সফল হতে সমালোচনা সইতে হয় : কেটি পেরি
- লিডারশিপ ডেস্ক
বিশ্বের গণমাধ্যমে সুপরিচিতি কেটি পেরি নামে। বয়সে তারুণ্য থাকলেও ভাঙছেন আর গড়ছেন রেকর্ডের খতিয়ান। বয়স ২৯-এ পা রাখতেই এ পপ তারকার অ্যালবাম ‘প্রিজম’ মুক্তি পায়। বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো এ অ্যালবাম ১০ লাখ কপি বিক্রির তালিকায় জায়গা করে নেয়। রাতারাতি বনে যান সুপারস্টার পপ তারকা। এক অ্যালবামেই বিশ্ব সংগীতের কোটি কোটি ভক্তের মন কেড়ে নেয় তরুণ এ সংগীত শিল্পী।
২০১৫ সালে এক নম্বরে থাকা সংগীত তারকা টেইলরকে পেছনে ফেলে ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেন। উঠে আসেন নতুন আলোচনায়। মুক্তির মাত্র ১১ সপ্তাহেই অ্যালবাম ‘প্রিজম’ ১০ লাখ কপি বিক্রির মাইলফলক স্পর্শ করে। এটি প্রথম নয়, ‘প্রিজম’ হচ্ছে ১০ লাখের মাইলফলক স্পর্শ করা কেটির তৃতীয় অ্যালবাম। এর আগে কেটির ‘ওয়ান অব দ্য বয়েজ’ (২০০৮) এবং ‘টিনেজ ড্রিম’ (২০১০) অ্যালবাম দুটিও ১০ লাখের মাইলফলকে পৌঁছায়। বিশ্ব মিউজিকের টপচার্টে সব সময়ই রয়েছে কেটির গান।
ব্যক্তিজীবনে কেটির টানাপোড়েন চলমান। তবে ক্যারিয়ারকে ঠিকই সামলে চলেছেন তিনি। ২০১১ সালে স্বামী রাসেল ব্রান্ডের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় কেটির। ওই সময় বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এ ‘ফায়ারওয়াক’ খ্যাত তারকাকে। কারণ হঠাৎ করেই কেটিকে ডিভোর্স দিয়ে বসেন রাসেল। এমন পরিস্থিতি সামলে উঠতে না পেরে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন ২৯ বছরের কেটি। ব্যক্তি জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোই ‘গ্রেস অব গড’ গানটি লিখতে উৎসাহিত করে কেটিকে।
গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেটি পেরি জানান, জীবনে যে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে গানটি তারই স্বরূপ। অবচেতন মনে প্রশ্ন করতাম নিজেকে, আমি কি এমন কষ্ট সহ্য করতে চাই, আমার কি বেঁচে থাকা উচিত, আমার কি অধিকার-এমন হাজারো প্রশ্ন মনের জানালায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ে।
গায়িকা কেটির মতে, তাঁর সব গানই বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। নিজের জীবনের ঘটনা সাজিয়েই গান রচনা করেন তিনি। গানের মধ্যেই সব ঘটনার প্রমাণ রাখতে চান তিনি। তার গাওয়া গানের মধ্যেই তার সম্পর্কে সত্যিকারের তথ্য জানতে পারেন ভক্তরা।
হালের তরুণ পপতারকা জাস্টিন বিবারকে পেছনে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলিব্রেটির স্থানে পৌঁছেছেন কেটি। বর্তমানে জাস্টিনের চেয়ে কেটির টুইটার ভক্ত বেশি। টুইটারে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলিব্রেটি কেটি। অনলাইনে ভক্তের সংখ্যা এত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় কেটি বলেন, আমি বরাবরই যারা আমাকে অপছন্দ করেন তাদের এড়িয়ে চলি। একজন ব্যক্তি কখনও সবাইকে খুশি করতে পারেন না। এমন চেষ্টা করলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয়।
বিয়ে করলে না-কি ক্যারিয়ার শেষ। এ কথা প্রচলিত। অথচ গায়িকা কেটির ক্ষেত্রে ঘটছে ঠিক উল্টোটা। ব্রিটিশ কমেডিয়ান রাসেল ব্র্যান্ডকে বিয়ে করার পর থেকে কেটি পেয়েছেন একের পর এক সাফল্য। কেটির টিনএজ ড্রিমস অ্যালবামের ‘লাস্ট ফ্রাইডে নাইট’ গানটি বিলবোর্ডের টপ চার্টে উঠে আসে।
মুক্তির প্রথম দিন থেকেই কেটির গানগুলো বিলবোর্ডে হট এবং পপ গানের চার্টের শীর্ষ তালিকায় সপ্তাহের পর সপ্তাহ অবস্থান করে। এমনকি এখনও বেশ কিছু গান অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ছাড়াও বিভিন্ন দেশে ভক্তসিক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এ অ্যালবামের ‘ইটি’ গানটিও ইয়াহু ভিডিও গানের শীর্ষে ছিল দীর্ঘদিন।
গানের কারণে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কেটিকে ভালোবাসেন। এ কথা তিনি নিজের মুখেও বলেছেন। হোয়াইট হাউজের অনুষ্ঠানে বারাক ওবামা বলেন, ‘তাঁর অন্যতম প্রিয় মানুষদের একজন কেটি। তিনি তাকে খুবই ভালোবাসেন।’ স্পেশাল অলিম্পিক এবং তার ফাউন্ডারের ৪৬ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ নৈশভোজে গান গাওয়ার জন্য পপগায়িকা কেটিকে আমন্ত্রণ জানান ওবামা।
অনুষ্ঠানে কেটিকে উপস্থিত সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বারাক ওবামা বলেন, ‘কেটি খুবই ভালো একজন মানুষ। ওর মায়ের সঙ্গে কথা হওয়ার পর বুঝলাম কেন তিনি এতো ভালো মানুষ।’
হালে কেটির জনপ্রিয়তা দেখে গানের আয়োজকেরাও ছুটছেন তাঁর পেছনে। এদিকে কেটিও আয়োজকদের নিরাশ না করে বিভিন্ন ট্যুরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গান নিয়ে ট্যুর করে যাচ্ছেন কেটি। কেটির এহেন সাফল্য দেখে হালের বাকি গায়িকারা চটেছেন। এমনকি অনেকে কেটির সঙ্গে ন্যূনতম সৌজন্যমূলক কথাও বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু এসব নিয়ে কোনো ফুরসৎ নেই কেটির।
টুইটার, ফেসবুক আর নিজের ব্যক্তিগত সাইটের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন কেটি। আজ আমি যা, তা শুধু ভক্তদের জন্যই। আমার ভক্তরা বেশ আগ্রহ নিয়ে গান শোনার অপেক্ষায় থাকেন। তাই আমাকে নিয়ে কে কি বলল তা আমলে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। নিজের কাজ দিয়েই সমালোচনার সাফ জবাব দিতে কেটি কোনোভাবেই বিচলিত হন না। সাফল্য পেতে আর ধরে রাখতে সমালোচনাকে ধারণ করতে হয়-এমন নীতিই বিশ্বাস করেন কেটি।