ওয়াল্ডেমার হাফকিন : কলেরা আর প্লেগ থেকে বাঁচিয়েছিলেন বিশ্বকে
- লিডারশিপ ডেস্ক
বিশ্ববাসীর ঘুম কেড়েছে করোনা। রোজ শয়ে শয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। ধুঁকছে অর্থনীতি। মহামারী এর আগেও দেখেছে পৃথিবী। মারা গেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সে রকমই দুই মহামারীর টিকা তৈরি করে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন ওয়াল্ডেমার হাফকিন। সেই ইহুদি বিজ্ঞানীকে কিন্তু আজ সেভাবে মনেই রাখেনি দুনিয়া।
হাফকিনের জন্ম রাশিয়ায়। তিনি ইহুদি ছিলেন। পড়াশোনা ওডেসায়। তার পর গবেষণা করেছিলেন প্যারিসের লুই পাস্তুর ইনস্টিটিউটে। একে রুশ ইহুদি, তার ওপর আবার প্রাণীবিজ্ঞানী। চিকিৎসক নন। তাই ব্রিটিশরা কখনওই ভালো চোখে দেখেনি হাফকিনকে। বারবার তাঁর গবেষণার পথে বাধা হয়েছে দাঁড়িয়েছে।
১৮৯৩ সালে ৩৩ বছর বয়সে ভারতে আসেন হাফকিন। উত্তর ভারতে ২৩ হাজার জনকে নিজের তৈরি কলেরার টিকা দেন। দুর্ভাগ্যবশত, সে বছর কলেরাই হল না উত্তর ভারতে। তবে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি হাফকিনকে। পরের বছর, ১৮৯৪ সালের মার্চে কলকাতার মেডিকেল অফিসারদের থেকে ডাক পান। শহরের উপকণ্ঠে এক বস্তিতে একটি ট্যাঙ্কের জল খেয়ে কলেরায় আক্রান্ত হন বহু মানুষ।
সেই বস্তিতে পৌঁছলেন হাফকিনস। একই পরিবারের কিছু জনকে টিকা দিলেন। বাকিদের দিলেন না। ২০০ জনের মধ্যে ১১৬ জনকে দেওয়া হল টিকা। যাতে বোঝা যায় টিকার কার্যকারিতা। যাঁদের টিকা দেওয়া হল না, তাঁদের মধ্যে ১০ জন আক্রান্ত হলেন। সাত জন মারা গেলেন।
এর পরই কলকাতার স্বাস্থ্য অফিসাররা হাফকিনের ট্রায়ালে অর্থ জোগাতে রাজি হয়ে যান। শুরু হয় কলেরা টিকার ট্রায়ল। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই টিকা নিতে রাজি হননি। এজন্য প্রকাশ্যে হাফকিন নিজের ওপর টিকা প্রয়োগ করেন। যাতে লোকের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। এর পর বস্তিগুলোয় লোকজন লাইন দিয়ে টিকা নিতে শুরু করেন। আর এক্ষেত্রে হাফকিনস জানিয়ে দেন, কোনও ব্রিটিশ চিকিৎসক নন, বরং ভারতীয় চিকিৎসকরাই তাঁর পাশে থাকবেন।
১৮৯৫ সালে নিজেই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে ফিরে যান হাফকিন। ততদিনে ৪২ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৮৯৬ সালে ফের ভারতে ফিরে আসেন হাফকিন। ততদিনে তৎকালীন বম্বেতে থাবা বসিয়েছে প্লেগ। চীনের ইউনান থেকে হংকং হয়ে ব্রিটিশ জাহাজে সওয়ারিদের মাধ্যমে বম্বেতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
গভর্নর হাফকিনের দ্বারস্থ হন। বম্বে আসেন হাফকিন। শুরু করেন গবেষণা। গোটা শীতে রাতদিন খেটে তৈরি করে প্লেগের টিকা। ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে টিকার ট্রায়ালের জন্য তৈরি হন হাফকিন। বাইকুল্লা জেলের কয়েদীদের ওপর প্রয়োগ করেন। সাফল্যের পর জনগণের ওপর প্রয়োগ শুরু হয়। ১৯০২ সালের মার্চে এই টিকা দিতে গিয়েই গোল বাধে। পাঞ্জাবের মুলকোয়াল গ্রামে ১৯ জন টিটেনাসে মারা যান।
প্লেগ গবেষণাকেন্দ্রের ডিরেক্টরের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় হাফকিনকে। তদন্ত কমিটিও হাফকিনের বিরুদ্ধেই রিপোর্ট দেয়। এর পর ভারত ছেড়ে লন্ডনে ফিরে যেতে বাধ্য হন। হাফকিনের হয়ে সওয়াল করেন বহু বিজ্ঞানী। তবু ব্রিটিশ সরকার ছিল অনড়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাশিয়ার ইহুদি না হলে এতটা হেনস্থা হত না হাফকিনের। শেষ জীবন ধর্মকর্ম করেই কাটান। এই টিকা আবিষ্কারের কাজে সারা জীবন বিয়েও করেননি সুপুরুষ এই বিজ্ঞানী।
সূত্র: আজকাল