ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে বাংলাদেশি দুই তরুণ
- লিডারশিপ ডেস্ক
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এবারের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে। ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সভায় ২০১৭ সালে নেতৃত্বের জন্য ৫টি চ্যালেঞ্জের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। এগুলো হলো বৈশ্বিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা, ‘শেয়ারড আইডেন্টিটি’র ধারণা পুনর্বহাল করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করা, পুঁজিবাদের সংস্কার ও ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’-এর প্রস্তুতি। এবং ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ সভায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে এই প্রজন্মের দুই গ্লোবাল শেপার সাইফ কামাল ও সোহারা মেহরোজ শচীকে নির্বাচন করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। আলোচনার বিষয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে দায়িত্বশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বের ভূমিকা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম হলো জেনেভার কলোগনি ভিত্তিক সুইজারল্যান্ডের একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন। এটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে সুইস সরকার স্বীকৃত। এই সংস্থাটির উদ্দেশ্য হলো—ব্যবসা, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত ও সমাজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অবস্থার উন্নতির মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং শিল্প খাতের এজেন্ডাগুলো বাস্তবরূপ দেওয়া। এই ফোরামটি প্রতিবছর জানুয়ারিতে ডাভোসে বার্ষিক সভা আয়োজনের জন্য পরিচিত। চার দিনের এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ হাজার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক নেতা, মনোনীত বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য একত্রিত হবেন। তিন হাজার অংশগ্রহণকারীর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাইরে থেকে আসবেন এবং ব্যবসায়ী ও সরকারের বাইরে এক-তৃতীয়াংশ অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তার প্রতিনিধিত্ব করবেন।
সাইফ কামাল
গ্লোবাল শেপার ও প্রতিষ্ঠাতা ‘তরু’
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোন স্বাধীন সামাজিক উদ্ভাবনী সংগঠন ‘তরু’-এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন সাইফ কামাল। ‘তরু’ মূলত সমাজের নতুন উদ্ভাবকদের জন্য এমন একটি ভরসার স্থল, যেখানে তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে চলার মতো সহযোগিতা পায়। সাইফ একজন স্বপ্নবাজ তরুণ, যিনি ক্রমবর্ধমান প্রভাবে বিশ্বাস করেন এবং এমন সব নেতৃত্বের সঙ্গে এগিয়ে চলেন, যারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে নিজেদের ছাপ রাখছে এবং সমাজের মানুষ তাদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সামাজিক সমতা এবং প্রবল গতিতে এগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলানোর লক্ষ্যে সামাজিক উদ্যোক্তা এবং টেকনোলজি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে ‘তরু’ কর্তৃক শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং শ্রমিক সংঘ এই তিন সেক্টরের মোট চারজন তরুণ উদ্যোক্তা সহায়তা পেয়েছেন, যাদের সঙ্গে সমাজের প্রায় ৫ লক্ষ সাধারণ মানুষের জীবিকা অর্জন জড়িয়ে আছে। সাইফ সামাজিক উদ্যোগে তার সক্রিয় ভূমিকার জন্য চীনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সামার দাবোস-২০১৫ নিউ চ্যাম্পিয়নের খ্যাতি লাভ করেন। মিডিয়া যোগাযোগ ও কৌশল, এফএমসিজি, লিডারশিপ ও এক্সিকিউটিভ সার্চে তার ১০ বছরের গ্লোবাল ক্যারিয়ার। ব্রিটিশ হাই কমিশনের ইয়ং লিডারস বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। সাইফ একই সঙ্গে ঢাকা ট্রিবিউন, দ্য হিন্দু, সাউথ এশিয়া জার্নাল এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের সঙ্গে কাজ করছেন। একজন গ্লোবাল শেপার হিসেবে সাইফ চান দেশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে, যাতে বাংলাদেশি তরুণরা তাদের আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে সহজেই।
সোহারা মেহরোজ শচী
গ্লোবাল শেপার
সোহারা ইয়াল ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর কাজ করে যাচ্ছেন পরিবেশ নিয়ে। কোপ ২১-এ অংশ নেওয়ার জন্য ২০০০ জন অ্যাপ্লিকেশন করেন ক্লাইমেট ট্র্যাকার ফেলোশিপে। সেখান থেকে ১১ জন বিজয়ী হন। সোহারা সেই ১১ জনের একজন। এ সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পাবলিকেশনের জন্য অনেক আর্টিকেলও লেখেন। বর্তমানে তিনি সাউথ এশিয়া হাব অব ক্লাইমেট ট্র্যাকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি তরুণ সাউথ এশিয়ান সাংবাদিকদের সাহায্য করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের আর্টিকেল প্রকাশ করার ব্যাপারে। তিনি তরুণদেরকে পরিবেশ নিয়ে সচেতন করার কাজও করে যাচ্ছেন সমান তালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সামাজিক ও পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে সোহারা ইয়েল’স থিয়েটার ট্রপসের সঙ্গে অনেক নাটকও করেছেন। আমেরিকা, কোস্টারিকা ও যুক্তরাজ্যেও বিভিন্ন চ্যারিটি কনসার্টেও গান গেয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। সোহারা এখন কাজ করছেন ইউএনডিপির সঙ্গে জলবায়ুর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের উন্নয়নের জন্য। ২০১৬-তে সোহারা ছয়টি আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ অর্জন করেন। বর্তমানে ঢাকা হাবের ভাইস কিউরেটর সোহারা এশিয়ার তরুণ পরিবেশ সাংবাদিকের অ্যাওয়ার্ডও একইবছর জিতে নেন।