ছাত্রজীবনেই সফল উদ্যোক্তা আট নারী
- সজীব হোসাইন, রংপুর
‘ছোটবেলা থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় আমাদের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করার। কিন্তু প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। মেয়ে হয়ে কী করব আমরা? প্রশ্ন এসে যায় পুঁজি ও প্রশিক্ষণেরও। অবশেষে বন্ধুদের মধ্যে আড্ডা থেকেই ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম রংপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার।’ কথাগুলো রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আট সফল উদ্যোক্তা নাজমুন আক্তার, নূর জাহান সেতু, রোকসানা বহ্নি, মাসুমা হেলেন, স্নিগ্ধা আক্তার, আইরিন জাহান, ইসরাত জাহান ও আয়েশা সিদ্দীকের।
এই আট নারী উদ্যোক্তা জানান, প্রশিক্ষণ শেষে নিজেদের ক্ষুদ্র অর্থায়নেই পুকুরে মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিছুট কষ্টসাধ্য হলেও কাঙ্ক্ষিত পুকুর পেয়ে যান রংপুর সদরের সাথমাথার নাচনিয়ার বিল সংলগ্ন আমবাড়ি এলাকায়। কাঙ্ক্ষিত দিন আসে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ছোট একটা পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন আর পুকুর দেখাশোনার জন্য দুইজন কর্মচারী নিয়োগ দেন।
কিছুদিন পরেই পাশেই ৫০ শতকের আরও একটা পুকুর ইজারা নেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পুকুরকে ঘিরে জমতে থাকে হাজারো স্বপ্ন। জুন মাসে পুকুরের মাছগুলো বাজারজাত করি। সেখান থেকে মুনাফা হিসেবে মেলে নগদ ৮০ হাজার টাকা। জুলাই মাসে আবার পূর্ণ অর্থায়ন করেন পুকুরে যা আগস্টের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতে অবশ্য দমে যান না তারা। পুকুর সংস্কার করে নতুনভাবে শুরু করেন পথ চলা।
মাছ চাষই কেন আপনারা পছন্দ হিসেবে বেছে নিলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ মাছ চাষের চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও অনান্য বিভাগের তুলনায় রংপুর বিভাগ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ধান ও আলু চাষের পাশাপাশি মাছ চাষ উপযোগী হলেও দেশের শতকরা ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ মাছ চাষ হয় রংপুরে। তাই আমরা রংপুরের ব্যাপক সম্ভবনাময় মাছ চাষকেই প্রাধান্য দিয়েছি।’
শুধু মাছ চাষের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখেননি এই আট সফল নারী উদ্যোক্তা। মাছ চাষে অর্জিত মুনাফা থেকে তারা ক্ষুদ্র পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে চাষ করছেন পুদিনার। সেই সাথে পুকুর সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু দরিদ্র পরিবারকে হাঁস-মুরগী কিনে দিয়েছেন আর্থিক সচ্ছলতার জন্য। পাশাপাশি তাদের কাজের সাথে যুক্ত করেছেন বেশকিছু কর্মজীবী মহিলাকে।
এখানেই শেষ নয়। মেধাবী এই শিক্ষার্থীরা যুক্ত আছেন বাড়ির আশেপাশে স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় পরীক্ষামূলক শামুক চাষের সাথে। বর্তমান সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ জার্মান ও ইতালির মানুষদের পছন্দের তালিকায় শামুক অন্যতম খাদ্য। এছাড়া পোল্ট্রি ফিডেও শামুক ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রকৃতি থেকে শামুক আহরণে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিচ্ছে। তাই প্রকৃতিকে এই হুমকি থেকে রক্ষা করে খুব সহজেই ফাঁকা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় শামুক চাষাবাদের করে এবং বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব বলেও জানান তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে উত্তর জনপদকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে এবং বিশ্ব দরবারে নিজেদেরকে মেলে ধরতে চান উদ্যমী এই নারীরা। তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে স্থায়ীরূপ দিতে গঠন করেছেন সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক আইবিস সমবায় সমিতি। যার মাধ্যমে চলবে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা।