বাংলাদেশের ইমরান যুক্তরাষ্ট্রে সফল
- আকেল হায়দার
শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাংলাদেশিরা সম্মান বৃদ্ধি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিভা দেখিয়ে উজ্জ্বল করছে দেশের সম্মানকে। নিজেরা যে কোনো অংশেই কম নয় তা বিদেশিদের চিনতে শিখিয়েছে বাংলাদেশিরা। তেমনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ইমরান খান নিজ মেধা গুণে সম্মানিত করেছে বাংলাদেশিদের।
কথায় আছে- দিনের শুরু দেখেই বলে দেওয়া যায় সারাদিন কেমন যাবে! বাস্তবেও তার প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয় অনেক সফল মানুষের জীবনীতে। স্বপ্নবীজ বুননের গল্পটা প্রোথিত হয়েছিল সেই কৈশোর বয়সেই। স্টু্কলজীবনে মেধাবী ছাত্র ও তুখোড় বিতার্কিক। কিশোর বয়সে বিটিভির এক উপস্থিত স্কুল-বিতর্কে বালক বলেছিল তার মনে লালিত স্বপ্নের কথা। সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চায়। বিলিয়নেয়ার হতে চায়। নিজেকে বিশ্বের সফল ও ধনী মানুষদের কাতারে দেখতে চায়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়, আরও অনেক স্বপ্নবৃত্তান্ত। অদম্য ইচ্ছা আর শিখরে পৌঁছানোর ঐকান্তিক চেষ্টা তার জীবনে তাই সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে খুব অল্প বয়সেই।
বিশ্বের আর্থিক বাজারের প্রাণকেন্দ্র ওয়াল স্ট্রিটে যার নাম এখন সবার মুখে মুখে। কাজ করেছেন জেপি মর্গান, ক্রেডিট সুইস, আলীবাবা ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে কাজ করছেন ‘ভেরিশপ’ নামের ই-কমার্স নিয়ে।
ইমরান খানের জন্ম বাংলাদেশে। ১৯৯৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করে পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের ডেনিয়েল কলেজ অব বিজনেস থেকে ২০০০ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে যোগ দেন স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড উইন্ডোতে। কাজ শুরু করেন ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বিশ্নেষক হিসেবে। ২০০৪ সালে যোগ দেন বৃহত্তম ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক জেপি মর্গান গ্রুপে। নিজের যোগ্যতা আর মেধার উৎকর্ষে মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সে জেপি মর্গানের সর্বকনিষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। সেখানে প্রায় ছয় বছর চাকরি করেন। ২০১১ সালে যোগ দেন আরেক খ্যাতনামা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসে। এবার বিনিয়োগ বিশ্নেষক নন, সরাসরি ব্যাংকিং কার্যক্রমের দায়িত্বে। হেড অব গ্লোবাল ইন্টারনেট ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং খাতে কাজ করেন চার বছর।
তার নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রুপন, গো ড্যাডি, বক্স ও উইবোর মতো সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে আসে। ২০১৪ সালে আলীবাবাকে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসেন তিনি। ইমরানের এই সাফল্য স্ন্যাপচ্যাটকে উৎসাহিত করে তাকে নিজেদের করে নিতে। বিনিয়োগ ব্যাংক ক্রেডিট সুইস থেকে তাকে নিয়ে আসে স্ন্যাপচ্যাট।
স্ন্যাপচ্যাট হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সারাবিশ্বে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পনেরো কোটি, যারা প্রতিদিন শেয়ার করছে প্রায় ছয়শ’ কোটিরও বেশি ভিডিও।
২০১৫ সালে চিফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার হিসেবে পনেরো কোটি শেয়ারের বিনিময়ে তাকে নিয়োগ দেয় স্ন্যাপচ্যাট, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এগারোশ’ কোটি টাকা। তার বেতন ধরা হয় ২ লাখ ৪১ হাজার ডলার। স্ন্যাপচ্যাট যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ইমরানকে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছিল তাদের সেই আকাঙ্ক্ষা একটুও বৃথা যায়নি। ইমরানের পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের ২ মার্চ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় স্ন্যাপচ্যাট, যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। ওই দিন তাদের ১৭ ডলারের শেয়ার বিক্রি হয় দুই হাজার ৪০০ ডলারে, যা মূল্যবৃদ্ধিতে পেছনে ফেলে দেয় বিশ্বের বৃহত্তম যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইন প্রতিষ্ঠান আলীবাবাকে। স্ন্যাপচ্যাটে ২০১৫-২০১৮ পর্যন্ত কাজ করেন ইমরান খান।
ই-কমার্স বাণিজ্যে বিশ্বে রীতিমতো এক অভ্যুত্থানের সূচনা করেন ইমরান খান, যার অন্যতম উদাহরণ স্ন্যাপচ্যাট। স্ন্যাপচ্যাটের পর তিনি বর্তমানে কাজ করছেন ‘ভেরিশপ’ নামের রিটেইল ওয়েবসাইট নিয়ে। ভেরিশপ মূলত আমাজনের মতোই অনলাইন সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, যারা দ্রুততম সময়ে যে কোনো মূল্যমানের পণ্য ফ্রি শিপিং দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
সূত্র: সমকাল