গুগলের শীর্ষ বক্তা রাখশান্দা রুখাম
- লিডারশিপ ডেস্ক
গত ১৮ মে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্টেন ভিউয়ের শেরলাইন অ্যাস্কি থিয়েটারে ছিলেন হাজার হাজার অংশগ্রহণকারী। তারা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি সম্মেলন জায়েন্ট গুগলের ‘গুগল আইও’তে। সেখানে (সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত গুগল আইও-এর ডেভেলপার সামিটে) উড়ল বাংলাদেশের পতাকাও। তিন দিনব্যাপী এ প্রোগ্রাম বা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের নামকরা প্রতিনিধিরা। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী প্রতিনিধিও ছিলেন। তাদেরই একজন গুগল ডেভেলপার গ্রুপ বা জিডিজি ঢাকার ম্যানেজার এবং বাংলাদেশের উইমেন টেকমেকারস লিড রাখশান্দা রুখাম। অন্য প্রতিনিধিদের মতো মঞ্চে প্রযুক্তি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন রুখামও। তার দেয়া বক্তব্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন প্রতিনিধিরা। এতে সবাই অবাকও হন। তাতে প্রশংসা করেন গুগল প্ল্যাটফর্মে যুক্ত পৃথিবীর নামকরা বা শীর্ষ ডেভেলপার, ডিজিটাল এক্সপার্টস এবং প্রযুক্তি পেশাজীবীরা। তারা আরো অবাক হন যখন শোনেন, বাংলাদেশের রাখশান্দা রুখাম গুগলের ওই শীর্ষ সম্মেলনে শ্রেষ্ঠ বা শীর্ষ বক্তা বা স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। আর এ বিশেষ কৃতিত্ব বা সফলতার খবর প্রকাশ পায় প্রেস রিলিজের মাধ্যমে। এ খবর ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন প্রোগাম ম্যানেজার অব উইমেন টেকমেকার্স প্রোগ্রাম মেলিস্যা পাওয়েল। তাদেরই একটি সূত্রে বলা হয়েছে, উইমেন টেকমেকার্স প্রোগ্রাম বাংলাদেশের জিডিজির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে কাজ করছে কয়েক বছর ধরে এবং এবারই প্রথমবারের মতো লিড নির্বাচিত হয়েছেন রাখশান্দাসহ বাংলাদেশের অন্য প্রতিনিধিরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নতির সম্ভাবনা আরো বেড়ে গেল। তবে এর মূলে রয়েছে রাখশান্দার শীর্ষ বক্তা নির্বাচিত হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। তাকেও নিয়ে গেছে সফলতার এক অনন্য উচ্চতায়।
একপর্যায়ে বাংলাদেশ টিমের ছবি ভেসে ওঠে বড় পর্দায়। বাংলাদেশের নাম উঠে আসে ডেভেলপার সাকসেস স্টোরিতে। এ সম্মেলনে অন্যতম ম্যানেজার রাখশান্দা শীর্ষ বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হন ১০০টি দেশের ভোটে। তিনি উইমেন টেকমেকার্স নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে। আর গুগল ডেভেলপার গ্রুপের ম্যানেজার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ২০১৬ সালে।
এর আগেও পরপর দুই বছর জিডিজি সামিটে বাংলাদেশী বক্তা হিসেবে অংশ নেন সম্মেলনে। কিন্তু এবারই বাংলাদেশ অর্জন করে শীর্ষ বক্তার স্থান। রাখশান্দা দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিকমিউনিকেশনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। অতঃপর ইনোভেটিভ ডিজিটাল প্রোডাক্ট ডিজাইনে এবং আইসিটি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করেন।
রাখশান্দার চমৎকার বক্তৃতার কারণে সামিটে বেশ গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির ক্ষেত্রে একটি প্লাস পয়েন্ট বলা যায়। বাংলাদেশের ডেভেলপার ইকোসিস্টেম নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয় বিভিন্ন দেশের মধ্যে। ডেভেলপার রিলেশন টিমের সদস্যরা বাংলাদেশের উইমেন্স টেকমেকার্স প্রোগ্রাম, এন্ড্রয়েড স্টাডিজম, মবিকন এবং ডেভফেস্ট নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
২০১৪ সালে উইমেন টেকমেকার্স বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ আরো অনেক স্থানে নারীদেরকে এ প্রযুক্তিতে আরো দক্ষ করে তুলতে বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করে। ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ নানা কার্যক্রম এসবের যোগসূত্রতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়।
অনেকে বলেছেন, রাখশান্দার মনোমুগ্ধকর বক্তব্যের কারণে চমক বেড়েছে গুগল ডেভেলপারদের বার্ষিক সম্মেলন আইওতে। তবে গুগলের শীর্ষ বক্তাকে হবেন তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ছিল প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে। অনেকে বুঝে উঠতে পারেননি, এতে শীর্ষ বক্তা হবেন কোনো বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এবারের সম্মেলনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেবল গুগল নয়, এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে সারা দুনিয়ার প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। সম্মেলনের বক্তব্য সরাসরি শুনেছেন পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তাদের বেশির ভাগের দৃষ্টি ছিল রাখশান্দা রুখামের প্রতি। এতে করে বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তিও অনেকাংশে বেড়েছে বলা যায়।
জিডিজি ঢাকা গুগল ডেভেলপার টিমের বিশেষ নজরে রয়েছে জিডিজির এন্ড্রয়েড স্টাডিজ্যামে প্রায় সাড়ে ৭০০ অ্যাপ তৈরি, উইমেন টেকমেকার্স সিরিজ, ডেভফেস্ট, হ্যাকাথনসহ নানা কাজে। এসবেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন রাখশান্দা রুখাম। তথ্যপ্রযুক্তিতে আরো সফলতার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।