরুণ। মাত্র তিনশ বই নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। আর যারা পাঠাগারে আসতে পারতেন না, তাদের বাড়িতেই পৌঁছে দেওয়া হতো বই। শুরুতে নিয়মিত পাঠক ছিলেন মাত্র উনিশজন। ধীরে ধীরে এ সংখ্যা হাজারকেও ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে নিবন্ধিত পাঠক সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এর বাইরেও অনেক পাঠক আছেন যারা শুধু পাঠাগারে এসে বই পড়ে যান, কিন্তু নিবন্ধিত হননি। এখন দৈনিক গড়ে ১২০ থেকে ১৪০ জন পাঠক পাঠাগারে এসে বই পড়েন। বইয়ের পাশাপাশি দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্র-পত্রিকাও রয়েছে।
ইউনুছ খান বলেন, ‘পাঠাগারে সবাই এসে বিনামূল্যে বই, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়েন। পাঠাগারের সদস্য হলে বাড়িতে বই পৌঁছে দেওয়া হয়। সবসময়ই এটির সামনে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের ভিড় লেগে থাকে।’
শুধু বইপড়া বা বই দেওয়া-নেওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয় ইউনুছদের মহামায়া গণপাঠাগার। নিয়মিত পরিচালনা করা হয় শিক্ষা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। তাছাড়া জাতীয় দিবসগুলোও ঘটা করে পালন করা হয়, এজন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও মিলেছে স্বীকৃতি।
ইউনুছ বলেন, ‘একসময় প্রকৃতির নিয়মেই তারা থাকবেন না। কিন্তু এই পাঠাগার থেকে যাবে, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাবে।’