সাক্ষাৎকার: অনেক বাঁধার মুখোমুখি হয়েছি
- লিডারশিপ ডেস্ক
তৌহিদা সুলতানা, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। দেশের আবাসন খাতে সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান এডভান্স হোমস (প্রা:) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়ন ও পূনর্বাসনে কাজ করছেন। ছোটবেলায় নেয়া সঙ্গীতের তালিমটাকে ভুলতে পারেননি। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি কাজ করছেন ভাওয়াইয়া সঙ্গীত নিয়ে।
: শুরুতেই আপনার কাছে দেশের আবাসন শিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।
তৌহিদা সুলতানা: পৃথিবীর সব দেশেই নাগরিকদের মৌলিক চাহিদায় অন্ন বস্ত্রের পরেই অবস্থান বাসস্থানের। প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করার। বাংলাদেশে বর্তমান নগরজীবনে সবারই স্বপ্ন একটি সুন্দর ফ্ল্যাট বা আপ্যার্টমেন্টের। সরকারের পক্ষে এককভাবে এ মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা মাথায় রেখেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নামে দুই হাজারেরও বেশি ডেভেলপার কোম্পানি। জমি না বাড়লেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ। নাগরিকদের মাথা গুঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে সম্প্রসারিত হচ্ছে আবাসন ব্যবসা। দেশে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের অন্যতম বড় অংশীদার আবাসন শিল্প। দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে এই খানে। আবাসন শিল্প প্রসারিত হওয়ায় এটাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রঙ, রড, সিমেন্ট, ইট এবং সিরামিকস-সহ এ সংক্রান্ত দুইশ’রও বেশি বিপুল সম্ভবনার লিংকেজ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আবাসন শিল্প এবং সহযোগী নির্মাণ শিল্পের এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৩৫ লাখ মানুষ কর্মরত।জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৯ শতাংশ ভূমিকা রাখছে এই খাত।
দেশের অন্যতম বিনিয়োগখাত এই আবাসন শিল্প বর্তমানে একধরনের ক্রান্তিকাল পার করছে। ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, দেশের শেয়ারবাজারের ধস, প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার হার বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় আবাসন শিল্পে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। উদ্যোক্তাদের প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকিতে পড়েছে। সংকট উত্তরণে সরকারকে বারবার বলার পরও ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সরবরাহের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ক্রেতা নেই, বিক্রিও নেই। যার কারণে আবাসন খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই নতুন প্রকল্পে হাত দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এই খাত বিনিয়োগ কমে গেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
: এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের উপায় কী?
তৌহিদা সুলতানা: আবাসনশিল্প মানুষের মাথা গোঁজার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করে, তাই এ শিল্পের প্রতি সরকারের মনোযোগ বাড়ানো উচিত। আবাসন খাতের বিদ্যমান অবস্থা কাটিয়ে উঠতে এ খাতের ফ্ল্যাট ও প্লট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ফি ও অন্যান্য কর কমানো দরকার। বর্তমানে ফ্ল্যাট নিবন্ধনে সব মিলিয়ে ১৪ শতাংশ ফি ও কর দিতে হয়। প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের নিবন্ধন বর্তমানে দুই হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে একটি ফ্ল্যাট নিবন্ধন করতেই এলাকাভেদে তিন থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের জন্য নিজের ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন আরও ফিকে হয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই নিবন্ধন ফি ৪ থেকে ৭ শতাংশ। আমাদের দেশে এটি অত্যধিক হওয়ায় ক্রেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবাসন খাতে সংকটের আরেকটি বড় কারণ হলো বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনায় ক্রেতাদের জন্য অর্থায়নের উৎসগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। এ খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি না থাকলেও ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে না। ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরী। সীমিত উপার্জনের ক্রেতাদের পক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ না পেলে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবা কঠিন। ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোতে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য সরকারের নীতিমালা করতে হবে।
: সংকট কাটাতে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) কী কী উদ্যোগ নিয়েছে।
তৌহিদা সুলতানা: গত প্রায় দুই বছর ধরে চলা আবাসন খাতের সংকট কাটাতে রিহ্যাব অনেক পদক্ষেপই গ্রহণ করেছে। ফ্ল্যাট কেনায় মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে রিহ্যাব প্রতিবছর ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোতে আয়োজন করছে মেলার। আবাসন শিল্পের সমস্যাগুলো নিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে কথাও বলছে নিয়মিত। আগামী অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে আবাসন শিল্প সুরক্ষায় সরকারের বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দীর্ঘমেয়দি ঋণ ব্যবস্থা, নিবন্ধন ফি ও কর অর্ধেক কমিয়ে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ নির্ধারণে আবাসন শিল্পের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট হ্রাস এবং নতুন ভাবে মূল্য সংযোজন কর আরোপ না করা। আমাদের এসব দাবি বাস্তবায়নে যদি সরকার উদ্যোগী হয় তাহলে আবাসন শিল্পের সংকট কেটে যাবে, মানুষের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা সহজ হবে এবং সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে।
: ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলেন কীভাবে?
তৌহিদা সুলতানা: নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহরে আমার জন্ম। বাবা সরকারী কারিগরী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন আর মা ছিলেন সৈয়দপুর রেলওয়ে হাই স্কুলের শিক্ষিকা। একেবারেরই মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান আমি। আমার নানা প্রয়াত লুৎফর রহমান অবশ্য রাজনীতি করতেন, উনি ছিলেন শ্রমিক লীগের সেন্ট্রাল কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই পেয়েছি জেন্ডার অ্যাওয়ারনেস পরিবার। ১৯৯০ সালে আয়ারল্যন্ডের অর্থায়নে কনসার্ন বাংলাদেশ থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ৫২ জন ডিসচার্জ মহিলাকে নিয়ে সৈয়দপুরে শতরূপা হস্তশিল্প নামে আমি একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। যেখানে তৈরি হতো কার্পেট, শতরঞ্জী, হ্যান্ডলুম তাতের কাপড় ও হ্যান্ডিক্রাফটের বিভিন্ন সামগ্রী। ওইসময় হ্যান্ডলুম বোর্ডের ডিজিএম এমদাদুল কবির সিদ্দিকী আমার কারখানা পরিদর্শন করে সন্তষ্ট হন্ এবং বিসিক থেকে নারী উদ্যোক্তা ঋণ এবং বিভিন্ন ধরণের ট্রেনিং দেওয়ার মাধ্যমে এক্সপোর্ট লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু পারিবরিক দ্বন্দ্ব ও আমার স্বামীর অসহযোগিতার কারণে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর আমি ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজে (প্রাইভেট) পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্সে ভর্তি হই। পাশাপাশি যুক্ত হই ডেভলপমেন্ট প্ল্যানার্স এন্ড কনসালটেন্ট (ডিআরসি) নামে একটি রিসার্চ ফার্মে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. লুৎফর রহমান, মনিরুজ্জামান মিঞা (সাবেক ভিসি, ঢাবি), ড. নিজামসহ অসংখ্য জ্ঞানীগুনি ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শ পাই। একপর্যায়ে এমএস করার জন্য নেদারল্যান্ডে যাওয়ার সুযোগ পাই। সেখানে যাওয়ার পর আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে গর্মেন্টসের স্টকলটের ব্যবসায় জড়িত হই। স্টকলটের স্যাম্পল স্যাম্পল নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার একপর্যায়ে সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট বাংলাদেশী ব্যবসায়ী তানিয়া গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম বদিউজ্জামানের সঙ্গে পরিচিত হই। মূলত তার আর্থিক সহায়তা, পরামর্শ ও নির্দেশনায় আমার আজকের এই অবস্থান।
: আবাসন খাতের ব্যবসায় জড়ালেন কিভাবে?
তৌহিদা সুলতানা: ২০০২ সালে রাজধানীর রামপুরায় আমার নিজের বাড়ি করতে গিয়ে দেখলাম প্রতি এসএফটি করতে খরচ হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। কিন্তু ডেভেলপার কোম্পানীগুলি ফ্ল্যাট বিক্রি করছে এলাকাভিত্তিক ২০০০- ৪৫০০ টাকা। যা সীমত আয়ের মানুষদের ক্রয়সীমার বাইরে। ওই সময়টাতে আমি বাংলাদেশে অবস্থান করে নির্দিষ্ট কোনো একটা ব্যবসায় স্থির হওয়ার কথা ভাবছিলাম। খুব বেশি মুনাফা না করে এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আবাসন সংকট নিরসনের জন্য ২০০৫ সালে এডভান্স হোমস প্রা. লি. কার্যক্রম শুরু করি।
: একজন নারী হিসেবে এপর্যায়ে আসতে কী কী বাঁধার মুখোমুখি হয়েছেন?
তৌহিদা সুলতানা: আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নারীর সামর্থ্যের প্রতি আস্থা খুবই কম। নারীও উদ্যোক্তা হতে পারে তা অনেকেই বিশ্বাস করে না। যার ফলে নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মতো আত্মবিশ্বাস নারীর মধ্যে গড়ে ওঠতে পারে না। নারীর জীবনে প্রথম বাঁধা শুরু হয় তার পরিবার থেকে। নারীর শারীরিক গঠনও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অনেক সময় বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতায় আমাকে দুর্বল করতে পারেনি। আমার বাবা আমাকে সাহস যুগিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমাকেও অনেকরকম বাঁধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বাঁধার কারণে আমার প্রথম উদ্যোগ সেই সেলাই কারখানা মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশের বাইরে মালমাল বিক্রি করতে যাওয়ার ব্যাপারটাও আমাকে আত্মীয়-স্বজন এবং চেনাজানা অনেকের কাছে গোপন রাখতে হয়েছে। হাউজিং কোম্পানি করবো শুনে অনেক কাছের মানুষই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু কারো নেতিবাচক কথায় কান না দিয়ে সঠিক পরিকল্পনা আর সাহস নিয়ে একটার পর একটা কাজে হাত দিয়েছি বলেই সব বাঁধা আমার কাছে পরাজিত হয়েছে।
: এবার আসা যাক, আপনার শিল্পীজীবন প্রসঙ্গে…।
তৌহিদা সুলতানা: এখানে আমার একটা আপত্তি আছে, নিজেকে আমি শিল্পী বলে কখনোই দাবি করি না। শিল্পচর্চার জন্য যতোটা নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর সময় দেওয়া দরকার, তা আমার পক্ষে কখনোই দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আমাকে শিল্পী বলা অন্যায় হবে। আমাকে বড় জোর সঙ্গীত অনুরাগী বলতে পারেন।
: কিন্তু আমরা তো আপনাকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের গানের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে দেখেছি।
তৌহিদা সুলতানা: ছোটবেলায় বাবার উৎসাহে সঙ্গীতে তালিম নিয়েছিলাম। স্কুল-কলেজের অনেক অনুষ্ঠানে গানও করেছি। কিন্তু পরে ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় সঙ্গীতচর্চাটা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। একসময় যে গান করতাম, সেটা তো অনেকেরই জানা আছে। সেরকম কিছু কাছের মানুষের অনুরোধ রাখতেই টিভিতে গান করতে হয়েছে। তবে একজন ভালো সঙ্গীত অনুরাগী আমি। সারাদিনের ব্যস্ততার ফাঁকে সময় পেলেই আমি গান শুনি। গানের প্রতি এই ভালোবাসা থেকে নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছি একটা আধুনিক স্টুডিও। ইচ্ছে ছিল, কাজের ফাঁকেই সময় বের করে গানটা আবার শুরু করবো। কিন্তু ব্যস্ততা আমাকে সেই অবসরটুকু দিলো কই? তাই বলে স্টুডিওটা আমি ফেলেও রাখিনি। আমাদের দেশে এমন অনেক মেধাবী শিল্পী আছে, যারা আর্থিক অসচ্ছলতায় স্টুডিওতে কাজ করতে পারেন না। তাদের আমি আমার স্টুডিওটা ব্যবহার করতে দিচ্ছি। পাশাপাশি ভাওয়াইয়া গানের বিকাশের জন্য একটা প্রজেক্টকে আমি পৃষ্ঠপোষকতা করছি।
: সেটা কি রকম?
তৌহিদা সুলতানা: আমি উত্তরবঙ্গের মেয়ে। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য হলো ভাওয়াইয়া গান। কিন্তু আব্বাস উদ্দিনের পর ভাওয়াইয়া গান নিয়ে সেরকম ভালো কাজ হয়নি। একটা জায়গায় যেন থমকে আছে ভাওয়াইয়া গান। রংপুর অঞ্চলের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাওয়াইয়া গানগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো আদিসুর বজায় নতুন সঙ্গীতায়োজনে তা নতুনপ্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে একটা কাজ শুরু হয়েছে। দেশের এই সময়ের মেধাবী ও সুপরিচিত সঙ্গীতপরিচালক এ কাজে যুক্ত আছেন। আমার পৃষ্ঠপোষকতায় কাজটি চলছে, এটি শেষ হতে হয়তো বছরখানেক সময় লাগতে পারে।
: দেশ বা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিশেষ কোনো কাজ করছেন কী?
তৌহিদা সুলতানা: কাজটাকে ঠিক দেশ বা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালনের অংশ বলা ঠিক হবে কিনা জানি না। অল্পবয়সে একবার একটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ের অসহায়ত্ব দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ওদের জন্য কিছু করা দরকার, এরকম একটা তাড়না আমার ভেতর তখনই ঢুকে যায়। আল্লাহর রহমতে আমার এখন সেই সামর্থ্য হয়েছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সুষ্ঠ বিকাশ, তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে একটা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। অসচ্ছল ও গরিব পরিবারের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মক্ষম করে তুলতে চেষ্টা করছি আমরা। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। হ্যান্ডিক্রাফট ও গিফট সামগ্রী তৈরির প্রকল্পে তারা কাজ করছে। তাদের তৈরি করা পণ্য বিক্রি ও বাজারজাতের দায়িত্বও আমাদের। বিক্রয় করা পণ্যের উৎপাদন খরচ বাদে লভ্যাংশের পুরোটাই তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। গরিব পরিবারের শতাধিক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে আমরা এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। আগামী এই সেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানটির পরিধি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।