সফল নারী উদ্যোক্তা মিনার গল্প
- লিডারশিপ ডেস্ক
গ্রামীণ কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মাহফুজা মিনা। কেবল সফল স্ত্রী বা মা নন, তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্র নিষ্ঠায় নিজ পরিচয়ে মিনা এখন উত্তরবঙ্গের অন্যতম সফল ডেইরি ব্যবসায়ী।
পাবনার বেড়া উপজেলার বনগ্রামের মৃত আবদুল মজিদ মাস্টারের একমাত্র মেয়ে মাহফুজা মিনা। ২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি যোগ দেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায়। প্রকৌশলী স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার হলেও মিনা ভুগছিলেন আত্মপরিচয় সংকটে। নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদ থেকে ২০১০ সালে মাত্র দুটি গরু নিয়ে মিনা শুরু করেন তাঁর ডেইরি ফার্ম। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি এখন প্রায় ৫০টি গরু, ভেড়া, হাঁস-মুরগি নিয়ে জেলার অন্যতম বৃহৎ ডেইরি ফার্মের মালিক। পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সফল উদ্যোক্তা স্বীকৃতিও।
বর্তমানে এই খামার থেকে বিভিন্ন মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত গরু ও ভেড়া সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন উৎপাদন হয় প্রায় ৪০০ লিটার দুধ। আর এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে মিনার অধীনে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৫ জনের।
পাবনার একদল সাংবাদিক সরেজমিনে মিনার সফলতার কথা জানতে চান। সফলতার পেছনের গল্প বর্ণনা করে মাহফুজা মিনা বলেন, ‘আমি মেয়ে, স্ত্রী, মা ও শিক্ষিকা এই পরিচয়গুলোতে যথেষ্ট সুখী। কিন্তু দেশের অন্যতম স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে নিজ ব্যক্তি পরিচয় না থাকায় আমি খুবই হতাশায় ভুগছিলাম। বাবা ডেইরি ব্যবসা শুরুর পর পরই মারা গেলে আমি তাঁর ব্যবসার হাল ধরি। অনেকেই নানা ধরনের কথা বলে আমার মন খারাপ করে দিত। তাতে আমি পিছু হটিনি। আজ যখন বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আমাকে নারী উদ্যোক্তাদের মডেল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন, তখন আমার সব পরিশ্রম সার্থক মনে হয়।’
প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও মিনার সাফল্য ঘুচিয়ে দিয়েছে মায়ের ছেলেসন্তান না থাকার আক্ষেপ। মাসহ এখন গ্রামের সবাই তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন।
এ ব্যাপারে মিনার মা নাজমুন নাহার বলেন, ‘ছেলেসন্তান না থাকায় একসময় চরম হতাশ ছিলাম, কিন্তু মেয়ের সাফল্যে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এটা হয়তো ছেলে থাকলেও সম্ভব হতো কি না সন্দেহ। এখন আর সেই আক্ষেপ নেই। একদিন আমার মেয়েকে সারা দেশবাসী চিনবে বলে আমার বিশ্বাস।’
বিপিন বিহারি (বিবি) পাইলট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিনার সহকর্মী ও প্রধান শিক্ষক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে মিনার কাজকর্ম পাগলামি মনে হলেও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে আসলেই সফল হওয়া যায়, মিনা তার সফল দৃষ্টান্ত। একজন নারী হয়েও মিনা এখন উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ ডেইরি ব্যবসায়ী। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক নারীই এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উৎসাহী হয়ে উঠছে।’
বর্তমানে সব খরচ বাদে মিনা খামার থেকে বছরে ১০ লক্ষাধিক টাকা আয় হয়ে থাকে। আয়করও দেন আয় অনুযায়ী। প্রায় আট বিঘা জমি নিয়ে মাছ, হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুর একটি সমন্বিত খামার তৈরির কাজেও হাত দিয়েছেন তিনি।