ইনসার আলীর খুদের ভাত খুব জনপ্রিয়
- লিডারশিপ ডেস্ক
বাঙালি রসনায় ভাত, ভর্তা, ভাজি, ঝোল আর ডালের তুলনা নেই। ইনসার আলীর খুদের ভাত আর ১০ পদের ভর্তায় তা যেন ঝলকে ওঠে। সঙ্গে ডিম ভাজাও আছে। ভরপেট খেলেও মনে হবে আরেকটু খাই। এলাকার লোকজন তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও নানা বয়সী মানুষ সেখানে ছোটে জিবে শাণ দিয়ে। এমনকি ঢাকা থেকে যান তরুণ-তরুণীরা।
কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে ইনসার আলীর হোটেল। রাস্তার দুই পাশে দুটি টিনের ঘর। একটি পুরোনো। ভেতরে টিনের গায়ে মরচে পড়া, কালিঝুলিমাখা। ছোট চার-পাঁচখানা টেবিল পাতা, বসার জন্য আছে বেঞ্চ। এতে বসেই লোকজন গোগ্রাসে গিলছে খুদের ভাত। সরু রাস্তার ওপারের ঘরটি নতুন। পরিচ্ছন্নও। সেখানে জায়গা না পেয়ে পুরোনো ঘরেই বসলাম আমরা। ইনসার আলীও এই দোকানেই বসেন।
রেস্তোরাঁর বয়স কত—জানতে চাইলে ইনসার আলী বলেন, দুই বছর। নতুন ঘরটার দিকে ইশারা করে বললেন, ‘ওইটা দিছি এক বছর হইল। সাইকেল চালায়—এমন কয়েকজন মিইল্যা ওই ঘরটা তুলে দিছে।’ পেছন ফিরে দেখলাম নতুন ঘরের টিনের গায়ে লেখা, ‘হলিডে রাইডার্স’। ব্যবসা তাহলে ভালোই চলছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ৫০ বছরের এই প্রৌঢ় জানান, ছুটির দিন, মানে শুক্রবারেই ব্যবসাটা জমে বেশি। ১০০ প্লেট বা তারও বেশি খাবার বিক্রি হয় এই দিন। সাইক্লিস্টরাই তাঁর এখানে খেতে আসেন বেশি।
চাল ঝাড়ার পর ভাঙা ছোট ছোট যে চালটা পাওয়া যায়, সেটাই খুদ। সেই খুদ ইনসার আলী রাঁধেন পোলাওয়ের মতো। সঙ্গে নানা পদের ভর্তা আর ডিম। রান্নার এই চালকে কেরানীগঞ্জে বলে ‘খুদের ভাকা’। টেবিলের ওপর বড় একটা হাঁড়িতে রাখা খুদের ভাকা। পাশে গুটিকয় প্লাস্টিকের বাটিতে সাজানো লাল, সবুজ ও নানা রঙের ভর্তা। প্লেটে প্রথমে দেওয়া হয় খুদের ভাত, এরপর প্লেটের চারপাশে সাজিয়ে দেওয়া হয় চিংড়ি, শুঁটকি, বেগুন, আলু, শুকনা-কাঁচা মরিচসহ ১০ পদের ভর্তা। প্লেটের মাঝখানে ডিম ভাজা। প্রতি প্লেটের দাম ৪০ টাকা। খাওয়া শেষে চায়ের ব্যবস্থাও আছে এখানে। গরুর দুধ দিয়ে বানানো হয় এই চা।
খেতে খেতেই কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। পাঁচজনের ছোট দলটা সাইকেল নিয়ে এসেছে জিনজিরার দিক থেকে। সবাই কেরানীগঞ্জ সাইক্লিস্টস গ্রুপের সদস্য। এখানকার খাবারের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে আল শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি এই কেরানীগঞ্জেই। এখানকার স্থানীয় লোকেরা সকালে ভুনা খিচুড়ি ও ভাকা খেতে ভালোবাসে। আরও অনেক জায়গায় খুদের ভাকা খেয়েছি। কিন্তু ইনসার ভাইয়েরটা অন্য রকম স্বাদ।’ শাহরিয়ারের সঙ্গে সুর মেলালেন পাশেই বসে থাকা ইমরানও, ‘এখানের খাবারটা আসলেই জটিল!’
চলে আসার আগে জানতে চাইলাম, ‘ইনসার ভাই, আপনার সম্পর্কে জানা হলো না। কয় ছেলেমেয়ে আপনার?’ একগাল হেসে জবাব দিলেন, পাঁচ ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে সংসার। ছোট মেয়েটার নাম সোহানা। ক্লাস সেভেনে পড়ে। তার নামেই হোটেলের নাম দিয়েছেন। ছোট ছেলে থ্রিতে পড়ে। ওরা দুজনেই পড়াশোনার ফাঁকে হোটেলের কাজে বাবার সঙ্গে হাত লাগায়। আর রান্নাবান্না স্বামী-স্ত্রী মিলে করেন।
সূত্র: প্রথম আলো