দৌড়ে প্রথম সুমি
- লিডারশিপ ডেস্ক
গল্পটা এভাবে বলি। ভাবুন, এ দেশেরই কোনো গ্রামের দুরন্ত এক কিশোরী। সারা দিন দৌড়ঝাঁপ আর খেলাধুলায় দিন কাটে তার। অন্য মেয়েদের মতো রান্নাবাটি খেলায় মন নেই, সারা দিন শুধু দুরন্তপনা! স্থির হওয়ার সময় যেন তার নেই। তাকে ছুটতে হবে, দূর থেকে বহু দূরে। যত দূরে গেলে মুঠো ভর্তি করে নেওয়া যায় সাফল্যের রত্নভান্ডার!
গল্পের চরিত্রটার নামও জেনে নেওয়া যাক তবে। নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ১২ আগস্ট এভারেস্ট একাডেমি আয়োজন করে ‘ঢাকা উইমেন্স ম্যারাথন’-এর প্রথম আসর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে এই ম্যারাথনে প্রথম হয়েছেন সুমি আক্তার। বলছিলাম তাঁর গল্পই! সেনাবাহিনীর এই সৈনিক দৌড়েছেন ১০ জন নয়, ১০০, ২০০–ও নয়, অন্তত ৩০০ মেয়ের সঙ্গে। আর ৪৮ মিনিট ২২ সেকেন্ড খরচ করে প্রথম হওয়ার আগে ছুটেছেন টানা ১০ কিলোমিটার পথ!
সুমি আক্তারের পরিচয়টা অবশ্য এতটুকুই নয়। এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে ৮০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন তিনি। গত বছর তো ৮০০ মিটার, ১০০০ মিটার ও ১৫০০ মিটার—তিন ইভেন্টেই জিতেছেন সোনা। অপেক্ষায় আছেন এ বছরের জাতীয় পর্যায়ের ইভেন্টের।
সুমি ছোটবেলা থেকেই জানতেন, আর কিছু নয়, ক্রীড়াবিদই হতে চান। ‘ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝতে পেরেছি, খেলাধুলা ছাড়া কিছুতেই আমি তেমন ভালো করতে পারব না। খেলাধুলাটা আমি ভালো পারি, তাই সেদিকেই আমার এগোনো উচিত।’
এগোতে চাইলেই নিশ্চয় তা খুব সহজ হয় না। জন্ম মানিকগঞ্জের এক গ্রামে। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া তো তা অসম্ভবের কাছাকাছি! দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে পরিবারে সবার ছোট মেয়ে সুমি নিজেও বললেন তা–ই। পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া দৌড়ে যত পারদর্শীই হন না কেন, এত দূর আসা হতো না কখনোই! তবে তাঁর মুখের কাঠিন্য ও আত্মবিশ্বাসটা এমন, যেন ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা কখনো মনে উঁকিও দেয়নি!
১০ কিলোমিটারের এই ম্যারাথনেও শুধু অংশগ্রহণের জন্য নয়, জিততে পারেন, এই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই অংশ নিয়েছিলেন, ‘আমরা যারা সেনাবাহিনীতে আছি, আমাদের প্রতিদিনই সাত–আট কিলোমিটার দৌড়াতে হয়। যখন ম্যারাথনের কথা জানলাম, ভাবলাম অল্প একটু চেষ্টা করলে জিতে যেতেই পারি।’ আর দৌড়ের সময় অর্ধেক পথ পার করে অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিলেন, এই দুস্তর পারাবার তিনিই সবার আগে পেরোবেন!
সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০১৪ সালে। পড়ালেখার আগ্রহটাও হারাননি, আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন তিনি। অগ্রযাত্রাতেই যাঁর সাফল্য, ভবিষ্যতে তিনি নিশ্চয়ই পেরোবেন আরও অনেক পথ। বললেনও তা–ই, ‘ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনতে চাই। দেশকে নিজের নাম দিয়ে আরও উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে চাই বিশ্বের মানচিত্রে।’
এই ম্যারাথন যে জন্য, অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন, সে ব্যাপারে কী ভাবেন সুমি? সুমির ভাবনা, ‘সমাজ ও জীবনের সব পর্যায়ে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারা এবং সে পথেই নিজের জীবনকে পরিচালনা করার পর্যায়ে পৌঁছানোই নারীর ক্ষমতায়ন।’

 
	                
	                	
	            
 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	