হাবিবের ইচ্ছশক্তি
- লিডারশিপ ডেস্ক
তার এক হাত পুরো নেই। অন্য হাত কনুই পর্যন্ত। কিন্তু উচ্চশিক্ষা অর্জনে অদম্য ইচ্ছা রয়েছে। সেই ইচ্ছাশক্তির জোরে বর্তমানে সে রাঙ্গুনিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
অদম্য এ তরুণ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজা নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান (১৭)। বাড়ি থেকে আট কিলোমিটার দূরে প্রতিদিনই কলেজে যায় হাবিবুর।
হাবিবের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন রাঙ্গুনিয়া থেকে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে রাঙামাটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও অন্যটি থেঁতলে যায়। থেঁতলে যাওয়ার কারণে এক হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। বাবা মোহাম্মদ রমজান আলী অটোরিকশা চালান। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও কখনো দমে যায়নি। আমরা তাকে পড়ালেখার খরচ দিতে না পারলেও তার মেধার কারণে সবার সহযোগিতায় সে তার পড়ালেখা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে।’
ছেলে হাবিবুর রহমানের শিক্ষার জন্য মা রাশেদা বেগমের আগ্রহ বেশি। তিনি বলেন, তার দুই হাত না থাকলেও ছোটবেলা থেকে সে সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করত। প্রথম প্রথম সে নিজে জামাকাপড় পরতে পারত না, বই-খাতা নিতে পারত না। সবকিছু তাকে এগিয়ে দিতে হতো। কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও অদম্য আগ্রহ তাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। অন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো সে-ও নিয়মিত কলেজে যায়, কম্পিউটার ব্যবহার করে, মোবাইল চালায়, নিজ হাতে খাওয়া, নিজ হাতে লেখাপড়া, এমনকি ক্রিকেট-ফুটবলসহ শারীরিক কসরতপূর্ণ খেলাধুলায় নৈপুণ্য দেখায়। সে উচ্চশিক্ষিত হতে চায়।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলে, মা-বাবা ও সবার আন্তরিক সহযোগিতায় সে এত দূর এসেছে। কারও বোঝা হয়ে না থেকে সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। ভবিষ্যতে সে একজন দক্ষ প্রকৌশলী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তার কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, হাবিব এসএসসিতে ৪.৮৬ পেয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৬৭ পায়। তাকে উপবৃত্তিসহ সব সুযোগ-সুবিধা কলেজ কর্তৃপক্ষ দেবে।
বেসরকারি সংস্থা উইমেন ইম্পাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড চাইল্ড রাইটসের (অ্যাওয়াক) সমন্বয়কারী সমীর বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অ্যাওয়াক তাঁকে শিক্ষা উপকরণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করে আসছে। ভবিষ্যতেও তাঁর সঙ্গে অ্যাওয়াক থাকবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘সে খুব মেধাবী এবং নিজ হাতে সব করে। যেকোনো প্রয়োজনে তাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।’