যে গল্পটা তরুণদের জানা দরকার
- আবু তাহের খান
আমাদের অধিকাংশের কাছে বৃষ্টিতে ভেজা আঠালো কাঁদামাটি মানেই এর পিচ্ছিল গাত্রে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া আর সেই পিচ্ছিল কাঁদামাটিই কুমারের হাতে পড়ে হয়ে ওঠে সুদৃ্শ্য মৃৎপাত্র। নদীর বুক ও পাড় ঘেঁসে আমাদের কতোজনেরইতো নিত্য আসা-যাওয়া। কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগে সেখানে সে কবে খুঁজে পেয়েছিল কুবের মাঝির জীবন? গোমতী বা মেঘনা সেতু হওয়ার বহু আগে থেকেই কুমিল্লা থেকে এ পথে কতশত মানুষের যাতায়াত কিন্তু মোস্তফা কামালের আগে কে কবে ভেবেছিলেন যে, মেঘনার এ এবড়ো থেবড়ো পাড় ঘেঁষেই গড়ে তোলো যায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাড়া ফেলে দেয়ার মতো অজুত সম্ভাবনাময় নানা শিল্প-কারখানা? হ্যাঁ, ইতিহাসের সংগ্রামী মানুষ যেমন কঠিন পাথর ঘষে তার বুক চিরে খুঁজে পেয়েছে আগুনের সন্ধান, মোস্তফা কামালও তেমনি ব্যবসা বাণিজ্যের নানা অচেনা পাথুরে পথঘাটকে নিরন্তর পরিশ্রম ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনা দিয়ে একেবারেই অনায়াস সাধ্য করে তুলেছেন। বিদ্যালয়গামী মোস্তফা কামাল গ্রামের বাজারে চাচার সুপারির দোকানে বসে ব্যবসায়ের যে প্রথম পাঠ নিয়েছিলেন, সেটিই আজ পত্রপল্লবে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ—পনের হাজার কর্মীর কর্ম ও কলরবে মুখর চল্লিশটিরও বেশি কারখানায় উৎপাদিত ৩২টিরও বেশি পণ্যের নিত্য সমাহার, যেখানে বার্ষিক টার্নওভারের পরিমাণ ইতোমধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
কোনো পরিশ্রম ছাড়াই রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বুঁদ হয়ে থাকা নতুন প্রজন্মের তরুণদের জেনে রাখা ভালো, যাত্রাবাড়ির লজিংয়ে থেকে ৪ আনা দিয়ে বাসে করে গুলিস্তান এসে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে মৌলভীবাজারে হাজী মোহাম্মদ হোসেনের দোকানে পৌঁছা এবং সারাদিনের কাজ শেষে একই পথে ফিরে যাওয়া। বিনিময়ে মাস শেষে সর্বসাকুল্যে ১৬৫ টাকা। এই ছিল মোস্তফা কামালের প্রথম আনুষ্ঠানিক কর্মজীবন। আমাদের অনেকের কাছেই তাঁর ওই বেতনের এ পরিমাণকে আপাতদৃষ্টে সামান্য মনে হতে পারে। কিন্তু বেতন সামান্য হলেও সেখানে কাজ করে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যে পুঁজি তিনি সংগ্রহ করেন, আজকের ২ বিলিয়ন ডলারের টার্নওভার সে পুঁজিরই ক্রমপুঞ্জিত রূপান্তর নয় কি?
ব্যবসায়িক প্রস্তাব মূল্যায়নের এক অসাধারণ মেধাবী সামর্থ রাখেন মোস্তফা কামাল। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই তিনি সম্ভাব্য পণ্যের অগ্র ও পশ্চাৎ সংযোগ পণ্যগুলোর কথা ভাবেন। ভাবেন প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টতার স্তর নিয়েও এবং অবশ্যই পুঁজি সামর্থের বিষয়টি নিয়েও। এবং মেঘনা গ্রুপের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথমে তিনি নিম্ন প্রযুক্তির স্বল্পপুঁজিসম্পন্ন পণ্যের কথা ভেবেছেন। কিন্তু মাথায় রেখেছেন এটিকেই উচ্চ প্রযুক্তির বড় পুঁজির ব্যবসায়ে রূপান্তরের। বস্তুত ধীরে ধীরে বড় ও বিকশিত হয়ে ওঠার এ চিন্তা তিনি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যেমনি করেছেন, তেমনি করেছেন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। অগ্র ও পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের নানা আদ্যোপান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকরা যখন ঘর্মাক্ত হচ্ছেন, তারা মোস্তফা কামালের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়। তাঁর অভিজ্ঞতার বিবরণ শোনার জন্য বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।