পথশিশুদের মজার স্কুল
- লিডারশিপ ডেস্ক
দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবছেন তরুণরা। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখেন তারা। দেশ ও দশের কল্যাণের বিষয়টি তাদের ভাবায়। সমাজের ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়ে এখন সরব তারা। নিজস্ব বা দলগত উদ্যোগে তরুণরা এখন নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করছেন। তেমনই একটি উদ্যোগ ‘মজার ইশকুল’। পথশিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
২০১৩ সালে এক পড়ন্ত বিকালে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আরিয়ান আরিফ নামে এক তরুণ। তার স্ট্যাটাসের মূল বিষয় ছিল সমাজের কল্যাণে কিছু একটা করা দরকার। এমন স্ট্যাটাস উপলব্ধি করে জাকিয়া সুলতানা, জেরিন আক্তার, হাসিবুল হাসান সবুজ ও মো. শাকিল আহম্মেদ যোগাযোগ করেন তার সাথে। যোগাযোগের মাধ্যমটাও ফেসবুক। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পথশিশুদের জন্য একটি স্কুল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তারা। নাম দেন ‘মজার ইশকুল’। যেখানে শুধু পথশিশুদের পাঠদানই করা হয় না, তাদের মানবিক বিকাশের জন্য শিক্ষা ও বিনোদনমূলক নানা কার্যক্রমেরও আয়োজন করা হয়।
এখন মজার ইশকুলের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২০ জন। রাজধানীতে তালতলা, মানিকনগর, কমলাপুর, শাহবাগ এবং সদরঘাটে আছে মজার ইশকুলের পাঁচটি স্থায়ী ক্যাম্পাস। এসব জায়গায় সপ্তাহে পাঁচদিন পথশিশুদের ক্লাস নেওয়া হয়। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়ানো হয়। তারপর অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়।
এছাড়া রাজধানীর দশটি জায়গায় রয়েছে মজার ইশকুলের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। যেখানে চলে পথশিশুদের কাউন্সেলিং। স্বেচ্ছাসেবীরাই কাজগুলো করেন। বর্তমানে ৭শ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবী মজার ইশকুলের সাথে জড়িত। তাদের মাসিক চাঁদা থেকেই চলে স্কুলের সব কার্যক্রম, জানালেন স্বেচ্ছাসেবী মো. শাকিল আহম্মেদ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের স্কুলে আমরা নিজেরাই নিয়মিত পাঠদান করাই। প্রথমে আমরা রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি এলাকা, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন ও মার্কেটে গিয়ে পথশিশুদের কাউন্সেলিং করাই। ওদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করি। ওদের ইচ্ছার কথা শুনি এবং ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝাই। তারপর ওরা যখন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখায়, তখন আমরা আমাদের স্কুলে নিয়ে আসি।
শুধু পড়াশোনাই নয়, পথশিশুদের নিয়ে বছরে ছয়টি অনুষ্ঠান আয়োজন করে মজার ইশকুল। আয়োজন করা হয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে পথশিশুরা খেলাধুলা এবং নাচ-গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে শীতকালে আয়োজন করা হয় শীত ও পিঠা উত্সব। শীত উত্সবে শিশুদের মধ্যে গরম পোশাক বিতরণ করা হয় এবং পিঠা উত্সবে পিঠা খাওয়ানো হয়। এছাড়া বছরে দুটি ঈদ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ঈদ উত্সব। তখন শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় আনন্দ উত্সব। এ উৎসবে শিশুদের বিভিন্ন দর্শনীয় ও বিনোদনমূলক স্থান ভ্রমণ করানো হয়।
শাকিল আহম্মেদ বলেন, শিক্ষামূলক বিনোদনের মাধ্যমে এসব শিশুদের মানসিক পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি। কারণ এসব শিশু ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝে না। তারা দৈনন্দিন নানা অপরাধের সাথে মিশে ভালোকে ভুলে যায়। এজন্য আমরা তাদের মানসিক উন্নয়নের জন্য প্রজেক্টরে নানা বিনোদন ও শিক্ষামূলক ভিডিও চিত্র দেখাই।
এই স্বেচ্ছাসেবী আরো বলেন, পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এমন অনেক শিশু পেয়েছি যারা পরিবার সাথে রাগ করে পালিয়ে এসে রাজধানীর বিভিন্ন রেলস্টেশন, বাস স্টেশন ও বস্তিতে স্থান নেয়। এসব শিশুর পরিবারের খোঁজ পেলে আমরা অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করি।
চার বছর ধরে মজার ইশকুলের কার্যক্রম চলার কারণে রাজধানীতে পথশিশুদের সংখ্যা কমে আসছে দাবি করে শাকিল বলেন, আগে রেলস্টেশন, বাসস্টেশন বা মার্কেটে যত পথশিশু পেতাম, এখন তাদের সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসছে। মজার ইশকুলের কার্যক্রম এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে বলে আমাদের বিশ্বাস।