সাক্ষাৎকার : আইটি দিয়েই এগিয়ে যাবে দেশ

সাক্ষাৎকার : আইটি দিয়েই এগিয়ে যাবে দেশ

  • লিডারশিপ ডেস্ক

সোনিয়া বশির কবির বর্তমানে তিনি সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর আগে ডেলের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ডেলে দায়িত্ব নেওয়ার আগে অবশ্য মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ফর সাউথইস্ট এশিয়া পদে কাজ করেছিলেন সোনিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ওরাকল এবং সান মাইক্রোসিস্টেমসেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার সম্প্রতি তিনি জাতিসংঘের টেকনোলজি ব্যাংকের গভর্নিং কাউন্সিলে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসর (বেসিস) ২০১৬২০১৯ সেশনের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আইটি সেক্টরের এই আইকন

বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের কার্যক্রম, এদেশে আইটি খাতের সম্ভাবনা চ্যালেঞ্জসহ এই খাতের নানা দিক নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সোনিয়া বশির কবির।


: বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন

সোনিয়া বশির কবির: মাইক্রোসফটকে আগে মানুষ মনে করতো শুধু অপারেটিং সিস্টেম আর অফিস। কিন্তু মাইক্রোসফট নিজেকে রিইনভেন্ট করে অনেক কিছু করেছে। আমাদের ক্লাউড কম্পিউটিং একটি ফোকাস। আরেকটি দিকে আমরা ফোকাস দিচ্ছি। তা হলোপ্রযুক্তিকে প্রত্যেকটা মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের দেশের মানুষ প্রযুক্তিকে খুব আপন করে  নেয়। সেলফোন তার বড় উদাহরণ। এখন আমাদের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি মানুষের হাতে ফোন আছে। আমরা তাদেরকে আর কী দিয়েছি? মাইক্রোসফটের মাধ্যমে যদি মানুষকে প্রযুক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারি। ইট ইজ নট নেসেসারি সফটওয়্যার, হার্ডওয়ার দিয়েও হতে পারে। তাই আমরা মানুষকে কম্পিউটার ট্রেনিংও দিচ্ছি। মাইক্রোসফট এখন বলেছে, তুমি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে যাও। আর এটা হওয়ার জন্য আমাদের বিক্রি করার প্রয়োজন নেই। আমরা ফ্রি ট্রেনিং দিচ্ছি। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানাচ্ছি। ইন্টার্ন বানাচ্ছি। একটা ব্র্যান্ডকে যদি মানুষের মনের মতো করা যায় তবে সেটার ব্র্যান্ডিং আর লাগে না

2793d25e77b4bd935ff15094c3f16632-: আপনি তো দেশে মাইক্রোসফটের অরিজিনাল সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়াতে কাজ করছেন। কিন্তু অনেকের অভিযোগ, এই সফটওয়্যারের দাম অনেক বেশি। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে সফটওয়্যারের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

সোনিয়া বশির কবির: দেখুন, আপনি দাম কমানোর কথা বলছেন। কিন্তু আমরা তো এখন ফ্রি দিচ্ছি। ক্লাউড কম্পিউটিং এখন এসে গেছে। আমাদের দুটো সফটওয়্যার মার্কেটে বিক্রি হতো। একটা ছিলো উইন্ডোজ এবং আরেকটা মাইক্রোসফট অফিস। উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম এখন ফ্রি। উইন্ডোজ সেভেন বা এইট যারা পাইরেটেড বা জেনুইন ব্যবহার করতো তারা এখন উইন্ডোজ ১০ ফ্রি ব্যবহার করতে পারে। অফিস থ্রি সিক্সটি ফাইভ ৩০ হাজার টাকা ছিলো। সেটা এখন হাজার টাকা ক্লাউডে। আমরা দাম তো কমাচ্ছি

: বর্তমানে দেশে কতভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারী মাইক্রোসফটের অরিজিনাল সফটওয়্যার ব্যবহার করেন তার কোনো পরিসংখ্যান কি আছে আপনাদের?

সোনিয়া বশির কবির:  আগে ১০ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারী মাইক্রোসফটের অরিজিনাল সফটওয়্যার ব্যবহার করতো। তবে ফ্রি হয়ে যাওয়ার পরে ব্যবহারকারীর দিক থেকে এখন বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে টপ কান্ট্রি। আমরা মাইক্রোসফটের ইউজার বাড়িয়েছি। এজন্য আমি গর্বিত। আমরা সব ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছি। সেখানকার স্টুডেন্টদের বলছিফ্রি ডাউনলোড কর। আমরা বাংলাদেশে খুব ভালো করছি

: মাইক্রোসফটে দায়িত্ব নেওয়ার আগে আপনি ডেল বাংলাদেশের প্রধান ছিলেন। অর্থাৎ হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার দুটোরই অভিজ্ঞতা আছে আপনার। এর আলোকে আইটি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে কীভাবে দেখছেন?

সোনিয়া বশির কবির: আমি যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে ২০ বছর ছিলাম। সেখানে পড়াশুনা করেছি। চাকরি করেছি। আমি দেখেছিটেকনোলজি মানুষকে কতদূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। আমি এখন বাংলাদেশে এসে দেখছি, এই পথটা আমার কাছে পুরো পরিস্কার। আমি জানিআমি এখন কোথায় আছি এবং আমি কোথায় যেতে পারি। তাই আমার কাজ হবেযেভাবেই আমি টেকনোলজির সঙ্গে জড়িত থাকি, পথে মানুষকে হাঁটানো। আমাদের দেশে অনেক সুযোগসুবিধা আছে। কিন্তু আমরা তার কিছুই গ্রহন করিনি। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশেই যদি আমরা থাকি, তাহলেই ২০২১ সালের মধ্যে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাবো। আইটি খাত দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সদ্য প্রস্তাবিত বাজেটেও আইটি খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। সবাই এই সেক্টরের দিকে ফোকাস দিচ্ছে। তবে এখন আমাদের কাজ হবে এটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা।

daaa304eb00d5791a3ef8ae3590cf517-: দেশের অন্যান্য খাতের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও কিন্তু নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। এখানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্যে কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?

সোনিয়া বশির কবির: আসলে উদ্যোগটা নারীকে নিজেকেই নিতে হবে। আমি অনেক দেশে থেকেছি। তাই আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাইবাংলাদেশের ছেলেরা মেয়েদের অনেক সম্মান করে। আমি নিজেই কাজ করে দেখেছি। এদিক দিয়ে কোনো বাঁধা নেই। বাংলাদেশ সরকারও নারীদের উৎসাহিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন মহিলাদের সব সুযোগসুবিধা দিতে। নারীর এগিয়ে যেতে হবে নিজেকেই। বাঁধা আসবেই। তারপরও সেগুলোকে নিজের মনের শক্তি দিয়ে জয় করতে হবে।  আমাদের কাজ হচ্ছে নারীদের উৎসাহিত করা। প্রত্যেকটি স্কুলকলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে আমি বলি, আমি যদি পারি তাহলে আপনিও পারবেন

: দেশে প্রতিবছরই বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। অনেকে মনে করেন, আউটসোর্সিংএর মাধ্যমে এদের কর্মসংস্থান স্বাবলম্বী করা যায়। এর সঙ্গে আপনি কতটুকু একমত?

সোনিয়া বশির কবির: আমি ২০ বছর বিদেশে ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। বেকারত্বের হার কখনো বাড়বে আবার কখনও কমবে এটা পৃথিবীর সবদেশেই আছে। এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। তবে এটা ভাবতে হবে যেএই সমস্যার সমাধান কি? আমরা কীভাবে আরও ইনকাম জেনারেটিং কাজকর্ম করতে পারি।  তবে এক্ষেত্রে প্রযুক্তি অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করতে পারে।  সবাই যে শুধু চাকরি করবে তা নয়। উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এসব কাজকর্ম যে হচ্ছে না তা নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অল্প অল্প করে এগিয়ে যাচ্ছি বলে চোখে পড়ছে না।

: এবার একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে আসি। তথ্যপ্রযুক্তি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন কবে, কীভাবে?

সোনিয়া বশির কবির: আমি সিলিকন ভ্যালিতে পড়াশুনা করেছি। আমার বর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সেখানকার হাইটেক কোম্পানিতেই চাকরি করতো। আমার পড়াশুনা এবং চাকরি আমেরিকার এই হাইটেকেই। সিলিকন ভ্যালি পৃথিবীর বিখ্যাত জায়গা। যেখানে প্রযুক্তির জন্ম। আমি সেখানে স্নাতক এবং মার্স্টাস শেষ করে ১৫ বছর চাকরিও করেছি। সেটাই আমি ঢাকায় নিয়ে এসেছি। আমার এনভারনমেন্ট এবং এক্সপোজার সবই টেকনোলজি ছিল

: আপনি তো সম্প্রতি জাতিসংঘের টেকনোলজি ব্যাংকের গভর্নিং কাউন্সিলে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। পদে আপনার দায়িত্বগুলো কী কী?

সোনিয়া বশির কবির: পৃথিবীর ১২ টি দেশ থেকে জাতিসংঘ ১২ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশকে যে পেতেই হবে এমন কোনো কথা ছিলো না। আমাকে তারা যোগ্য মনে করেছে বলেই নিয়োগ দিয়েছে। এটি আমার জন্য বড় একটি সম্মানের বিষয়। এখানে আমাদের কাজ হচ্ছে স্বল্পন্নোত (এলডিসিভুক্ত) দেশগুলোকে প্রযুক্তি দিয়ে কীভাবে মধ্যম আয়ের দেশে আনা যায় সেই চেষ্টা করা

: শুনেছি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন  অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ২০১৬১৭ সেশনের নির্বাচনে আপনি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। আপনার নির্বাচনী অঙ্গিকারগুলো কী কী?

সোনিয়া বশির কবির: আমরা সদস্যদের জন্য কাজ করতে চাই। প্রথমত, আমরা নিজেরা কেউ কোনো ব্যবসার অংশ নেবো না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবসা বা কনসাল্টিং আমাদের বোর্ডের কেউ নেবে না। দ্বিতীয়ত, সফটওয়্যার খাতের হাজার সদস্য থাকলেও মাত্র ৩৬৮ সদস্য ভোটার হয়েছে। আমি জানতে চাইবাকীরা কারা? তারা কি করে? ওদের কি লাগবে? ওদের ভালো থাকার জন্য আমি কি করতে পারি?  আমি বেসিস সদস্যদের জন্য কাজ করতে চাই, নিজের জন্য নয়। এখান থেকে আমার কিছু নেওয়ার নেই। আমি অনেক ভালো আছি। সারাজীবন আমি এই ইন্ডাষ্ট্রিতে কাজ করেছি। সদস্যরা ভালো থাকলেই বেসিস ভালো থাকবে। এই খাতে একটা ফান্ডিং দরকার। এটা যে বাইরে থেকে আসতে হবে তা নয়। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে এখনো কিছুই হয়নি, এখানে প্রযুক্তি ঢুকতে পারেনি। বেসিসের সদস্যদের আমি যোগ্য করে তৈরি করতে চাই

: নির্বাচন নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

সোনিয়া বশির কবির: আমি দেখেছিমানুষ আমাকে পছন্দ করে। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে। মানুষ জানে যে, কোনো এজেন্ডা নিয়ে আমি বেসিসে যাচ্ছি না। আমার কোনো ব্যবসা লাগবে না। আমি যাচ্ছি দিতে, নিতে নয়

: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

সূত্র : অর্থসূচক ডটকম। মেহেদী হাসানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment