মোটর মেকানিকের পাওয়ার টিলার আবিস্কার
আতিকুর রহমান, রাজশাহী: কৃষি প্রযুক্তিতে বিজ্ঞানের আবিষ্কার নতুন কিছু নয়। তবে বিজ্ঞানের সাহচর্য ছাড়াও শুধূমাত্র মেকানিক্যাল জ্ঞান আর পরিশ্রম দিয়েও যে বিশেষ কিছু তৈরি করা যায় তারই বড় প্রমাণ দেখিয়েছেন জয়পুরহাটের মোটর মেকানিক ছামছুল ইসলাম। মাত্র পঁচিশ হাজার টাকায় ৯০ কেজি ওজনের পাওয়ার টিলার তৈরি করে স্থানীয় কৃষকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ছামছুলের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট সদরের ভাদশা ইউনিয়নের মালয়পুর গ্রামে। তিনি জানান, বর্তমান বাজারে ১২ মণ ওজনের একটি বড় পাওয়ার টিলারের মূল্য ১ লাখ ২০-২৫ হাজার টাকার মতো, সেখানে তার এই ছোট পাওয়ার টিলারের দাম পড়ছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা। প্রত্যেক কৃষকই চাইলে একটি করে ছোট পাওয়ার টিলারের মালিক হতে পারবেন।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ছামছুল এই পাওয়ার টিলার তৈরির কাজ শুরু করেন। মাত্র দু’মাসেই তা তৈরি করতে সক্ষম হন তিনি। পাওয়ার টিলারের বর্ণনা দিতে গিয়ে ছামছুল বলেন, এতে ৪ হর্স পাওয়ারের একটি শ্যালোইঞ্জিন ও ৬ ফলাযুক্ত মাটি খননকারী যন্ত্র রয়েছে। বড় পাওয়ার টিলারে কৃষকের এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ পড়ে এক হাজার টাকা, সেখানে এই টিলার ব্যবহার করলে খরচ পড়বে মাত্র দু’শ টাকা।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বড় পাওয়ার টিলারে প্রতি বিঘা জমিতে চাষ করতে ৫ লিটার তেল লাগলেও তার তৈরি পাওয়ার টিলারে লাগবে ২ লিটারের একটু বেশি। সে হিসেবে প্রতিচাষে খরচ হবে মাত্র ৫০ টাকা যা কৃষকের জন্য বেশ লাভজনক হবে। তবে, আকারে ছোট হওয়ায় বড় পাওয়ার টিলারের তুলনায় সময় একটু বেশি লাগবে।
স্থানীয়রা জানান, যেসব জমি এত দিন ধরে চাষের অভাবে পড়ে থাকতো, সেসব জমিতে এবার এই পাওয়ার টিলারে সহজেই চাষ করা যাবে। যারফলে আগের তুলনায় ফসলের উৎপাদন বাড়বে।
জয়পুরহাট সরকারি কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক মো. গোলাম আজম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজলভ্য ও ছোট পরিসরের এই পাওয়ার টিলার আবিস্কার নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। যন্ত্রটি জয়পুরহাটসহ সারা দেশের কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে, জয়পুরহাট জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এজেডএম ছাব্বির ইবনে জাহান জানান, ছামছুল ইসলামের ছোট পাওয়ার টিলার একটি সময়োপযোগী ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর আবিষ্কার। কিন্তু তাঁর এই আবিষ্কারের জাতীয় স্বীকৃতি অর্জনের জন্য গাজীপুরে অবস্থিত ধান ও কৃষি গবেষণার খামার যান্ত্রিকরণ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে ছামছুলকে স্থানীয়ভাবে যাবতীয় সহযোগিতা করার আস্বাস দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।