মৃত্যুর কাছ থেকে যে শিক্ষাটা নিয়েছেন শেরিল
- মো. সাইফুল্লাহ
ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। ২০১২ সালে টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় ছিল তাঁর নাম। ২০১৬ সালের ১৪ মে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের সমাবর্তনে বক্তব্য দেন শেরিল। সেখানে তিনি নিজের দুঃসময়, স্বামীকে হারানোর পর গভীর বিষাদ ও সেই দুঃখকষ্ট জয় করার গল্প বলেন। শেরিলের কথাগুলো আপনাকে শক্তি জোগাবে…
ঠিক ১ বছর ১৩ দিন আগে আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। ডেভ। ওর মৃত্যুটা ছিল আচমকা, অপ্রত্যাশিত। আমরা মেক্সিকোতে এক বন্ধুর ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপন করতে গিয়েছিলাম। ডেভ যখন জিমে ব্যায়াম করতে গেল, আমি তখন একটু চোখ বুজে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে ডেভের নিথর দেহটা জিমের মেঝেতে আবিষ্কার করতে হলো। বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের বলতে হলো, তোমাদের বাবা আর নেই।
এরপর কয়েক মাস আমি গভীর বিষাদে ডুবে ছিলাম। আরও স্পষ্ট করে বললে, একটা শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। সে শূন্যতা এতই প্রকট যে আমার কোনো কিছু ভাবতে, এমনকি নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হতো। ডেভের মৃত্যু খুব স্পষ্টভাবেই আমাকে বদলে দিল। আমি দুঃখের গভীরতা আর হারানোর ব্যথা বুঝলাম। একই সঙ্গে আমি এ-ও বুঝলাম, জীবন যখন তোমাকে নিচের দিকে টানতে থাকে, সে অবস্থায়ও সব ভেঙেচুরে উঠে আসা যায়, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া যায়। আমি শিখলাম, শূন্যতাকেও আনন্দময় আর অর্থবহ করে তোলা যায়।
এই আশায় তোমাদের এসব কথা বলছি, যেন এই শিক্ষাটা তোমরা আজই পাও। যেটা আমি মৃত্যু থেকে পেয়েছিলাম। আমাদের ভেতর স্বপ্ন, শক্তি আর আলো—নিবু নিবু করেও কখনো নিভে যায় না।
ছোট ছোট না পাওয়া তোমাদের কাতর করে। তুমি হয়তো ‘এ’ আশা করেছিলে, কিন্তু ‘এ মাইনাস’ পেয়েছ। তুমি ফেসবুকে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করেছ, কিন্তু পেয়েছ গুগলে। তুমি কারও প্রেমে পড়েছ, কিন্তু সে তোমাকে ছেড়ে গেছে। নিশ্চিত থাকো, এর চেয়েও দুঃখের মুহূর্ত তোমার সামনে আসবে। পছন্দসই একটা চাকরি হয়তো তুমি পাবে না। একটা দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতা হয়তো মুহূর্তে তোমার জীবন বদলে দেবে। একটা ভাঙা সম্পর্ক, হয়তো আর কখনো জোড়া লাগবে না।
সহজ দিনগুলো সহজেই পেরিয়ে যাবে। আমি বলছি কঠিন সময়গুলোর কথা। যে সময় তোমার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। কঠিন সময়ই নির্ধারণ করবে, তুমি কে। শুধু তোমার অর্জনই তোমার পরিচয় নয়। বরং তুমি কীভাবে টিকে আছ, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনোবিদ বন্ধু অ্যাডাম গ্র্যান্ট একবার বলছিল, এর চেয়েও খারাপ কী হতে পারত, সেটা ভেবে আমার সান্ত্বনা পাওয়া উচিত।
আমি বলেছিলাম, ‘কী বলছ! আমার স্বামী হঠাৎ “কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া”য় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে?’ সে বলল, ‘ধরো এমনও তো হতে পারত, তোমার স্বামীর যখন কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া হলো, তখন সে গাড়ি চালাচ্ছিল। আর পেছনের সিটে বসে ছিল তোমার ছেলেমেয়েরা!’ ওর কথা শোনামাত্র আমার ভেতরটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। তাই তো, জীবন অন্তত আমার কাছ থেকে আমার ছেলেমেয়েদের কেড়ে নেয়নি!
কৃতজ্ঞতাবোধ হলো স্থিরতার চাবি। জীবনের আশীর্বাদগুলোর মূল্যায়ন করলেই এমন আশীর্বাদ তুমি আরও পাবে। এ বছরের শুরুতে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দিনের সেরা তিনটা মুহূর্ত লিখে রাখব। এই ছোট্ট একটা অভ্যাস আমার জীবন বদলে দিয়েছে। কারণ প্রতিদিন যা-ই ঘটুক না কেন, আমি আনন্দময় কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে যাই। অন্তত চেষ্টা করি। আজ থেকেই তুমিও শুরু করতে পারো।
সূত্র: প্রথম আলো
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ