নরসুন্দর থেকে সম্পদশালী
- লিডারশিপ ডেস্ক
খুব গরিব ঘরে জন্মেছিলেন রমেশ। বাবা ছিলেন একজন সাধারণ নরসুন্দর। ১৯৭৯ সালে মারা গেলেন বাবা। তখন রমেশের সবে সাত বছর বয়স। মা লোকের বাড়ি ঠিকে কাজ করে সংসার চালাতেন। ব্রিগেড রোডে বাবার একটা সেলুন ছিল। কাকা ওটা চালানোর জন্য নিয়েছিলেন। দিনে পাঁচ টাকা করে দিতেন। মাত্র পাঁচ টাকা। সেকালে পাঁচ টাকায় কিছুই হতো না। সে, ভাইবোনদের দেখভাল খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে লেখাপড়া কিছুই দৈনিক ৫ টাকায় হওয়া সম্ভবই ছিল না। ফলে ভীষণ কষ্টে দিন কাটত। বেঁচে থাকার জন্য দিনে শুধু একবেলা খেত রমেশের পরিবার। তখন রমেশবাবু স্কুলে পড়ে দুটো পয়সা রোজগার করার জন্য বিভিন্ন রকম কাজ করতেন। বাড়ি বাড়ি কাগজ দিতেন, দুধের বোতল পৌঁছে দিতেন আর যা যা করা সম্ভব ছিল সবই করতেন। মুখে রক্ততুলে মা পরিশ্রম করতেন। মায়ের পরিশ্রম লাঘব করার অনেক চেষ্টা করতেন রমেশ। এভাবেই কোনোক্রমে দশ ক্লাস টপকে গেলেন।
১৯৯০-র কোনো এক সময়। সবে একাদশ শ্রেণির ছাত্র তিনি। হঠাৎই তার কাকা তাদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। মায়ের সঙ্গে কাকার তুমুল ঝগড়া বাধল। সেদিন রমেশ স্থির করলেন, আর নয়। মাকে জানিয়ে দিলেন, এবার থেকে বাবার সেলুনটা তিনিই চালাবেন। কিন্তু মা বলছিলেন পড়াশোনোকেই গুরুত্ব দিতে। যাহোক সেই শুরু। সকালে সেলুনের কাজ আর রাতে কলেজ। ব্যবসা শিখতে শুরু করলেন। কলেজের পর ফের সেলুনে যেতেন। রাত ১টা পর্যন্ত খোলা রাখতেন সেলুনটা। তখন থেকেই লোকজন তাকে নাপিত বলে ডাকে। এগারো ক্লাসে ভর্তিও হয়েছিলেন একটা সান্ধ্য কলেজে। আর সেই সময়ই একটা বড় পরিবর্তন এলো। ১৯৯৩ সালে একটা পুরনো মারুতি ভ্যান কিনলেন তিনি। তার কাকা একটা ছোট গাড়ি কিনেছিলেন। তার থেকে ভালো গাড়ি কিনব এরকম ভেবেই তিনিও কিনে ফেললেন। কিছু জমিয়েছিলেন সেই টাকা আর কিছু টাকা ধার নিয়েই কিনে ফেলেছিলেন প্রথম গাড়িটা।
১৯৯৪ সাল থেকে পুরোদস্তুর গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসায় লেগে পড়েন তিনি। প্রথম যে সংস্থায় গাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন সেটা ছিল ইনটেল। ধীরে ধীরে আরও গাড়ি এই ব্যবসায় লাগাতে শুরু করলেন রমেশ। ২০০৪ পর্যন্ত তার কাছে পাঁচ-ছয়টা গাড়িই ছিল। সেলুনের ব্যবসাটা ছেড়ে দিলেন। এদিকে গাড়ির ব্যবসাও তেমন রমরমা আর ছিল না। কেননা সবার কাছেই ছোট গাড়ি ছিল। রমেশ ভাবলেন এবার বিলাসবহুল দামি গাড়ি কিনতে হবে। ঝুঁকিটাও নিলেন। আর ২০০৪-র মধ্যে তিনি ২০০টি গাড়ির মালিক। ৭৫টি বিলাসবহুল গাড়ি আছে তার। কী নেই অডি থেকে শুরু করে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, দশ আসনের বিলাসী ভ্যান। এমনকি বিশ্বের ধনকুবেরদের ঈর্ষা জাগানো রোলস রয়েসও কিনে ফেলেছেন রমেশ।