জেমি লুইসের প্রাকৃতিক খাবার

জেমি লুইসের প্রাকৃতিক খাবার

প্রাকৃতিক খাদ্যের পাচক (শেফ) হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন জেমি লুইস। তিনি একাধারে একজন ইয়োগা শিক্ষক, লেখক এবং উদ্যেক্তা। স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য ২০০৮ সাল থেকে তিনি প্রাকৃতিক খাদ্য ছাড়া অন্য কিছু খান না। এখন তাঁর লক্ষ্য একটাই-নিজের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেওয়া সবার মাঝে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তিনি প্রাকৃতিক খাদ্যের একটি দোকান খুলে বসেছেন যার নাম ওরাওগি। এছাড়া প্রচারণার জন্য ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম তো আছেই! জেমি লুইসের প্রমিনেন্ট নারী হয়ে ওঠার গল্প শুনুন মারুফ ইসলামের মুখে।


jamie-3bঅস্ট্রেলিয়ার মেলবর্ন শহরে থাকতেন জেমি লুইস। সেখান থেকে ২০১১ সালে চলে আসেন ব্রিসবন শহরে। কেন শহর বদল? জেমি বলেন, ‘সেটা আপনার কাছে হাস্যকর শোনাতে পারে, তবু বলি: মেলবর্ন শহরে প্রাকৃতিক খাবারের বড় অভাব। সেই তুলনায় ব্রিসবনে কিছুটা প্রাকৃতিক খাবার পাওয়া যায়। আমি মূলত প্রাকৃতিক খাবারের সন্ধানেই এ শহরে বসত গেড়েছি।’ বটে! মানুষ কত কিছুর জন্য স্থান বদল করে, আর এই নারী কিনা খাবারের জন্য শহর বদল করেছেন! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি এবং জেমি এখন ব্রিসবন শহরে একটি প্রাকৃতিক খাবারের দোকান দিয়েছেন যার নাম ওরাওগি। জেমি বলেন, আমি বাসায় যে খাবার খাই সেই খাবারই খাওয়াতে চাই অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে। সেজন্যই প্রতিষ্ঠা করেছি ওরাওগি। এখানকার কোনো খাবারে কোনো ধরনের কেমিকেল মেশানো হয় না।’

এই ক্যাফে বা খাবারের ব্যবসাটা তিনি শুরু করেছিলেন শখের বসেই। ব্রিসবন শহরের যেখানটায় তিনি থাকতেন, সেই উলনগাবা এলাকার পাশে ছিল একটি সৌরবিদ্যুৎ কোম্পানি। এর উত্তর পাশেই ওরাওগি প্রতিষ্ঠা করেন জেমি। কারণ আর কিছুই নয়, প্রাকৃতিক শক্তি দিয়ে রান্না হবে ওরাওগির খাবার। শুরুটা ছোট্ট এক এলাকা থেকে হলেও এখন ওরাওগির খাবার পাওয়া যায় সমগ্র অস্ট্রেলিয়াতেই! এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জেমি লুইসের প্রাকৃতিক খাবার।

জেমির এমন সাফল্য দেখে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ব্যবসার শুরুতে কি এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি? জেমি বলেন, ‘আহামরি কিছু নয়। আমার কাছে কোনো জাদুর প্রদীপ ছিল না, ছিল না কোনো দৈত্য যাকে হুকুম করলেই মজার খাবার রান্না করে দিত। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছি। কীসের অভিজ্ঞতা? ওই যে প্রাকৃতিক খাবার ছাড়া অন্য কোনো খাবার না খাওয়া এবং রান্না না করা। ২০০৮ সাল থেকে আমি এই কাজ করে আসছি। বলতে পারেন এটাই আমার সফল হওয়ার প্রথম ধাপ।’
এরপর আরও কিছু কাজ অবশ্য করতে হয়েছে জেমি লুইসকে। কে না জানে, সাফল্যের শর্টকার্ট কোনো পথ নেই। জেমিকেও একটা লম্বা ও দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সাফল্যের নাগাল পেতে। সব সময় প্রাকৃতিক খাবার ব্রিসবনে মিলত না। তখন অন্য শহরে সেই খবারের সন্ধানে যেতেন তিনি। কখনো কখনো তাঁকে যেতে হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে আবার কখনো যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়! ভাবা যায়!! ‘এভাবে আমি বিশ্বের অনেকগুলো দেশ ঘুরেছি। ঘুরে ঘুরে শুধু খুঁজে বেড়িয়েছি, কোথায় প্রাকৃতিক খাবারের দোকান রয়েছে, তারা কীভাবে ব্যাবসাটা পরিচালনা করে এসব জেনেছি।’ বলেছেন জেমি। তিনি আরও বলেন, ‘এটা এমন এক ব্যবসায়িক ধারনা যা প্রতিদিন আপডেট করতে হয়। প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখতে হয়। আমি এখনো শিখে চলেছি।’

jamie-6সে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু এই নতুন ব্যবসায়িক ধারণার প্রচারণা কীভাবে করলেন জেমি? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি হেসে বলেন, ‘এখন সময়টাই তথ্য-প্রযুক্তি আর সোস্যাল মিডিয়ার। আমি এ দুটি বিষয়কেই কাজে লাগিয়েছি। সামাজিক গণমাধ্যমে দিনের পর দিন আমাদের খাবার নিয়ে ব্লগ লিখেছি, ছবি পোস্ট করেছি আর বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক বাড়িয়েছি।’

জেমি আরও বলেন, এটা মোটেও সহজ কোনো কাজ ছিল না। আমরা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্লগ লিখলাম আর মানুষজন হুড়মুড় করে চলে এলো ওরাওগি ক্যাফেতে-ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। গ্রাহক টেনে আনা এবং ধরে রাখা দুটোই খুব চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ আমাকে সব সময় মোকাবেলা করতে হয়। এজন্য প্রথমত গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়। বিশ্বাস মানে, আপনি যে তাকে বাকওয়াজ বলে ঠকাচ্ছেন না এই বিশ্বাস। বিশ্বাস মানে, আপনি প্রাকৃতিক খাবারের কথা বলে তাকে ভেজাল খাবার খাওয়াচ্ছেন না এই বিশ্বাস।’
এ বিশ্বাস অর্জন করতে জেমি রান্নার সময় রোগপ্রতিরোধক টুপি, হাতমোজা, গাউন ইত্যাদি ব্যবহার করেন এবং গ্রাহকের সামনেই রান্না করে দেন। এখন অবশ্য জেমির ক্যাফেতে অনেক কাজের লোক। তারাই রান্না করে দেন, জেমিকে করতে হয় না। তিনি সবকিছু তদারক করেন মাত্র। তিনি দেখেন, তাঁর কর্মীরা সব ধরনের জীবানুনাশক পরিধেয় পরিধান করে রান্না করছে কি না।

‘আমাদের এই সততার কারণেই যে গ্রাহক একবার এসেছে ওরাওগিতে সে আর কখনো ফিরে যায়নি। বার বার ফিরে এসেছে।’ সলজ্জ উত্তর জেমির।

তথ্যঋণ : ফিমেল এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন

Sharing is caring!

Leave a Comment