সফল চাষী সাজেদা
সজীব হোসাইন, রংপুর : অর্ধাহারে স্বামী আর তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে মজুরী খেটে যার সংসার চলত আজ তিনি স্বপ্ন দেখেন লক্ষ টাকার। চলতি মৌসুমে খরচ বাদে টমেটো বিক্রি করে চার লক্ষাধিক টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। তাঁর নাম সাজেদা বেগম। দরিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ডাকাতিয়া চরের এই নারী।
প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের বর্গা নেওয়া জমিতে টমেটো চাষ করে এলাকাবাসীর কাছে এখন তিনি বিস্ময়। শুধু টমেটো নয় তাঁর উৎপাদিত ফসলের তালিকায় রয়েছে একাধিক সবজি। সফল চাষী সাজেদা বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে স্থানীয় এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করি। আজ তিন ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি, বসবাসের জন্য জমি কিনেছি, আমার সংসারে আর কোনো অভাব নেই।’
বর্তমানে সাজেদা বর্গা নিয়েছেন ৮ একর জমি। যেখানে বিভিন্ন মৌসুমে সবজি চাষ করে বড় মেয়েকে স্নাতক, মেজ ছেলেকে দশম শ্রেণিতে ও ছোট ছেলেকে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সাজেদা জানান, স্বামী দিনমজুর হওয়ায় পাঁচ সদস্যর সংসার চলত না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করেছেন। তখন কেউ তাঁর খোঁজ রাখেনি তঁদের। বাধ্য হয়ে স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। স্বামীর কর্মসংস্থানের লক্ষে ২০১০ সালে গাইবান্ধার গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের লাইভলীহুড মাইক্রোফাইনান্স কর্মসূচীতে সদস্য হয়ে সঞ্চয় শুরু করেন।
বর্তমানে সাজেদা প্রতিদিন জমি থেকে ৫০ মণ টমেটো উৎপাদিত করছেন। উৎপাদিত টমেটো গাইবান্ধা শহরের কাঁচামালের আঁড়তসহ ঢাকায় বাজারজাত করছেন।
তিনি আরও জানান, ৮ একর জমিতে কপি ও টমেটো চাষে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত কপি ও টমেটো বিক্রি করেছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। জমিতে থাকা টমেটো বিক্রি করে এখনও ৪ লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
সাজেদা সম্পর্কে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, ‘চরের জমিতে বসবাস ও চরের জমিতে টমেটো চাষ করে সাজেদা বেগম আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।’
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাহাজুল ইসলাম জানান, ‘কৃষি ক্ষেত্রে সাজেদা অসামান্য সফলতা দেখিয়েছে। সাজেদাকে দেখে অনেকেই এখন এই পেশার সাথে যুক্ত হয়েছেন।’