যারা অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান
- লিডারশিপ ডেস্ক
নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের ছোট মেয়ে রিনা ইয়াসমিনের ছোট মেয়ে প্রিয়তা ইফতেখার। তিনি ইতোমধ্যে ভারতের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা অনুপম খেরের ‘অ্যাকটিং প্রিপেয়ারস’ এবং ‘রাইটারস প্রিপেয়ারস’-এর ওপর ছয় মাসের স্নাতক ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
প্রিয়তা বলেন, শুধু অভিনয় নয় যারা স্ক্রিপ্ট লিখতে চান, তাদেরও এই কোর্স করা জরুরি। কারণ মিডিয়া এখন অনেক বিস্তৃত। ঘরে বসেই উন্নত দেশগুলোর কাজ দেখতে পাওয়া যায়। তাই দেশে কাজ করেই বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। কিভাবে একটি ভালো স্ক্রিপ্ট লেখা যায়, তার বিস্তারিত জানা যাবে এই কোর্সে। সপ্তাহে ছয় দিন আমরা দশ ঘণ্টা করে ক্লাস করেছি। আমার এই শিক্ষাজীবনে চ্যানেল টিএফওয়ানের হয়ে বলিউডে ডকুমেন্টারির অংশ হওয়ার সুযোগ পাই। আমি সোনাম কাপুর, কালকি, সঞ্জয় কাপুর ‘ম্যাট্রিক্স’-এর পরিচালক লানা ওয়াচোস্কিকে কাছ থেকে দেখি। এটা আমার সৌভাগ্য। তারা কাজের প্রতি আর কমিটমেন্টে কত সিনসিয়ার আর দক্ষ, দেখে অবাক হই।
শুধু অনুপম খেরের প্রতিষ্ঠান থেকেই নয়। এরপর প্রিয়তা ‘জেফ গোবার’-এর স্টুডিও থেকে অভিনয় ও চলচ্চিত্র নির্মাণে স্কলারর্শিপ নিয়ে শেষ করেছেন নয় মাসের আরো একটি কোর্স।
অভিনয়টা খুব সহজ নয় বলে মনে করেন প্রিয়তা। বলেন, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই হয়ে যাবে এমন নয়। লং শট, শর্ট শট কি, এই শটে কি অভিব্যক্তি দিতে হবে, লাইট-এর সাথে পোশাকের রঙের কি সম্পর্ক, তাও কিন্তু একজন শিল্পীকে জানতে হবে। এ-বিষয়ে শিক্ষা না নিলে কিভাবে জানবে! আগে এ বিষয়ে জানার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এখন অনেক সুযোগ।
পড়াশুনার পাশাপাশি দেশে কোন কাজ করেছেন? জানতে চাইলে প্রিয়তা বলেন, ২০১৩ সালে এয়ারটেলের ভালোবাসার গল্প নিয়ে ‘ইম্পসিবল-ফাইভ’, কিছু নাটক আর গ্রামীণের একটা বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি। তখন আমি বিষয়টাকে তেমন গুরুত্বের সাথে নিইনি। তবে এখন আমি গুরুত্ব দিয়েই কাজ করতে চাই।
সম্প্রতি শ্রীলংকার ‘পেনিমাকুলো’-যার অর্থ মিষ্টি সম্পর্ক নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেছি। এ তথ্য জানিয়ে প্রিয়তা বলেন, সেখানে চরিত্রটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। ইন্টারনেটে সম্পর্ক নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয় দুই বোনকে। এক বোন এক সময় প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আমি সেই প্রতিবাদী চরিত্রে কাজ করেছি। ছবির কাহিনিটা কিন্তু সময়োপযোগী। এ যুগে অনেক নারীর জন্য বিপদ ডেকে আনে এই নেটের বন্ধুত্ব। ছবিতে একটা মেয়ে ইন্টারনেটে সম্পর্কের জন্য বিপদে পড়লে কি করবে, তা দেখানো হয়।
শুধু অভিনয়ই নয়। এরই মধ্যে নির্মাণেও হাত দিয়েছেন প্রিয়তা। তিনি নির্মাণ করেছেন নানিকে নিয়ে ‘নূরজাহান বেগম-ইতিহাসের কিংবদন্তি নারী’ নামের তথ্যচিত্র। এটা তার জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জও ছিল বটে।
তরুণ এই শিল্পী জানান, বিখ্যাত কিংবা নির্দিষ্ট করে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও নূরজাহান বেগমের মতো পরিবারের অংশ হয়ে একজন শো-বিজ জগতের দক্ষ নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী হওয়ার স্বপ্নও তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে অনেকবার। তাই তিনি কাউকে বলতেন না নিজের পরিবারের কথা। কেউ জানলেই বলতেন, তাদের ঘরের মেয়ে ছবি করবে! কারণ আমাদের দেশে ছবিতে অভিনয়কে সম্মানীয় পেশা হিসেবে দেখা হয় না। আমি সাংবাদিক কিংবা সাহিত্যিক হলেই যথার্থ হতো।
ছেলেবেলা থেকে এমন দু’জনকে খুব কাছ থেকে দেখে কেন সাংবাদিক হতে চাননি? প্রশ্ন করলে প্রিয়তা বলেন, আমি নর্থ সাউথে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং আন্দোলনের একটা স্টেজ শো করে দেখলাম অন্য সবার চেয়ে সারা যাকেরের কথা সাধারণ মানুষ বেশ গুরুত্ব দিয়ে শোনে। তাই মনে হলো, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে সেলিব্রেটি হতে হবে।
আমাদের সমাজ আর নারীবাদের অবস্থা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়তা একটু হেসে বলেন, চলচ্চিত্র দিয়ে শুরু করি, ২০১৪ সালে ওমেন ইন ফিল্ম নামে একটা সার্ভে হয়, সেখানে দেখা যায় ১.৯ শতাংশ পরিচালক কাজ করছে এই ক্ষেত্রে। এই হলো অবস্থা! তবে নারীরা এগিয়ে আসছে। না হলে প্রতিযোগিতার মধ্যে এক শতাংশও টিকে থাকতো না।
প্রিয়তা বলেন, নারী বেরিয়ে এসেছে। এখন সমানাধিকার অর্জন করতে হবে। নারীদের পর্দায় আই ক্যান্ডি হিসেবে দেখে অভ্যস্ত দর্শক। বিয়ে হলে সন্তান জন্মের পর ঐশ্বরিয়াসহ অনেক প্রতিভাময়ী অভিনয় শিল্পী নিজেদের সরিয়ে নেন। তা ঠিক না। সন্তান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমন কাজও। অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমরা মেধাবীদের হারিয়ে ফেলি সময়ের সাথে সাথে।
প্রিয়তার অভিমত, আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। আমরা নিজেরাই অনেক জায়গায় নারীকে মেনে নিতে পারি না। শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে নারী দক্ষ হয়ে এলে কিন্তু মেনে নিতে হবে। আমি যখন আমার অভিনয় বিষয়ক পড়াশুনার সিভি কাউকে দেই, তারা বলেন, এতো বুঝলাম, এখন কি কি মডেলিং করেছেন, কি কি নাটক করেছেন তা বলেন। কাজের ধরন হলো আগে আপনাকে মডেলিং, নাটক করে নাম লেখাতে হবে। ফেসভ্যালু তৈরি করে কাজে নামতে হবে। আমি এ পথটাকে ছোট করছি না। কিন্তু যে এ বিষয়ে পড়াশুনা করবে, তাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পড়াশুনা জানা লোক আসবে না।
আমি আমার নানুর কাছে শিখেছি, নিজের জায়গা থেকে সততা আর নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে। সময়কে বাদ দিয়ে নয়। ঐতিহ্য আর স্বকীয়তা, সংস্কৃতির ওপর ভর করে আমি যে সময়টাতে আছি, সেটা ধরে চলতে হবে। নয়তো আমরা অন্যদের চেয়ে সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকবো।
1 Comment on this Post
Kawsar
ফিল্ম এর জগতে কেরিয়ার গড়তে চাই….. Comidy flim