ছয় তরুণের উদ্যোগ
লিডারশিপ ডেস্ক
ঈদ উৎসবের নতুন রঙিন জামা সব শিশুর ভাগ্যে জোটে না। অনেক শিশু ঈদে পরিবারের পক্ষ থেকে চার-পাঁচটি নতুন জামা পেলেও কেউ কেউ একটিও নতুন জামা ছাড়াই পার করে দেয় ঈদের উৎসব। একইভাবে ঈদের দিন ভালো খাবারও জোটে না অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর। সবার মতো সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও যাতে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে এর জন্য কাজ করছে ছয় তরুণের একটি দল। প্রায় এক যুগ ধরে চট্টগ্রাম মহানগরীর দুই শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বয়স্কদের মাঝে তারা নতুন জামা-কাপড়, সেমাই, চিনি, দুধ, বাদাম, কিশমিশ, খাতা, কলম, স্কেল, পেনসিল, সাবান, শ্যাম্পুসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করে আসছেন। এই ছয় তরুণের মধ্যে কেউ ছাত্র, কেউ চাকরিজীবী, কেউবা ব্যবসায়ী। সুবিধাবঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটানো এ ছয় তরুণ হলেন মো. তৌহিদ হোসেন রাকিল, মো. ইমরান, আমেনা হোসেন খান, ইফা আনম, মো. শিবলী নোমান ও রাশেদ পারভেজ দিপু।
ছয়জনের এই উদ্যোগের শুরুটা হয় মো. তৌহিদ হোসেন রাকিলের হাত ধরে। তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালের রমজান মাস। ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে এক জায়গায় চোখে পড়ে জামা-কাপড়হীন কয়েকটি শিশু। তখন ছাত্র ছিলাম বলে কিছু করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০০৬ সালে কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য বাবা যে টাকা দিয়েছিলেন, তা থেকে তিন হাজার টাকা বেচে যায়। ওই টাকা দিয়ে কিছু সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে ঈদে নতুন জামা-কাপড় ও চকোলেট কিনে দেই।’
সেই থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকে কাজে নেমে পড়েন রাকিল। সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তায় শুরু করেন নানা কাজ। এসব কাজে আরও পাঁচজনকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। রাকিল সমকালকে বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এতদূর আসা। সবার সন্মিলিত উদ্যোগে প্রায় এক যুগ এ কাজটি করছি আমরা। নিজেদের আয় থেকে কিছু টাকা আমরা সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ব্যয় করি। নতুন কাপড় নিয়ে যখন একটি শিশু আনন্দের হাসি হেসে চলে যায় তখন আমাদেরও আনন্দের সীমা থাকে না।’
ঈদসামগ্রী যাদের মধ্যে বিতরণ করা হয় সেই তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর মা-বাবাহীন এতিম শিশুসহ নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। পাশাপাশি গরিব অসহায় রিকশা-ঠেলাগাড়ি চালক অথবা স্বজনহীন বয়স্করাও রয়েছেন তাদের তালিকায়। নিজেদের প্রতি মাসের উপার্জন থেকে অর্থের সংস্থান করেন এই ছয় বন্ধু। ভবিষ্যতে একটি বৃদ্ধাশ্রম করার পরিকল্পনা রয়েছে এই ছয় বন্ধুর। চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, আগুনে ক্ষতিগ্রস্তসহ নানা সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায়ও এগিয়ে যায় এই ছয় তরুণের দলটি।
ছয় বন্ধুর অন্যতম মো. ইমরান বলেন, ‘প্রতি মাসের উপার্জন থেকে কিছু টাকা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য রেখে দিই। আমিসহ আরও পাঁচ সহযোদ্ধা এভাবে টাকা রাখি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও যাতে সবার মতো ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে তার জন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা।’ আরেক সহযোদ্ধা শিক্ষার্থী আমেনা হোসেন খান বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও সমাজের একটি অংশ। তাদেরও রয়েছে সামাজিক অধিকার। নতুন জামা, সেমাইসহ ঈদের নানা সামগ্রী এসব শিশুর হতে তুলে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’
নগরীর রেলস্টেশন বস্তিতে থাকে মো. আলতাফ। ওর বয়স ছয় বছর। সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুটি নতুন জামা পেয়ে বলে, ‘নতুন জামা গায়ে দিয়ে আমিও ঈদ করব। খুব খুশি লাগছে।’ আরেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু শরীফ উল্লাহ বলে, ‘ভাইয়ারা আমাদের নতুন জামা দিয়েছে, সেমাই, চকোলেট আরও কত কী দিয়েছে। নতুন জামা পরে ঈদ করব। অনেক খুশি লাগছে।’ রিকশাচালক একরাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব-অসহায়দের জন্য এগিয়ে আসায় ছয় ভাইবোনকে অনেক ধন্যবাদ। তাদের কল্যাণে আমার মতো অনেকের অনেক চাওয়া পূর্ণ হয়েছে।’