শামছুন্নাহার এখন স্বচ্ছল
- লিডারশিপ ডেস্ক
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মান্দ্রাইন গ্রামের শামছুন্নাহার যেন কয়েক বছর আগের সেই আধপেটা খেয়ে থাকা দিশেহারা শামছুন্নাহার নন। একটা সময় যাঁর কিছুই ছিল না, ছেলেমেয়ে নিয়ে অভুক্ত দিন কাটাতে হয়েছে। আজ তাঁর জমি, বাড়ি সবই আছে। এ সবই সম্ভব হয়েছে তাঁর অদম্য মনোবল ও কঠোর শ্রমের মধ্য দিয়ে।
এ গ্রামেই এক নিঃস্ব পরিবারে শামছুন্নাহারের বিয়ে হয়েছিল খুব ছোট বয়সে। তিনি দুই সন্তানের মা। ২০০৯ সালে তাঁর স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। একদিকে সংসারে খাবার জোগাড়, অন্যদিকে স্বামীর চিকিৎসার দেনা শোধের চাপে শামছুন্নাহারের তখন দিশেহারা অবস্থা। পরের বাড়িতে আর খেতে–খামারে কাজ করে, খেয়ে না–খেয়ে কোনো রকমে দিন চলতে থাকে।
শামছুন্নাহারের দিন বদলায় ২০১১ সালে ব্র্যাকের অতিদরিদ্র কর্মসূচিতে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। এই কয়েক বছরে নিজের জমি, বাড়ি, সবজির বাগান করেছেন। কয়েকটি গরু–ছাগলও হয়েছে তাঁর। দরজির কাজ শিখেছেন। নিজের সেলাই মেশিনে কাজ করেন, ভালো কাজ করার জন্য বেশ নামও হয়েছে তাঁর।
এখন গ্রামের স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সদস্য তিনি। অনেক সাফল্য ও সম্মান এলেও দুঃসময়কে ভোলেননি। তাই চেষ্টা করেন সবজি চাষ, সেলাই শিখিয়ে গ্রামের অভাবী নারীদের পাশে দাঁড়াতে।
তবে তাঁকে অন্য অনেকের চেয়ে যা আলাদা করেছে তা হলো, শিশুদের জন্য লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে তাঁর উদ্যোগ। শিক্ষকদের সঙ্গে সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে কথা বলার মধ্য দিয়ে তিনি বুঝতে পারেন স্কুলের বাইরেও শিশুদের পড়ায় সাহায্য দরকার। এ জন্য তিনি পাড়া–প্রতিবেশী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ক্লাস চালুর উদ্যোগ নেন। গ্রামের উন্মুক্ত স্থানে আয়োজিত এসব ক্লাসে পড়ান স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকেরা। স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে এমন পাঠসহায়ক ক্লাস মান্দ্রাইনের দেখাদেখি আশপাশের গ্রামেও শুরু হয়েছে। শামছুন্নাহার সেই কৃতিত্ব গ্রামের সবার সঙ্গে হাসিমুখে ভাগ করে নিয়েছেন।