সবাই নিজেদের স্বীকৃতি চায় : অপরাহ উইনফ্রে

সবাই নিজেদের স্বীকৃতি চায় : অপরাহ উইনফ্রে

অপরাহ উইনফ্রে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনাঢ্য নারী। তিনি ‘দি অপরাহ উইনফ্রে শো’র মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান। তাঁর এই অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ ২৫ বছর সম্প্রচারিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ২৫ মে অপরাহ অনুষ্ঠানটির ইতি টানেন একটি স্মরণীয় বক্তৃতার মধ্য দিয়ে। বক্তৃতাটির নির্বাচিত অংশ ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মারুফ ইসলাম


Oprah-Winfrey-psd59582আমি যে অনুষ্ঠান এতদিন করে এসেছি সেটা ছিল পুরোটাই মানুষের জন্য। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সব মানুষকে জানাতে চেয়েছি তাদের ক্ষমতার কথা, যে ক্ষমতা দিয়ে তারা নিজেদের অবস্থার বদল ঘটাতে পারে। আমরা জানাতে চেয়েছি, তারা আসলে কেউই একা নয়।

‘দি অপরাহ্ উইনফ্রে শো’ আমি যখন শুরু করি, তখন আমার বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। আমার কোনো স্বপ্ন ছিল না, কোনো প্রত্যাশা ছিল না । প্রথম দিনেই আমার মাথায় যেন বাজ পড়ল। সেদিন কোনো দর্শক ছিল না। দুই বছর পর জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারের পর রজার কিং আমাকে বলেছিলেন, এক স্টেশন ম্যানেজার নাকি তাকে বলেছে, ওই অনুষ্ঠানে হাস্যকর একজন কালো মহিলাকে বসানোর চেয়ে একটা আলু রাখাও ভালো!

১৯৫৪ সালে মিসিসিপির একটি প্রত্যন্ত এলাকায় আমার জন্ম। সেখানে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের স্বপ্ন এতটায় সীমিত ছিল যে, সে হয়তো কাজের লোক কিংবা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর একজন শিক্ষক হবে-এরকম স্বপ্ন দেখত। সেই মেয়েটিই আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

তারপরও আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ যে মেমফিস থেকে ম্যাকন; পিটস্বার্গ থেকে পেনসাকোলা; নিউইয়র্ক থেকে নিউ অরলিনস—আপনারা সবাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

আমি যখন আমার পুরোনো অনুষ্ঠানগুলোর দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমাদের পরিশ্রম চোখে পড়ে না, আমি দেখতে পাই কত বিচিত্র ও জটিল পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি এই জীবনে। আজ আমরা হয়তো ছিলাম ক্রিস রকের সঙ্গে, পরদিনই আমরা চলে গেছি সংঘর্ষে অঙ্গ হারানো সৈনিকদের কথা শুনতে। এর পরদিন হয়তো আমরা চলে গিয়েছিলাম হেরোইনে আসক্ত একটি পুরো পরিবারের গল্প শুনতে।

এসব জীবনকাহিনী আমার হৃদয়কে থমকে দিয়েছে। কারণ আমরা নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারিনি। এই শো আমাকে শিখিয়েছে, তুমি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখ, কারণ এত প্রতিবন্ধকতা নিয়েও তুমি পৃথিবীতে টিকে আছ।

এই শো’র মাধ্যমে আমি প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সাথে কথা বলেছি, যেখানে সবার মধ্যেই একটি বিষয়ে মিল রয়েছে- আর তা হলো, সবাই নিজেদের স্বীকৃতি চায়। তুমি যার সাথেই কথা বল না কেন, সবার সাধারণ একটি আকাঙ্ক্ষা যে তারা জানতে চায়, ‘তুমি কি আমাকে দেখ? কিংবা শুনতে চায়, আমি যা বলি তা কি তোমার কাছে মূল্যবান?’ এই মূল ব্যাপারটিই আপনাদের সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয় মাইক্রোফোন হাতে।

201405-omag-wikfs-949x534অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমার এই অনুষ্ঠানের সফলতার গোপন রহস্য কী? কীভাবে আমরা ২৫ বছর ধরে অনুষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমি উত্তরে বলি, ‘সফলতার গোপন কথাটি হলো, আমার এই টিম এবং যিশু।’ আমি কখনোই একা ছিলাম না এবং তোমরাও কখনো একা নও।’

শেষ বেলায় অপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই শো আপনাদের জন্য যা করেছে বলে আপনারা আমাকে বলেন, সেগুলো অন্যদের জন্য বাস্তবায়ন করুন। তাদের পাশে একাত্ম হয়ে দাঁড়ান, তাদের গ্রহণ করুন। কাউকে ভালোবাসুন। অন্তত একজনকে। এবং তা ছড়িয়ে দিন আরেকজনের মাঝে, এবং এভাবে যত বেশি পারা যায়। আপনি নিজেই দেখবেন এটি কী পরিবর্তন এনে দেয় সমাজে এবং রাষ্ট্রে।

আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, ১৯৫৪ সালে মিসিসিপির একটি প্রত্যন্ত এলাকায় আমার জন্ম। সেখানে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের স্বপ্ন এতটায় সীমিত ছিল যে, সে হয়তো কাজের লোক কিংবা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর একজন শিক্ষক হবে-এরকম স্বপ্ন দেখত। সেই মেয়েটিই আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এটি কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটি কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয় যে সেই ছোট্ট মেয়েটাই বড় হয়ে পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের সহানুভূতি, স্নেহ, বিশ্বাস ও স্বীকৃতিকে অনুভব করতে পারছি। মানুষের এই ক্ষমতার কথাই শুরুতে বলছিলাম।

আপনাদের অনেকের নামও আমি জানি না, কিন্তু আপনাদের কাছে আমি শিখেছি ভালোবাসা কী। আপনারা এবং এই অনুষ্ঠান আমার জীবনের অসাধারণ ভালোবাসার উৎস। আমি কখনোই ‘বিদায়’ বলব না। আমি শুধু বলব, আমাদের আবার দেখা হয়।

অপরা উইনফ্রের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্তfavicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment