কোটিপতি কৃষকদের গল্প
- লিডারশিপ ডেস্ক
কৃষি ও কৃষকের অধিকাংশ গল্পই দিনমান মাঠেঘাটে হাড়ভাঙা খাটুনি, দিনশেষে নুন আনতে পান্তা ফোরানো অবস্থা। গ্রামের অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষ আর লাঙ্গল-গরুর জীবনযুদ্ধ। সারা বছর চাষাবাদ আর বছর শেষে মহাজনের ঋণের বোঝা। তবে কৃষি এখন শুধু খেটে খাওয়া মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন নয়, সম্পদশালী হওয়ার ক্ষেত্রও। অনেকে পরিকল্পিতভাবে কৃষিকাজ করে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন। কৃষিকাজ করে তারা নিজেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি সৃষ্টি করছেন কর্মসংস্থান।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু উদ্যমী মানুষ প্রমাণ করেছেন পরিকল্পিতভাবে কৃষি কাজ করে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সফল হওয়া যায়। ফুল, কুল, কলা, পেয়ারা, পেঁপে, গাজর, টমেটো, আম, লিচু, মাছ, মুরগি, হাঁস, গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে অনেকেই নিজ এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। এসব চাষি অন্যের জন্য অনুকরণীয়।
এ ছাড়া দেশের বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এখন কন্ট্রাক্ট ফার্মিং (বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক চাষ) শুরু করেছে। কৃষিপণ্যের বিপণন ব্যবস্থার এই নতুন সংস্করণে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এর পাশাপাশি হচ্ছে গ্রুপ ফার্মিং। গ্রুপ ফার্মিং হচ্ছে কয়েকজন কৃষক (কমপক্ষে ১০ জন) মিলে একই ধরনের ফসল চাষ ও একসঙ্গে বাজারজাত ব্যবস্থা। উত্তরবঙ্গে এ ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে।
সম্প্রতি সরকার সফল কৃষকদের সাফল্যগাথা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়ার নামে একটি প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০ জন সফল চাষির সাফল্যগাথা টেলিভিশনে প্রচার করছে। তাদের মধ্যে কলাচাষি নরসিংদীর সফুরা বেগম, ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারীর গাজরচাষি জাহিদ, পাবনার পেঁপেচাষি বাদশা, যশোরের গদখালির ফুলচাষি শের আলী সরদার, ঈশ্বরদীর কুলচাষি ময়েজ, চট্টগ্রামের নাহার এগ্রো ফার্মের মালিক রকিবুর রহমান টুটুল, সীতাকুণ্ডের টমেটো চাষি মোহাম্মদ আলী, পাবনার আনসার আলীর কার্যক্রম অন্যতম। এসব প্রচারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অন্য কৃষকরা এসব দেখে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।
এ বিষয়ে এটুআই প্রকল্পের স্থানীয় উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সুপর্ণা রায় সমকালকে বলেন, সরকার মনে করছে দেশে বাণিজ্যিক কৃষির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করে অনেকে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। এজন্য অন্য কৃষকসহ নতুন উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিক কৃষি কাজে আগ্রহী করে তুলতে সফল কৃষকদের কার্যক্রম প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোশারফ হোসেন বলেন, বাণিজ্যিক কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তেলবীজ, মসলা, সবজি, ফল, গরু, মাছ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা ব্যাপক। এজন্য সরকার কৃষকদের সহযোগিতাও করছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, বাণিজ্যিক কৃষি কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বাইরের বাজারের জন্য কৃষকদের বাণিজ্যিক কৃষি কার্যক্রমে আগ্রহী করে তুলতে তিনটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। অনেক সুপারশপের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সম্পৃক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।
এটুআই প্রকল্পে যেসব কৃষকের সাফল্য প্রচার করা হয়েছে তাদের বাইরেও শত শত কৃষক রয়েছেন যাদের সাফল্যও আকাশছোঁয়া। নাটোরের পাবনাপাড়ার আতিকুর রহমান। ডেন্টাল মেডিকেলের এই ছাত্রের ৮০ বিঘা জমিতে পেয়ারার চাষ। বছরে ৬৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন তিনি। আতিকুর রহমান একবার ‘শ্রেষ্ঠ কৃষক’ হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার।
পিরোজপুরের খালিশাখালী গ্রামের রফিক ভূমিহীন থেকে বর্তমানে স্বাবলম্বী কৃষক। অন্যের জমি লিজ নিয়ে সবজি ফলিয়ে তিনি এখন বছরে লাখ টাকা আয় করছেন। পটিয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল আজিজ মাছ চাষ করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। পাবনার ঈশ্বরদীর আবদুল জলিল কিতাব এক বিঘা জমিতে ১০টি লিচু গাছ দিয়ে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ৬৫ বিঘা জমিতে লিচু চাষ করেন। এ জেলার বরইচড়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ধনে চাষ করে ভূমিহীন থেকে এখন কোটিপতি।