জাতিসংঘ পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান
- লিডারশিপ ডেস্ক
জার্মানিভিত্তিক সংস্থা সোলার সেয়ার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা সমিতি নামে একটি সংগঠন সঞ্চালন লাইনের সাহায্যে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করার একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। ওই প্রকল্প থেকে সাতটি পরিবার প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করা হয়।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনের চর সাকিম আলী মাদবরকান্দি গ্রামে এমন একটি প্রকল্প চালু করার কারণে সোল সেয়ার ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা সমিতি এবং ইটকল নামের সংস্থাকে জাতিসংঘ জলবায়ু পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা সমিতির ব্যবস্থাপক সোহরাব হোসেন জানান, জার্মানিভিত্তিক সংস্থা সোল সেয়ার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে সঞ্চালন লাইনের সাহায্যে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রকল্প চালু করেছে। ওই গ্রামের আটটি পরিবার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে। সেখানে ১০০ ওয়াটের দুটি প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। প্যানেল থেকে আটটি পরিবারে সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত আটটি মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
ওই বিশেষ মিটারের মাধ্যামে একজন গ্রাহক আরেকজন গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। মিটারে সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত এসডিকার্ড স্থাপন করা হয়েছে। ওই কার্ড মোবাইলে ভরে মিটার রিচার্জ করা হয়। আমাদের একটি ১০০ ওয়াটের প্যানেল তাদের (আটজন গ্রাহকের) বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করছে।
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনের চর সাকিম আলী মাদবরকান্দি গ্রামের কৃষক সালাম মাদবর। ২০১৩ সালে বাড়িতে একটি ৫০ ওয়াটের সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত সঞ্চালন লাইনের সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প চালু করা হলে তিনি প্রতিবেশী রাশেল মাদবরের বাড়িতে একটি সংযোগ দেন। রাশেল মাদবর প্রতিমাসে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মিটারে রিচার্জ করেন। এর বিনিময়ে একটি লাইট ও একটি ফ্যান ব্যবহার করতে পারছেন।
সেনের চর সাকিম আলী মাদবরকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা সমিতি গ্রামের আবুল কালাম মাদবরের ঘরে একটি ১০০ ওয়াট সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করেছে। ওই প্যানেল থেকে ছয়টি পরিবারে সঞ্চালন লাইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরেই আলাদা সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি পরিবারই ঘরে টেলিভিশন, ফ্যান ও একাধিক বাতি লাগিয়েছেন। সালাম মাদবরের ঘরে আরেকটি ১০০ ওয়াটেও প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। ওই প্যানেল থেকে তিনি পানি উত্তোলনের পাম্প মেশিন ও ধান থেকে চাল মাড়াইয়ের মেশিন চালান। তার মিটার থেকে প্রতিবেশী রাশেল মাদবরের ঘরে একটি সংযোগ দিয়েছেন। সালাম মাদবর বলেন, আমি ৫০ ওয়াটের একটি প্যানেল বসিয়েছি। প্রতিদিন এত বিদ্যুৎ আমার প্রয়োজন হয় না। বিশেষ মিটারের মাধ্যমে আরেকটি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সে আমার কাছ থেকে কার্ডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কিনে নিচ্ছে। উপকূলীয় বিদ্যুতায়ন ও মহিলা সমিতি ১০০ ওয়াটের একটি প্যানেল আমার ঘরে বসিয়েছে। যেটি দিয়ে ধানমাড়াই, রান্নার চুলা জ্বালানো ও পানির পাম্প চালানো যায়। সেনের চর সাকিম আলী মাদবরকান্দি গ্রামের ট্রাকচালক রাশেল মাদবর। সংসারে আর্থিক সংকট থাকায় ঘরে সোলার প্যানেল স্থাপন করতে পারেননি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি প্রতিবেশী সালাম মাদবরের বাড়ি থেকে সঞ্চালন লাইনের সাহায্যে একটি সংযোগ নেন। সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। প্রতি মাসে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় একটি লাইট ও একটি ফ্যান ব্যবহার করছেন। রাশেল মাদবরের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ, একসঙ্গে এতগুলো টাকা খরচ করে সোলার প্যানেল বসাতে পারিনি। বিশেষ মিটার বসানোর পর আমি সংযোগ নিয়ে লাইট ও ফ্যান ব্যবহার করছি। প্রতি মাসে ৩০০ টাকা কার্ডের মাধ্যমে রিচার্জ করে রাখি। টাকা শেষ হয়ে গেলে লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জার্মানিভিত্তিক সংস্থা সোল সেয়ারের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মুরাদ হোসেন বলেন, দুর্গম গ্রামে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎসেবা দেওয়ার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে সঞ্চালন লাইনে প্রি-পেইড মিটারের ব্যবহার চালু করা হয়েছে। আমাদের প্রকল্পটি সফল হয়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করা হবে।
এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সঞ্চালন লাইনের সাহায্যে সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করে গ্রাহকরা সৌরবিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন। প্রকল্পটির জন্য আমরা জাতিসংঘ জলবায়ু পুরস্কার পাচ্ছি।