ছাদে সবুজের নৈসর্গ
- লিডারশিপ ডেস্ক
হিরণ্ময় প্রকৃতির আলো, ধ্রুপদী সংগীত আর বিড়ালপায়ে হেঁটে আসা শিউলী-কুয়াশার শারদীয় ভোরে পায়ের নিচে নরম ঘাসের জাজিমের স্পর্শ না পেলেও হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে সবুজ পাতা। এটাই-বা কম কী! নন্দনকাননে মাতাল করা ইচ্ছাশক্তি থেকেই শহুরে জীবনে প্রাণসঞ্চারী সবুজ ছোঁয়ার মধ্যে বেঁচে থাকতে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বৃক্ষপ্রেমী শামীম আরা বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন সবুজের নৈসর্গ, যা শুরু করেছিলেন ২০১১ সালের শেষ দিকে। ক’বছরেই সেই শামীম আরা হয়ে উঠেছেন ছাদে বৃক্ষ বাগানের রোল মডেল। পেয়েছেন ‘ছাদে বাগান করার ক্যাটাগরিতে’ ২০১৫ সালের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দেশসেরা স্বপ্নের নন্দিত জাতীয় পুরস্কার।
ফলদ, বনজ, ভেষজ, ঔষধি, শোভাবর্ধনকারী, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতির গাছ এবং সবজিতে ভরপুর তার ছাদের বাগান। বাগানে ফলদ গাছের মধ্যে সংগ্রহে রয়েছে জিনিয়া পাম, থাইল্যান্ডের জাম, লটকন, শসা, জামরুল, এলাচিলেবু, কলা, আম, পেঁপে, গৌড়মতি আম, সফেদা, মরিচ, কাগজিলেবু, মিষ্টি জলপাই, বাতাবিলেবু, মিষ্টি চেরিফল, নাশপাতি, আতা, বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা, কমলা, পাকিস্তানি মালটা, কামরাঙা, কদবেল, ড্রাগন, মিষ্টি তেঁতুল, থাইড্রপ আম, তেঁতুল, কালো পাতার ব্লাকবক্স আম, থাই জাম, দেশি জাম, করমচা, বিদেশি বেল, বেদানা, চেরিফল, সজনে গাছ, থাইল্যান্ডের বাতাবিলেবু, সুদানের আতা, আপেল, অভিসারিকা আম, সুইট লেমন, থাই কাঁঠাল, বাউকুল, অরুণা (আম)। মশলাজাতীয় গাছের মধ্যে আছে অল স্পাইস, তেজপাতা, দারুচিনি, গোলাপজামন, ধনে পাতা প্রভৃতি।
শোভাবর্ধনকারী গাছের মধ্যে আছে নীল অপরাজিতাসহ বিভিন্ন রঙের অপরাজিতা, ফায়ার বল, বিভিন্ন ধরনের জবা, অ্যাডেনিয়াম, এলামুন্ডা, ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির গোলাপ, লাইলী-মজনু, বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার, সাইকাস, অ্যারোমেটিক জুঁই, টগর, কামিনী, মধুমালতি, মাধবিলতা, বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস, বেগুনিয়াসহ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির ফুল। বর্তমানে তার বাগানের গাছগুলোয় মালটা, ড্রাগন, করমচা, পেয়ারা, বেদানাসহ বেশকিছু ফল ধরে আছে। ফুটে আছে অনেক ফুল। শীতকালে পুরো ছাদই যেন ফুলময় হয়ে ওঠে।
ভালোবাসার ছোঁয়ায় তিনি গড়ে তুলেছেন বাগানটি। আর গাছগুলো যেন তার নিজের সন্তান। কোন গাছের কী প্রয়োজন, তা ভালোভাবেই জানেন তিনি। নেন সেভাবেই যত্ন। বাগানে বিকাল থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের পাখির আনাগোনা। সবুজঘেরা প্রকৃতিতে পাখিদের কলরব মন ভরিয়ে দেয়।
শামীম আরা জানান, শৈশব থেকেই গাছের প্রতি তার খুব আগ্রহ ছিল। সে থেকে শখ। বিয়ের পর থেকেই বাড়ির ছাদে গাছ লাগাতে শুরু করেন তিনি। নিজের প্রচেষ্টা আর স্বামী সেহাবউদ্দীনের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় বাড়ির ছাদে বাগানের সূচনা। শুরুর দিকে তারা বাগানে সবজিও চাষ করতেন। পুঁইশাক, বিভিন্ন ধরনের সবুজ ও লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বেগুনও চাষ করা হতো ছাদে। বাড়ির সবজির চাহিদা ছাদের বাগান থেকেই পূরণ হয়ে যেত। তবে বর্তমানে ছাদে সবজি চাষ কমিয়ে দিয়েছেন তারা। অন্য গাছগুলোর অসুবিধা হওয়ার কারণে তারা এ উদ্যোগ নেন। তিনি আরও জানান, যান্ত্রিক শহরে সবুজ প্রকৃতি খুবই জরুরি। এ অনুভবটা তিনি মনে করতেন।
কৃষিবিদরা জানান, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষ দিনে ২২ হাজারবার শ্বাস নেন। আর এতে করে একদিনে মানুষের অক্সিজেন প্রয়োজন হয় ১৬ কেজি; যার জোগান দেয় সাতটি গাছ। তাই নিজেদের সুস্থ থাকার তাগিদেই অধিক পরিমাণ গাছ লাগানো উচিত।