সাফল্যের কাছেই আমাদের ছুটতে হয়
বর্তমানে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব পেরোল হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া জুনিয়র চেম্বার অব ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) সেন্ট্রালের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তরুণ এবং নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে কাজ করছেন। তার বেশ নামডাক ও সুনাম রয়েছে কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের কর্মযজ্ঞে। মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবেও ডিগ্রি আছে ভারতের দিল্লির ল্যান্ডমার্ক এডুকেশন ফোরামের।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছেন। জীবনের যুদ্ধটা সহজ ছিল না, কিন্তু হাল ছাড়েননি অহনা। চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহী অদম্য এ মানুষটির সাক্ষাৎকার থাকছে আজ।
কারো সহযোগিতা ছাড়াই একটার পর একটা সাফল্যগাথা রচনা করে চলেছেন-
সুলতানা শিকদার অহনা : আমরা সবাই সাধারণ হয়েই জন্মগ্রহণ করি। অসাধারণ হওয়ার যুদ্ধটা নিজেকেই করতে হয়। আমি পারব না বা পারি না শব্দটা আমার অভিধানে ছিল না। অতএব আপনার স্বপ্ন এবং লক্ষ্যের পেছনে আপনাকেই ছুটতে হবে। আপনি স্বপ্ন বড় দেখবেন না ছোট দেখবেন সেটাও আপনাকেই ঠিক করতে হবে।
কাস্টমার সার্ভিসে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক-
সুলতানা শিকদার অহনা : যারা গ্রাহক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে আছেন তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হল নিজের সুন্দর মুখটা হাসিতে ভরে রাখা। অন্যকে গুরুত্ব দেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। কোনো মিথ্যা বা ভুল তথ্য কিছুতেই দেওয়া যাবে না। আপনার ইগো ব্যাপারটা বাসায় রেখে আসলে কাউকেই সেবা দিতে আপনার কষ্ট হবে না। কাজটা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।
আপনি তো জেসিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন-
সুলতানা শিকদার অহনা : হ্যাঁ, এক্ষেত্রে আমি বলব, যেকোনো ব্যবসায়ই কর্মপরিকল্পনা থাকা উচিত। কেন আমি এই ব্যবসাটা করব, কাদের জন্য করব? আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা কেবল আইডিয়ার ওপর ভর করে এগোতে চেষ্টা করেন। জীবনে শর্টকাট বলে কিছু নেই। ভাবনা বা পরিকল্পনা না থাকার কারণে অধিকাংশ স্টার্টআপ সফলতার মুখ দেখতে পায় না।
এ থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ-
সুলতানা শিকদার অহনা : নির্দিষ্ট ছকে কর্মপরিকল্পনাকে আঁকতে হবে। আদৌ আইডিয়াটা বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে যায় কিনা সেটা ঠিক করতে হবে। এ ধরনের কোনো ব্যবসা আগে থেকে কেউ করছে কিনা, করলে কি অবস্থা সেটা একটু যাচাই-বাছাই করা। তিন-পাঁচ বছরে কোথায় গিয়ে ব্যবসাটা দাঁড়াবে সেটা বুঝতে পারা। তারপরই মাঠে নামা উচিত। আর কিছুতেই হেরে যাওয়া যাবে না।
এমন কিছু কি আছে- যেটা আমাদের নারীদের আরো বেশি উৎসাহিত করেবে?
সুলতানা শিকদার অহনা : আমার কাজের ব্যর্থতার গল্প অনেক আছে। এমন হয়েছে যে, মাথার উপরে রাতে থাকার ছাদটা ধসে পড়বে যদি চাকরিটা ছেড়ে দেই। তারপরও ঝুঁকি নিয়েছি, আমি হেরে যাইনি, রাস্তা ভুল করিনি। চাকরি ছাড়তে হয়েছে অনেক, খেয়ে না খেয়ে থেকেছি। এমনও শুনেছি, ‘তোমাকে দিয়ে আর যাই-ই হোক চাকরি হবে না। কতভাবে বিপদে পড়েছি, আবার উঠেও দাঁড়িয়েছি। ব্যর্থতা ছাড়া সফলতা আসে না।
আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী?
সুলতানা শিকদার অহনা : আমার স্বপ্ন অনেক বড়। স্বপ্ন লালন করছি, এক সময় হয়তো সত্যি হবে। আমার মনে হয়, আগামী বছরই জানতে পারবেন। আমার জন্য মাঝখানে বলে কিছু নেই। স্বপ্ন ছাড়া বাঁচি কীভাবে?
ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের তরুণদের আপনি কী বলবেন?
সুলতানা শিকদার অহনা : প্রথমত একটি সঠিক কর্মপরিকল্পনা করুন নিজের দক্ষতা এবং ভালোবাসা অনুযায়ী।
দ্বিতীয়ত কিসে আমার ভালো লাগে আর কিসে আমি হতাশ হই এটা বুঝতে পারা।
তৃতীয়ত কোথায় কাজ করে নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতে পারবেন সেটাও আগেই বুঝতে হবে।
চতুর্থত আপনি সম্মান করেন এবং ভালোবাসেন এমন কাউকে পরামর্শের জন্য বেছে নিলে ভালো হয়।
আর সবশেষে মার্কেটে কোন চাকরির চাহিদা কেমন সেটা বুঝতে পারলে আপনি আরো একধাপ এগিয়ে থাকবেন। এছাড়া স্পেশাল ট্রেনিং, কোচিং, নিয়মিত খবর দেখা- এসবই আপনাকে সাহায্য করবে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছতে।
সফলতার মূল মন্ত্রটা জানতে চাই-
সুলতানা শিকদার অহনা : সফলতার কোনো শেষ নেই। তাই আমার কাছে সফলতা হল স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। যতদিন আমি সঠিক পথে হেঁটে চলব, আমার স্বপ্ন পূরণ হতে থাকবে, আমি মনে করব, আমি সফল একজন মানুষ।