তাঁরাও ব্যর্থ ছিলেন
শামীম রিমু : যেসব ব্যাক্তি আজ সাফল্যের শিখরে, যাঁদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই প্রতিনিয়ত, তাঁদের জীবনের শুরুটা যে সবসময় চমকপ্রদভাবে ভাগ্যানুকূল ছিল, তা কিন্তু নয়। সাফল্যের পথে বাধা আসে প্রতিনিয়ত, সেসব বাধা-বিপত্তি ও ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করে যাঁরা এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখেন, ইতিহাস তাঁদের ধারণ করে, সফলতা তাঁদের বরণ করে নেয়। বিশ্বসেরা এমন অর্ধশত বিফল ব্যক্তির কথা শুনব আমরা, যাঁদের পথ চলা শুরুই হয়েছিল ব্যর্থতা দিয়ে। তিন পর্বে সমাপ্য প্রতিবেদনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
নোবেল জয় ও দু’বার ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে তার ব্যর্থতার ইতিহাস বিস্তর। স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অকৃতকার্য হন। স্কুল শেষে, রাজনৈতিক ব্যর্থতা তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়ে ওঠে। ৬২ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হবার আগ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নায়ক আব্রাহাম লিংকনের জীবন ছিল ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। সেনাবাহিনীতে পদাবনতি, প্রায় সকল নির্বাচনে পরাজয় ও প্রতিটি ব্যবসায় লোকসান তাঁকে মানসিকভাবে ব্যর্থ করতে পারেনি। অবশেষে তিনি আমেরিকার ষোড়শ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
আজকের টেলিভিশন জগতের প্রতিষ্ঠিত এই মুখ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সবচেয়ে ধনী নারীর তালিকায় স্থান করে নেয়ার আগে কাটিয়েছেন এক কঠোর শৈশব। এমনকি বর্ণবৈষম্যের কারণে টেলিভিশন প্রতিবেদক হিসেবে চাকরিচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আন্তর্জাতিক নায়ক, সিনেটর ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার আগে ট্রুম্যানকেও বরণ করতে হয়েছিল পরাজয়ের মালা। প্রথম জীবনে রেশমী বস্ত্রের ব্যবসায় তাঁকে গুণতে হয়েছিল লোকসান, হতে হয়েছিল দেউলিয়া।
সাম্প্রতিককালে নিযুক্ত এই ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবসায়ী হোয়াইট হাউসে নিজের জায়গা করে নিলেও ব্যর্থতার অতীত বিদ্যমান। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’বার অকৃতকার্য হতে হয়েছিল তাঁকে।
জনপ্রিয় এই কৌতুকাভিনেতাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই। তবে জীবনে প্রথমবার কমেডি ক্লাবের মঞ্চে উঠে বেশ ভড়কে গিয়েছিলেন তিনি, বরফের মতো জমে যাওয়ায় দর্শকের তিরস্কারের স্বীকার হতে হয়েছিল তাঁকে। নিজেকে প্রস্তুত করে পরদিন তিনি সেই একই মঞ্চে ওঠেন আবার, দর্শকের হাসি, করতালি ও প্রশংসা কুড়ান, বাকিটা ইতিহাস।
সফল অভিনেতা, গায়ক ও নৃত্যশিল্পী এস্ট্যায়ার জীবনে প্রথমবার অডিশন দেয়ার পর এমজিএম স্টুডিও তাঁকে নথিভুক্ত করে ঠিক এভাবে ‘অভিনয় জানে না। গাইতে পারে না। মাথায় টাক আছে। একটুও নাচতে জানে না।’ পরবর্তীতে অতীত না ভোলার জন্য নিজ বাসগৃহে এস্ট্যায়ার এমজিএম এর এই নথি টাঙিয়ে রেখেছিলেন।
প্রথম অডিশনের পর তাঁকে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল মানুষের সময় নষ্ট না করে থালা বাসন ধোয়ার কাজ নিতে। পটিয়ে নিজের সক্ষমতা প্রকাশের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন এবং অস্কার জয়ের পাশাপাশি হলিউডের অন্যতম সফল অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার মত চেহারা বা সৌন্দর্যের অভাব রয়েছে- প্রথম জীবনে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার সংগ্রামে তাঁকে এমন কথাও শুনতে হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রায় একশটি সিনেমায় নানান চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি অসংখ্য পুরস্কার ও খেতাব অর্জন করেন।
জীবনের শুরুটা বেশ দীনতার মাঝে কাটিয়ে সংগ্রামী এই অভিনেতা প্রাথমিকভাবে হলিউডে বেশ বিশ্রীভাবেই প্রত্যাখ্যাত হন। বড় বড় স্টুডিওর মালিকদের কাছে তার অভিনয়ের কোনো বাজারমূল্য ছিল না।
জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়াল ‘আই লাভ লুসি’তে অভিনয়ের পূর্বে তাঁকে দর্শক চিনতো একজন ব্যর্থ নিম্নমানের অভিনেত্রী হিসেবে। অভিনয় শিক্ষক তাঁকে বলেছিলো অন্য কোনো পেশায় নিযুক্ত হতে। কিন্তু পররবর্তীতে তেরোটি এমি নমিনেশন ও চারটি এমি এওয়ার্ডের পাশাপাশি কেনেডি সেন্টারের আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
হ্যারিসন ফোর্ড
প্রথম ছবিতে অভিনয়ের পর সিনেমাবোদ্ধারা বলেছিলেন তারকা হওয়ার কোনো যোগ্যতাই ফোর্ডের নেই। কিন্তু হান সোলো বা ইন্ডিয়ানা জোন্স চরিত্রে তার কালোত্তীর্ণ অভিনয় ও যুগের পর যুগ তার পেশার অগ্রগতি তৎকালীন সিনেমা বোদ্ধাদের আজ ভুল প্রমাণ করে।
সর্বকালের সবচেয়ে আবেদনময়ী নারী মডেল ম্যারিলিন মনরো। সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলার আগে এক মডেল নিযুক্ত প্রতিনিধি তাঁকে বলেছিলেন মডেলিং না করে কোনো অফিসে কেরানীর চাকরি করতে। সে উপদেশ অগ্রাহ্য করে মনরো যে ভালোই করেছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অস্কারজয়ী এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় নিজের প্রথম উপন্যাস লেখা শুরু করেন। লেখায় মনোনিবেশ করতে গিয়ে শিক্ষাজীবন থমকে যায় তার, ছিটকে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উপন্যাস লেখা শেষ হলেও ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কোনো প্রকাশক তা ছাপতে রাজি হননি। প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠক সমাজের কাছে তা সমাদৃত হয় না। শিক্ষাজীবন অসমাপ্ত রেখে ভিয়েতনামে পাড়ি জমান ইংরেজি ভাষা শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে। পররবর্তীতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং দু’টি পার্পল হার্ট মেডেল অর্জন করেন। মূলত এখান থেকেই তিনি যুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মানের অনুপ্রেরণা পান।