হৃদয় দিয়ে বাঁচো : শাহরুখ খান
১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লীতে পাঠান বংশদ্ভুত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতেই পিতা-মাতাকে হারান! জীবনের শুরুতেই এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে! এই ধাক্কা সামলে নিয়ে এতিম ছেলেটা জীবন শুরু করার লক্ষ্যে জন্মশহর নয়াদিল্লী ছেড়ে পাড়ি জমান মুম্বাই। ১৯৮৮ সালে ফৌজী টেলিভিশন সিরিয়ালে কমান্ডো অভিমান্যু রাই চরিত্রের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। তারপর ১৯৯২ সালে দিওয়ানা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রবেশ করেন চলচ্চিত্রের জগতে। এর পরের গল্প আমাদের সবারই জানা। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়া, সাফল্য আর সাফল্য, পৌছে যাওয়া জীবনের চুড়ান্ত প্রাপ্তির কাছে। ক্রমেক্রমে নয়াদিল্লীর এতিম ছেলেটার নাম ছড়িয়ে পড়লো পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। হয়ে উঠলেন ভারতের রত্ন! ধারণ করলেন বলিউড বাদশা, কিং খান সহ আরও অনেক বিশেষণ! আজ বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের ৫০তম জন্মদিন। বিশ্বব্যাপি অসংখ্য পুরষ্কার, সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ। পেয়েছেন ভারত সরকারের সর্বচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারও। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ডিগ্রী গ্রহণ অনুষ্ঠানে সমবেত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শাহরুখ নিজের জীবন থেকে নেওয়া চমৎকার শিক্ষাগুলোর কথা উল্লেখ করে এক অসাধারণ অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দেন। শাহরুখ খানের সেই বক্তৃতা ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম।
শাহরুখ খান: ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করা আমার জন্য সত্যিই এক সম্মানজনক ব্যাপার। আমি যে পেশায় কর্মরত সেখানে ‘একান্ত বাধ্যগত’ শব্দটা প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। আমি এ ধরনের তোয়াজকে অকপটভাবে ঘৃনা করি। কারণ আমি এতে অভ্যস্থ নই। তবে আমি জানি, এ রকম পরিস্থিতিতে নিজেকে কীভাবে নির্লিপ্ত রাখতে হয়।
আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মূলত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার জন্য, তারপর বলা হয়েছে বক্তৃতা করতে!
বেশির ভাগ মানুষের ধারনা, বলিউড তারকারা অন্যান্য গুণী মানুষের মতো অন্তর্দৃষ্টিসম্পূর্ণ হয় না। যদিও বোকা হওয়ার দিকে আমার ছিল অদ্ভূত রকমের ঝোক। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন সংস্থার কাছ থেকে আমি একটি মেইল পেয়েছি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মিস্টার খান, সংহতি নষ্ট করে এমন বিপণন ব্যবস্থা এবং বিশ্বায়নকে মোকাবেলা করতে আমাদের বিজ্ঞাপণ সংস্থা বদ্ধ পরিকর।’
এরপর আমি প্রায় চার ঘণ্টা ধরে এ বিষয়টি নিয়ে গুগলে ঘাটাঘাটি করলাম। কিন্তু কখনও কখনও এমন বিরল দিন অসে যেদিন গুগল আপনাকে মোটেও সাহায্য করে না। আমার ক্ষেত্রেও হলো তাই। আমি তখন একটি ছবি মুক্তির ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, ফলে আমি এর পেছনে সময় ক্ষেপণ করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। আমি আসলে একটি বড় আলোড়ন তুলতে চাইছিলাম এই ছবি দিয়ে। সুতরাং আমার পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবছিলাম। আমি প্রত্যেককে বলতে শুরু করলাম, আমি জানি কীভাবে আপনাদের তৃষ্ণার্ত মুখে বিনোদন আনতে ‘লুঙ্গি ডান্স’ নাচতে হয়। নত না হয়েও কীভাবে আপনাদের ভালো মুহূর্ত উপহার দেওয়া যায় সেটা আমি জানি।
কিন্তু এটা তো কোনো নাচের অনুষ্ঠান নয়। এটি একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠান। সুতরাং আমি আজকের দিনে অন্তত বুদ্ধিজীবী হতে চেষ্টা করছি। পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে আমাকে ‘জীবনের শিক্ষা’ সম্পর্কে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। অতএব চলুন, একেবারে জীবনের শুরু থেকে শুরু করা যাক।
জীবন একটা চলচ্চিত্রের মতো-আমি আমার জীবনের কাছ থেকে অন্তত এটাই শিখেছি। আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের কিছু চলচ্চিত্রের নাম দেখুন। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম দিককার একটি চলচ্চিত্রের নাম দিওয়ানা। সেখানে দেখা যায় আমি এক বিধবা মেয়ের প্রেমে পড়ি। বিধবার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে। আর সেই বিধবার শ্বাশুড়িকে আমি হত্যা করি। এরপর আমি তাকে বিয়ে করি। না, না শ্বাশুড়িকে নয়-ওই বিধবাকে বিয়ে করি। বিধবা এ বিয়েতে মোটেও রাজি ছিল না, কারণ সে তার মৃত স্বামীকে তখনও ভালোবাসত। তারপরও সে আমাকে বিয়ে করে অন্য একটা কারণে। আমার বিত্তশালী বাবা এই সম্প্রদায়কে (বিধবা) ঘৃণা করতেন এবং বিত্তশালীরা ঘৃণা করলে যা হয়, তিনি বিধবাকে খুন করার পাঁয়তারা করতে লাগলেন।
যাহোক, এরপর আরও নানা কাহিনি। কিন্তু আমি বুঝতে পারি না, এ ছবির নাম কি করে দিওয়ানা হয়? হিন্দিতে দিওয়ানা শব্দের মানে হচ্ছে কারও প্রেমে পাগলপ্রায় হয়ে যাওয়া। তবে আমার একটা উপলব্ধি জন্মে যে, এই কাহিনির মধ্যে মানুষ যখন ঢুকে পড়ে তখন তাদের মধ্যে কিছু একটা ঘটে যায়। সুতরাং আমার জীবনের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে, দিওয়ানা নাম থেকে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আর সেই অনুপ্রেরণা হচ্ছে, সুখী ও সফল জীবনের পূর্বশর্তের নাম ‘পাগলামি’। জীবনের ছোট ছোট বিচ্যুতিকে স্বীকার করুন এবং আপনার নিজস্ব জীবযাপনের পথে তাদেরকে ব্যবহার করুন। পৃথিবীর সমস্ত ভালো মানুষেরা এবং সৃজনশীল মানুষেরা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন। কারণ তারা তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারনাকে কাজে লাগান।
দিওয়ানাতে অভিনয় করার পর পরই আমি আরেকটা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাই। ছবিটার নাম চমৎকার। সেখানে আমার চরিত্রটি একটা অসহায় নায়কের। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর দ্বারা প্রতারিত হয়ে আমি আমার সমস্ত অর্থকড়ি খুইয়ে ফেলি। এই ছবিতে আমি শুধু একজন ভূতকে দেখতে পাই যাকে অন্য কেউ দেখতে পায় না। এই ভূত আমাকে একটি চাকরি পেতে সাহায্য করে। এরপর আমি আর ভূত মিলে একটা ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করি। এভাবে কাহিনি এগিয়ে যায়। এক সময় ভূত ফিরে যায় স্বর্গে। তো ‘চমৎকার’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কাকতাল (মিরাকেল)। সুতরাং আমার দ্বিতীয় শিক্ষা হচ্ছে, যদি কখনো তুমি তোমার কাছের কারও দ্বারা প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারাও এবং ঘুম থেকে উঠে দেখ তুমি একটা কবরে শুয়ে আছ-মোটেও ভীত হয়ো না। তোমার আশে পাশেই কোনো মিরাকেল অপেক্ষা করছে। নিদেনপক্ষে একটা ভূত তো আছেই! জীবনে মিরাকেল থাকবেই, তুমি তাকে খুঁজে বের করো।
তোমার ভেতরে যত শক্তি দেওয়া হয়েছে তুমি তার সবটুকু কাজে লাগাও। তোমার মনের জোর এবং হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে অনুভব করো চারপাশের মানুষকে। তোমার সুন্দর স্বাস্থ্য এবং সৌভাগ্যকে কাজে লাগাও। জীবন তোমার সামনে হাজার হাজার উপহার মেলে দিয়েছে সেসব কাজে লাগাও। জীবনকে শ্রদ্ধা করো। শ্রদ্ধা করো জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে। জন্মগত প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে জীবনে সফল হতে না পারাটাই একমাত্র দুঃখ। এ ছাড়া পৃথিবীতে সত্যিকার অর্থে আর কোনো দুঃখ নেই।
বছর কুড়ি আগে, ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে চরিত্রগুলো পরিষ্কারভাবে সজ্ঞায়িত থাকত। তুমি যদি একজন রাগী যুবকের ভূমিকায় সফলভাবে অভিনয় করতে পারো তবে তোমার ক্যারিয়ারের পরবর্তী সময়ে আরো অনেক রাগী যুবকের চরিত্র অপেক্ষা করবে। যদি তুমি গোটা তিনেক ছবিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করো, তোমাকে পরবর্তীতে কমপক্ষে ৩৩টি ছবিতে একই ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হবে। নারী তারকাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হতো এরকম: স্ত্রীরা সব সময় স্ত্রী। শ্বাশুড়িরা সব সময় শ্বাশুড়ি। কোনো কোনো অভিনেতা স্বেচ্ছায় রোমান্টিক নায়ক থেকে সহিংস নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে যেত। এরকম সময়ে আমি একটা ডিগবাজি দিলাম। তখন আমি যে খুব সাহসী ছিলাম তা নয়। আমার এক পরিচালক বন্ধু বলেছিলেন, আমি নাকি দেখতে খুব একটা সুন্দর নই। মানে আমি ঠিক রোমান্টিক হিরোদের মতো নই। আমার নাকি খল চরিত্রে অভিনয় করা উচিত। আসলে তিনি যে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন সেটি হচ্ছে, আমার চেহারায় ঠিক চকলেট ভাবটা নেই। এরপর থেকে আমি প্রচুর পরিমাণে চকলেট খেতে আরম্ভ করি। কিন্তু তাতেও লাভ হলো না। এরপর আমি একটা খল চরিত্রে অভিনয় করি।
হিন্দিতে ‘ডর’ মানে ভয়। এরপর সবাই আমাকে বলতে শুরু করল, আমি নাকি বেশ সাহস দেখিয়েছি এই ডর ছবিতে অভিনয় করে।
সুতরাং তোমার ভয়কে বাক্সবন্দি করো না যাতে তুমি নিজেই এর দ্বারা আবদ্ধ হয়ে যাও। ভয়কে বাইরে ছড়িয়ে দাও এবং ভয়কে তোমার অনুপ্রেরণাদায়ী শক্তিতে রূপান্তর করো। আমি কথা দিচ্ছি কোনো কিছুই ভুল হবে না। তবে তুমি যদি তোমার ভয়কে সাথে নিয়েই বাঁচতে চাও তবে সবকিছুই ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে।
একদা কাভি খুশি কাভি গম নামে আমি একটা ছবি করেছিলাম। সেখানে আমি ছিলাম এক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগা প্রেমিক। আমার পরবর্তী শিক্ষা হচ্ছে, পৃথিবীতে সকল স্বচ্ছতার একমাত্র পথ হচ্ছে দ্বিধা। সুতরাং মনের মধ্যে দ্বিধা বেড়ে গেলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না।
সব সময় অন্যের মাঝে সততা খোঁজার চেষ্টা করো। প্রত্যেক ছবিতে যেমন গল্প আছে তেমনি প্রত্যেক মানুষের জীবনে আছে গল্প। একটা ছবিতে আমার নাম ছিল গুড্ডু। অবশ্যই এটাও একটা ভালোবাসার ছবি। সবশেষে দেখা যায়, আমার মা আমার প্রেমিকাকে তার চোখ দান করে মৃত্যুবরণ করেছে এবং আমরা সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করছি।
জীবনের চার নম্বর শিক্ষা হচ্ছে, পরের তরে নিজেকে বিলিয়ে দাও। যখন তুমি এটা করতে পারবে তখন তুমি বুঝতে পারবে যে তুমি আসলে অন্যের জন্য করছ না, তুমি করছ মানবতার জন্য। তারমানে আমি এটা বলছি না যে তুমি লাভের জন্য ভালো কাজ করো।
মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা এমনিতেই ঘটে যায়। আমার আরেকটা ছবির নাম ছিল কুচ কুচ হোতা হ্যায়। আমার জীবনের পঞ্চম শিক্ষা হচ্ছে, জীবন কখনো কখনো সর্বশক্তি নিয়ে আঘাত করে। তখন কোনো কোনো বন্ধু অনুকম্পা দেখাবে। তুমি যদি তখন কোনো সমাধান বের করতে না পারো তবে উদ্ভান্ত্র হয়ো না।
জীবনকে নিজের মতো করে চলতে দাও। যখন তুমি হতাশ হয়ে পড়ো কিংবা আবেগীয় আঘাতে মুষড়ে পড়ো তখন শুধু মানবিকভাবে জীবনকে সামনে ঠেলে দাও। তুমি সব সময়ই জীবনের অর্থ খুঁজে পাবে না। এরকম সময়ে হিন্দিতে আমরা বলি, ‘রাম জানে’ অর্থাৎ ঈশ্বর জানে।
এবার ছয় নম্বর শিক্ষার কথা বলি। তোমাকে যত নামে ডাকা হয় সেগুলো প্রকৃতপক্ষে প্রতীক কিংবা চিহ্নমাত্র। এসব নাম দিয়ে তোমার সত্যিকারের পরিচয় প্রকাশ পায় না। তোমার পরিচয় তোমার মনে। অতএব নিজেকে পুনরায় সজ্ঞায়িত করো। আমার ছবি মাই নেম ইজ খানের চরিত্রের মতো কখনো ভুলে যেও না তুমি কোথা থেকে এসেছ। ভুলে যেও না তোমার সত্যিকারের পরিচয়।
চাক দে ইন্ডিয়া নামের একটা ছবিতে আমি একটা মহিলা হকি দলের কোচের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। নানা চরাই উৎরাই পেরিয়ে দলটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এটা ছিল এক অনু্প্রেরণাদায়ী অশ্রুমোচনের গল্প যেখানে শিখ সেনারা নদীর ওপরে সেতু বানিয়ে দেয় যেন নদীর ওপারে গিয়ে তারা প্রচারণা চালাতে পারে। এই ছবি থেকে পেয়েছি জীবনের সপ্তম শিক্ষা। ঘ্যান ঘ্যান করা বন্ধ করো এবং জীবনকে গতিশীল রাখো। নশ্বরতার দিক থেকে সুখ এবং দুঃখ প্রায় একই রকমের। একে অপরের কাছে সুখ-দুঃখ বিনিময়ের মাধ্যমে ভারসাম্য আনার নামই জীবন।
এবার আট নম্বর শিক্ষা। অন্যের সঙ্গে নিজেকে জুড়ো দিয়ো না। কেননা উভয়ের মধ্যেই এক সময় পরিবর্তন আসবে। তাই হতাশার মুহূর্তগুলো হাসি দিয়ে ভরে দাও। কাভি খুশি কাভি গাম আমাদের এই শিক্ষায় দেয় যে, কখনো কখনো সুখী হও আবার কখনো কখনো কষ্ট পাও।
তোমরা নিশ্চয় জানো, আমি অর্ধশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছি। এখন যদি প্রত্যেকটি ছবির নাম ধরে ধরে বলতে শুরু করি তাহলে আমাদের এখানে প্রায় অনন্তকাল বসে থাকতে হবে। এবং শেষকালে দেখা যাবে তোমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছ। সুতরাং আমি সর্বশেষ দুটো শিক্ষার কথা এখনই বলে দিতে চাই।
হৃদয় দিয়ে বাঁচো। ভালোবাসো মানুষকে। ভালোবাসো পৃথিবীকে। পশু-পাখি-প্রাণি, বড় বড় পাহাড় এবং শহরকে ভালোবাসো। ভালোবাসো তোমার স্বপ্নকে, ভালোবাসো জীবনকে, ভালোবাসো তোমার কাজকে, তোমার বন্ধু এবং শত্রুকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, ভালোবাসো নিজেকে। হৃদয়কে সমুদ্রের মতো গভীর হতে দাও। আর দিগন্তের মতো প্রসারিত হতে দাও। মনে রেখ, ভালোবাসা কোনো অজুহাত নয়, কোনো দখলদারিত্ব নয় কিংবা কোনো মালিকানা নয়। ভালোবাসা হতে পারে শুধু নিজেকে গড়ে তোলার একমাত্র অজুহাত।
তুমি কখনোই জানো না, ভবিষ্যৎ তোমার জন্য কি বয়ে আনবে। এমনি আগামীকাল তোমার জীবনে আছে কি নেই তাও জানো না। আমি কাল হো না হো ছবিতে খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুবক বয়সেই মারা যাই। আমি আমার দুই সন্তানকে কখনোই এ ছবির শেষ দৃশ্য দেখতে দিতাম না। কিন্তু এখন তারা তোমাদের মতো বড় হয়ে উঠছে এবং শিঘ্রই তারা নিজেদের জীবনে বিস্ময়কর যাত্রা শুরু করবে। আমি তাদেরকে বলি, প্রতিটি মুহূর্ত কঠোরভাবে বাঁচো। এখনই বাঁচো। আজ বাঁচো। কারণ আগামীতে আমরা সবাই মারা যাব। তাই আমি বলতে চাই, আজকের দিনের গুরুত্ব উপলব্ধি করো। কঠোর অধ্যয়ন করো। কঠোর পরিশ্রম করো। খেলাধুলা করো। নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ো না। কখনো কাউকে কষ্ট দিয়ো না। মনে রেখ, অনেকবারই তুমি ভুল করবে, ব্যাপার না। অনেকবারই তুমি ব্যর্থ হবে, হতাশ হবে। মনে হবে পুরো পৃথিবী তোমার বিপক্ষে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মনে রেখ বব মার্লের একটা উক্তি, ‘সবশেষে সবকিছুই সঠিক হয়।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর: মারুফ ইসলাম