শুধু প্রতিভাতেই সাফল্য নয়
- লিডারশিপ ডেস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকার আলোচিত ক্রিকেটার আব্রাহাম বেনজামি ডি ভিলিয়ার্স, এবি ডি ভিলিয়ার্স নামেই ক্রিকেট বিশ্ব যাকে চেনে। জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে ১৯৮৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুতগতির অর্ধশতক (১৬ বল), দ্রুতগতির শতক (৩১ বল), দ্রুতগতির ১৫০ রানের মালিক (৬৪ বল) এবি ডি ভিলিয়ার্স।
আমি মনে হয় দুর্ঘটনাবশত ক্রিকেটার হয়ে গেছি। কিশোর বয়সে স্বপ্ন দেখতাম ক্রিকেট খেলব। সেই স্বপ্নের জোরেই আমি এখন ক্রিকেটার। প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে পৃথিবীসেরা খেলোয়াড় হওয়া। যদি এই স্বপ্ন না থাকে, তাহলে বলতে হবে, সেই ক্রিকেটার ভুল কোনো কারণে ক্রিকেট খেলে। আমি অবসরে গিয়ে শুনতে চাই, ‘আমি ভালো ক্রিকেটার ছিলাম।’ আমি চাপ নিয়ে খেলতে ভালোবাসি। খেলার মাঠে প্রবল উত্তেজনার সময় আমি নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি। সব চাপ নিজের মধ্যে নিয়ে সামনে তাকাই। লক্ষ্যের দিকে ছুটে যাই। হাফ সেঞ্চুরি থেকে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। স্বপ্নের সীমানাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। কোন বাধার সামনেই আমি পরাস্ত হতে চাই না। নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি। নিজের পিছে নিজে তাড়া করে বেড়াই। নিজেই হয়ে উঠি নিজের সবচেয়ে ভয়ানক প্রতিদ্বন্দ্বী।
গত কয়েক বছরে আমার খেলার ধরন বেশ বদলেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস একটুও বদলায়নি। আমি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করি। আমি সব ধরনের পরিবেশে খেলতে চাই, নিজেকে সেভাবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার লড়াই বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে নয়, নিজের সঙ্গে। আমি নিজে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করি, আর সেই চ্যালেঞ্জের পিছে ছুটে যাই। আমি বড় পরিসংখ্যান আর রেকর্ড করা কোনো ক্রিকেটার নই, কিন্তু আমি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সর্বোচ্চ রান করেছি। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নের মতো অবিশ্বাস্য সেই রেকর্ডের মালিক আমি। রেকর্ড করার পরে রেকর্ড দেখতে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু মাঠে রেকর্ডের জন্য নামা বোকাদের কাজ।
আমি যখন কিশোর ছিলাম, তখন গ্যারেজে ক্রিকেট খেলতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং প্র্যাকটিস করতাম। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ নিজেই তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সে মানুষ। আমি ক্রিকেট খেলায় হারতে ঘৃণা করি। ভীষণভাবে ঘৃণা করি। আমি রান করার পরেও আমার দল হারলে আমি ভীষণ হতাশ হই।
ক্রিকেট ছাড়াও আমি টেনিস আর গলফে ভালো ছিলাম একসময়। কিশোর বয়সে আমি সব খেলাই খেলতাম। হাইস্কুলে পড়ার সময় আমি বুঝতে পারি, ক্রিকেটই আমার সব। টেনিস খেলার কারণে আমার বল দেখতে বেশ সুবিধা হয় ক্রিকেটে। ১৬ বছর বয়স থেকে আমি নিয়মিত ক্রিকেট খেলা শুরু করি। ১৭ বছর বয়সে আমি এসএ কোল্ট দলে খেলার সুযোগ পাই। আর ১৮ বছর বয়সে আমি অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পাই। যেদিন প্রথম আমি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাই, সেদিনের কথা এখনো আমার মনে আছে। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল, পরের দিনই কোনো হাই ভোল্টেজ ম্যাচ আছে। আমি সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেট প্র্যাকটিসে চলে গিয়েছিলাম। সেই দিনের রোমাঞ্চ এখনো অনুভব করি। অবসরে আমি গান আর মাছ ধরা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমি তো গিটারও বাজাতে পারি। আমি বেশ কটি গানও লিখেছি। আমি অবসরে গেলে গান-বাজনার জগতে ঢুকে যাব। ক্রিকেটের খ্যাতি গানের দুনিয়াতে কাজে লাগবে তখন।
আমি নিজেকে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে দিই। আমার কাছে জীবনটা হলো দৌড়। সব সময় দৌড়াতে হবে। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে থাকলেও দৌড়াতেই হবে। ইনজুরিতে পড়লেও আমাদের দৌড়াদৌড়ি করেই সেই ইনজুরি কাটাতে হয়। মানুষ মাত্রই যোদ্ধা, সংগ্রাম ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা সবাই নিজ নিজ ভুবনে যোদ্ধা। আমাদের নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
শুধু প্রতিভা দিয়েই মানুষ সাফল্য লাভ করতে পারে না। নিজের ওপর বিশ্বাস, আর কঠিন শ্রমই পারে আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। বড় কিছু করার জন্য সুযোগ এলেই তা ধরে কাজে লাগাতে হবে। অন্য কেউ আপনার হয়ে কাজ করে দেবে না, নিজের কাজ নিজেই করতে হবে। নিজের ওপর দৃঢ় বিশ্বাসই মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। পথে নামলে বাধা আসবেই। ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যাই। সাময়িক বাধায় হতাশ না হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল আয়ত্ত করতে পারলেই সবকিছু সহজ হয়ে যায়। প্রতি মুহূর্তকেই নিজের জন্য কাজে লাগাতে হবে। সব বল যে ব্যাটে লাগাতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। ছুটে যাওয়া বল দেখাও একধরনের কৌশল। সময় নিয়ে বলের গতি বুঝে বলে আঘাত করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের জীবনটাই এমন। সময় আর ধৈর্য নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। নিজের শক্তি আর সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রেখে খেলে যাওয়াই প্রথম কাজ। সুযোগ প্রতীক্ষা বসে থাকার সময় নিজের শক্তি বাড়ানো যোদ্ধাদের সত্যিকারের কাজ।
সূত্র: প্রথম আলো