বিজয়ের স্বপ্নকুঁড়ি
- লিডারশিপ ডেস্ক
বিজয় রুদ্র পাল একজন চা-শ্রমিকের ছেলের নাম। কিন্তু তিনি আর দশজন ছেলের মতো নন। তিনি একটি স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। সেই স্বপ্ন হলো নিজের এলাকার লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলা। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সকলকে বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করা শুরু করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তরুণরাই থাকে চালকের আসনে। বর্তমান তরুণরা হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ারের মধ্যে। সেটাও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের স্বার্থে। কিন্তু দেশের যেকোনো দুর্যোগে কিংবা কোনো সমস্যায় এখনো এগিয়ে আসার মানসিকতা রয়েছে আমাদের তরুণ সমাজের। বিজয় সেরকমই একজন তরুণ। মৌলভীবাজার থেকে উঠে আসা সংগঠন স্বপ্নকুঁড়ি সামাজিক সংস্থার মাধ্যমে বিজয় সামাজিক সমস্যা নিরসনের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা নাড়া দিয়েছে সবাইকে।
বিজয় স্বপ্নকুঁড়ি সামাজিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন ২০১০ সালে মৌলভীবাজার জেলায়। সংগঠনটি সম্পূর্ণভাবে অলাভজনক এবং স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। স্বপ্নকুঁড়ির লক্ষ্য হলো তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা এবং দারিদ্র্য বিমোচন সমস্যার জন্য কাজ করা। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক সমস্যা, মাদক সমস্যাসহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যা। এসব ক্ষেত্রে এ সংগঠনের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। আর তাদের এ সাফল্যের মূলে রয়েছে সংগঠনটির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বিশ্বাস এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাগিদ। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গরিব শিশুদেরকে পড়ালেখা চালানোর সুযোগ করে দেওয়া, শিশু-কিশোর ও তরুণদের ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, ভবিষ্যত্ নেতৃত্ব যাতে তরুণদের মাঝে থেকে বের হয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে তাদেরকে নেতৃত্ব সচেতন করা, মেধাবৃত্তি চালু, দুঃস্থ লোকদের মাঝে শীতকালীন কাপড় বিতরণ, পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় সফল শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ইত্যাদি। তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে একটি হলো স্বপ্নকুঁড়ির নিজস্ব স্কুল চালু করা, যেখানে গরিব ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
বর্তমানে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলছে স্বপ্নকুঁড়ি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, গরিব শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা, ডিজিটাল ইনোভেশন ফেয়ারের আয়োজন ইত্যাদি। তবে তাদের সবচেয়ে সাহসী উদ্যোগ হলো সমগ্র সিলেট বিভাগের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা। আসলে স্বপ্নকুঁড়ির কাজের পরিধি বিবেচনা করলে সহজেই স্বপ্নকুঁড়ির সার্থকতা বোঝা সম্ভব।
এদিকে কালজয়ী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে ধারণ করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল তরুণদের তুলে আনতে দারুণ এক উদ্যোগ নেয় অরাজনৈতিক সংগঠন ইয়াং বাংলা। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তরুণদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ, সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ ও অভূতপূর্ব উদ্ভাবনসহ ইতিবাচক অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সংগঠনটি দেয় ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ তারা মোট ১০টি ক্যাটাগরিতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয় ৩০ জন সফল তরুণের হাতে। এই ৩০ জনের একজন ছিলেন বিজয়। সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বিভাগে এই পুরস্কার পান তিনি। বিজয় বলেন, ‘আমি একজন চা-শ্রমিকের ছেলে এবং নিজেও কাজ করেছি চা-শ্রমিক হিসেবে। সবসময় দেখেছি এই এলাকার লোকজন নানা বিষয়ে নিয়মিত বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই তাদেরকে শিক্ষাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে স্বপ্নকুঁড়ি প্রতিষ্ঠা করি। এই সংগঠন যখন দেশের সেরা পুরস্কার পায়, তখন নিজের মধ্যে আরও ভালো কিছু করার আগ্রহ তৈরি হয়।’
বিজয় কাজ করে যাচ্ছেন মৌলভীবাজারের বঞ্চিত শ্রমিকদের জন্য এবং তার কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণরাও এমন কাজে এগিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।