হাতের নাগালেই চুলের যত্ন
- ঋতুপর্ণা চাকী
অতিরিক্ত চুল পড়ার যন্ত্রণা এখন নারী পুরুষ উভয়কেই ভোগ করতে হয়। আর শীতকাল এলে তো কোনো কথাই নেই, এ সমস্যা বেড়ে যায় আরো বহু গুণ। কিন্তু আপনার হাতের নাগালেই রয়েছে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের সহজ ও কার্যকরী কিছু উপাদান।
মানুষ যেমন তার শরীর স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়, ঠিক একইভাবে যত্ন নিতে হয় চুলেরও, যাতে অকালে আমাদের এই মূল্যবান সম্পদটি হারাতে না হয়। তাই চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও নিতে হবে বিশেষ যত্ন। আর এই যত্ন নেওয়ার উপাদানগুলো হতে পারে আপনার হাতের কাছেই থাকা ছোট ছোট কিছু উপাদান। যেমন:
মেথি: চুলকে মজবুত ও সুরক্ষিত রাখতে এবং অতিরিক্ত চুল ঝরা বন্ধ করতে মেথির রয়েছে অনেক ভূমিকা। মেথির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং নিকোটিনিক এসিড যা চুলকে ভিতর থেকে পুষ্টি যোগাতে অনেক সাহায্য করে। আপনার চুল অনুযায়ী পরিমাণমতো মেথি নিয়ে তাতে সামান্য পানি দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে এই উপাদানটি ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে ২০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মাসে এক বার এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করলে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়া অনেকাংশেই বন্ধ হবে।
কালোজিরা: চুলের যত্নে কালোজিরা বা কালোজিরার তেলের ভূমিকা অন্যতম। কালোজিরার মধ্যে যে ফলিকগুলো রয়েছে তা চুলকে করে শাক্তশালী। বিভিন্ন ধরনের পণ্য চুলে ব্যবহারের ফলে আমাদের মাথার ত্বকের যে ক্ষতি হয় এবং মাথার ত্বকে যে শুষ্কতা তৈরি হয়, কালোজিরা তা কমায়। সাথে প্রাকৃতিকভাবে ফিরিয়ে আনে চুলের পুষ্টি, এজন্য কালোজিরার তেল ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ফলে এটি চুল পড়া বন্ধ করতে অনেক সাহায্য করে এবং চুলকে রাখে প্রাণবন্ত ও সতেজ। রাতে ঘুমানোর আগে আপনি এই তেলটি ব্যবহার করতে পারেন। তেলটি ব্যবহারের কয়েকদিনের মধ্যেই আশানুরূপ ফল দেখতে পাবেন।
মধু: চুলকে সুন্দর করতে মধুর জুড়ি মেলা ভার। হাতের নাগালে থাকা এই উপাদানটির মধ্যে রয়েছে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু উপাদান। মধু শুধুমাত্র যে আমাদের চুলের জন্য উপকারী তা কিন্তু নয়। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নিয়ম করে চুলে মধু ব্যবহার করলে অনেক রুক্ষ চুলও হবে সফট এবং সিল্কি। চুলের রুক্ষতা দূর করতে আমরা যেখানে নামি দামী সব সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার করি, সেখানে এই একটিমাত্র উপাদান আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যবহার করেই পেতে পারি কাঙ্ক্ষিত ফল। এটি চুলের শাইনি বৃদ্ধিতে কাজ করে। মাথার স্ক্যালপে যে কোনো ধরণের ইনফেকশন যাতে তৈরি না হয় এজন্য মধু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং সাথে এটি চুলের বৃদ্ধি ঘটাতেও সাহায্য করে।
ডিম: চুলেরযত্নেডিমের উপকারী দিকের কথা কম বেশি আমাদের সবারই জানা। ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম দুটোই চুলের জন্য সমান উপযোগী। ডিমের সাদা অংশের সাথে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকায় এটি চুলকে ঘন করতে সাহায্য করে, সাথে চুলকে নরোম ও সিল্কিও করে থাকে। অলিভ ওয়েল মেশানো ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে চুলে আর কোনো কন্ডিশনার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। এটিই কন্ডিশনারের কাজ করে।
লেবু: মাথায় খুশকি সমস্যা থাকলে তা দূর করার একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে লেবুর রস। লেবুর রস ব্যবহারের ফলে অতি সহজেই চুলের খুশকির সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। লেবুর রসে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকার করণে এটি মাথার ত্বকের মরা চামড়া দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর মধ্যে আরো ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি চুলের অপুষ্টিহীনতা দূর করে চুলকে করে ঝলমলে ও কালো। এছাড়াও চুলের দ্রুত বৃদ্ধি, আগা ফাটা বন্ধ করতেও এটি সমানভাবে কাজ করে।
চুল পড়ার এই সমস্যাকে ঘরোয়া এই জিনিসগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করার ফলে সহজেই দূর করা সম্ভব। তাই এই বিষয়টি নিয়ে বেশি চিন্তিত না হয়ে সঠিক সময় থেকে চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। অযথা বিষয়টি নিয়ে মানসিক চিন্তা বেশি করলে এটি চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে।