গুগল-ইয়াহুর ত্রুটি ধরে পুরস্কার জয়
- লিডারশিপ ডেস্ক
কৈশোরের গণ্ডি পেরোননি এখনো দু’জন। বয়স মাত্র ১৬ ও ১৮ চলছে। এমন অল্প বয়সেই বিশ্বের সেরা ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগল-ইয়াহুতে বাগ বা ত্রুটি ধরে দিয়ে বাংলাদেশের দুই কিশোর অর্জন করেছেন বিশেষ অর্থ-পুরস্কার ও স্বীকৃতি। এর আগে এত অল্প বয়সে পৃথিবীর কোনো দেশের মানুষ ইয়াহু-গুগলে ত্রুটি ধরতে পারেনি। অর্থনীতি, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধুলা থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তিতে যে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে এটি তারই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। অন্যজন জোবায়ের আল নাজি, যিনি সদ্য এইচএসসির চৌকাঠ পেরিয়েছেন। এই দুই কিশোর মূলত ‘বাগ বাউন্টি’ বা এথিকাল হ্যাকিং বা বাগ হান্টিংয়ের মাধ্যমে গুগল ও ইয়াহুতে ত্রুটি ধরে জিতে নিয়েছেন অর্থ-পুরস্কার।
মৃত্যুঞ্জয় ইয়াহুতে খুঁজে পান একটি মারাত্মক বাগ বা ত্রুটি, যা তিনি ইয়াহু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন এবং ইয়াহু সেটি সমাধান করার পর মৃত্যুঞ্জয়কে প্রদান করে ১০০০০ ডলার, যা প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। এ পর্যন্ত এত কম বয়সে ইয়াহু থেকে এত টাকা পুরস্কার বিশ্বের কেউ অর্জন করেনি।
অন্যদিকে জোবায়ের আল নাজি ত্রুটি ধরেছেন বর্তমান বিশ্বের প্রধান সার্চ ইঞ্জিন গুগলের। তিনি গুগলে টানা তিনটি বাগ বা ত্রুটি চিহ্নিত করার পর তা গুগল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তার তৃতীয় বাগটি ছিল মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে গুগল সেই বাগ সমাধান করার পর জোবায়েরকে প্রদান করে ১৩৩৭ ডলার বা ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার। ১৮ বছর বয়সে জোবায়ের এই ত্রুটি ধরেন। এত অল্প বয়সে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে তিনটি ত্রুটি ধরার নজির আর নেই!
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার অর্গানাইজেশন ‘সার্ভারঘোস্ট বাংলাদেশ’। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ইথিকাল হ্যাকিংকে তুলে ধরতে এবং জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছে। সার্ভারঘোস্ট সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে কাজ করে। এদের পরিশ্রম আর মেধার বদৌলতে আসছে এমন বিভিন্ন রেকর্ড। এই দলেরই সক্রিয় সদস্য মৃত্যুঞ্জয় ও জোবায়ের।
মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা একজন প্রবাসী, মা গৃহিণী। প্রফেশনাল স্টুডেন্ট বাগ-বাউন্টিতে মৃত্যঞ্জয়ের কাজের বয়স খুব বেশি দিন নয়। ২০১৫-এর শেষের দিকে নবম শ্রেণি থেকে তিনি সিকিউরিটি নিয়ে কাজ শুরু করেন সার্ভারঘোস্ট বাংলাদেশ টিমের সঙ্গে এবং এই টিমের সঙ্গেই ২০১৬ সালের জুলাই মাসে মৃত্যুঞ্জয়ের বাগ-বাউন্টির যাত্রা শুরু হয়। আর এর ৪ মাসের মাথায় তিনি ইয়াহুতে খুঁজে পান মারাত্মক একটি ত্রুটি। শুধু তা-ই নয়। এই ক’মাসেই তিনি Intel, Flexlist, Veris ESET, Envoy, Bitdefender ইত্যাদি আরও কিছু নামকরা সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
জোবায়ের আল নাজি কিশোরগঞ্জের সন্তান। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম ইন্টারেনেটর সঙ্গে পরিচয় জোবায়েরের। স্কুল পেরিয়ে কলেজ পর্যন্ত চলে তার ওয়েব ডেভেলপিংয়ের নেশা। ২০১৫ সালে এসে জোবায়েরের হ্যাকিংয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে। ‘সার্ভারঘোস্ট বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু করেন। এভাবেই একসময় খুঁজে পান গুগলের ত্রুটি। প্রথম বাগ বা ত্রুটি পাওয়ার পর তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় অনেক। টানা সময় ব্যয় করতে থাকেন তিনি। পরিশ্রমের ফলও মিলে যায়। ৪ মাসের মাথায় গুগলে টানা তিনটি ত্রুটি ধরে ফেলেন এবং তা গুগল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।