বেকারদের পথ দেখাচ্ছেন এমদাদুল
- লিডারশিপ ডেস্ক
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা সদরের রনসিঙ্গার গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য এমদাদুল হক পিতলের রুলিবালা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়ে এলাকায় এখন বেকার অসহায় অস্বচ্ছল যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। এমদাদুলের কাছ থেকে কাজ শিখে তার কারখানাতেই কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ৫/৬হাজার টাকা আয় করে শ্রমিকরাও পরিবারের অভাব-অনাটন ঘুচিয়ে বেশ ভালই আছে।
রুলিবালা তৈরি করে তিনি একাই স্বাবলম্বী হননি তার এই কর্মকান্ড দেখে উৎসাহী হয়ে এলাকার আরও শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েরা এই পেশায় আকৃষ্ট হয়ে বেকারত্বের অভিশাপ ঘুচিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে অনেকই। আগামীতে সরকারী সহযোগীতা পেলে তিনি আরও বড় ধরণের পিতলের রুলিবালা তৈরির কারখানার কর্ম পরিধি বৃদ্ধি করবেন। তিনি মনে করেন, এরকম ব্যবসায় একদিকে এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে অন্য দিকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় তার কারখানার তৈরি পিতলের রুলিবালা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
রাণীনগর উপজেলা সদরের রনসিঙ্গার গ্রামের মো. বরকত আলী শাহ’র পাঁচ ছেলে মেয়ের মধ্যে এমদাদুল হক সবার বড়। পরিবার পরিজনের তাগিদে উচ্চ বিদ্যালয়ের গন্ডী পাড় না হতেই নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা চলাকালীন সময়ে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন। সফলতার সঙ্গে চাকুরী জীবন শেষে ২০১৩ সালে অবসর গ্রহনের পর শুধুমাত্র পেনসনের উপর নির্ভরশীল হয়ে না থেকে কিছু একটা করতে হবে এমন চিন্তা করে এমদাদুল হক তার এক ঘনিষ্ট জনের পরামর্শক্রমে স্ত্রীকে নিয়ে নাটোর, কুষ্টিয়া, সৈয়দপুর, পাবর্তীপুর সহ বেশ কয়েক জায়গায় পিতল দিয়ে নানা ধরণের কারুকার্য খচিত রুলিবালা তৈরীর প্রশিক্ষন গ্রহন করে স্বামী-স্ত্রী দু-জনে মিলে নিজ বাড়ির একটি ঘরে প্রাথমিক ভাবে “এমদাদ বালা ঘর” নাম দিয়ে একটি কারখানা খুলে। ঢাকা ও বগুড়া থেকে কিছু রুলিবালা তৈরির উপকরণ কিনে নিয়ে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করেন তিনি।
মুনাফা ভাল হওয়ায় শুরুতেই খুলে যায় তার ভাগ্যের চাকা। শুধু নিজের ভাগ্য উন্নয়ন নয় বর্তমানে এমদাদুলের কারখানায় উপজেলার পশ্চিম বালুভরা, খট্টেশ্বর, রনসিঙ্গার, রাণীনগর বাজার সহ বিভিন্ন গ্রামের অসহায় অস্বচ্ছল হতদরিদ্র বেশকিছু বেকার নারী-পুরুষ তার নিকট থেকে কাজ শিখে নানা জায়গায় চলে গিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে এমদাদুলের কারখানায় প্রায় ৭৫ জন যুবক-যুবতী ও নানা বয়সের ছেলে মেয়েরা দিনভর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এমদাদ বালা ঘরে কর্মরত শ্রমিক সাবিনা আক্তার (৩২) জানান, আমি সংসারের সকল কাজ কর্ম শেষে এখানে কাজ নকশার কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ৫/৬ হাজার টাকা রোজগার করি। তাতে স্বামির পাশা-পাশি সংসারে আমিও এখন অনেক সহযোগিতা করতে পারি।
এমদাদ রুলিবালা কারখানার স্বত্তাধিকারি সাবেক সেনা সদস্য এমদাদুল হক জানান, বর্তমানে আমার কারখানায় তৈরী পিতলের রুলিবালা মানসম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন শো-রুমের মালিকরা আগাম অর্ডার দিয়ে মাল নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি জোড়া রুলিবালা নকশা ও মান ভেদে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রয় হয়। এই ব্যবসায় অনেক পুজি লাগে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও আমার বাড়ি-ঘর দেখে উচ্চ সুদে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যবসা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছি।