শীত বরণে বাহারি পোষাকের ফ্যাশন
আকলিমা আক্তার রিক্তা : হেমন্তকে বিদায় জানিয়ে শীত যেন অভিনব ছোঁয়া ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রকৃতিতে।প্রকৃতির মতো মানুষের পোশাক-আশাকেও লাগে রঙের ছোঁয়া ।পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রত্যেক ঋতুতেই পোশাকের ফ্যাশন বদলায়। শীতের ঋতুতেও পোশাক বিক্রেতারা বাজারে ছাড়েন নতুন নতুন পোশাক। আমাদের দেশে তাদের মতো অতটা সুযোগ না থাকলেও শীতবস্ত্রের ফ্যাশনে নতুনত্ব আনার সুযোগ রয়েছে। কিশোরী, তরুণী, এবং বয়স্ক নারীরাও বয়স,রুচি ও ফ্যাশন অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন নানা স্টাইলের শাল, স্টোল কার্ডিগান, কোটি, ব্লেজার ইত্যাদি।
শীতের ফ্যাশনে শালঃ
হিমহিম শীতের সকালের শুরু কি শালের উষ্ণতা ছাড়া চিন্তা করা যায়? একদমই না। শুধু শীতের পোশাক হিসেবেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও আজকের প্রজন্মের কাছে শালের রয়েছে আলাদা কদর। শীত ঠেকাতে চমৎকার বুনন আর আকর্ষণীয় ডিজাইনের শালের সমাদর বেড়েছে। এক প্যাঁচে শীত তাড়াতে জুড়ি নেই শালের। শাল এখন শুধু শরীরকে ওম দেয়ার জন্যই নয়- এটি এখন শিল্পীর শিল্প প্রদর্শনের ক্যানভাসও। এ জন্যই শিল্পীর শিল্প রূপটি ধরা দেয় ভিন্ন আঙ্গিকে। দেশী শালের মধ্যে বাঙালী মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি শাল। তাতে ব্লক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট করা থাকলেও যেমন কোন সমস্যা নেই, তেমনি একরঙা শালেও নেই কোন আপত্তি; তা দিব্যি শাড়ি, কামিজ, ফতুয়া, টপস যে পোশাকে যাচ্ছে, সেই পোশাকের সঙ্গেই গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন তরুণীরা। আবার একরঙা পশমিনা শালের ফ্যাশনও দারুণ চলছে। নরম এবং বহর কম বলে ব্যবহারে আরামদায়ক; তাই তরুণীরা এই শালে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য। আর এ কারণেই ঢাকা শহরের প্রায় সব বিপণিবিতানেই এখন এই শাল পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নিউমার্কেটে আছে খাদি শাল, আদিবাসী শাল, পশমিনা শাল, উলের শালের পসরা।
হালকা শীতে পরার জন্য বেছে নিন খাদি, তাঁত, গ্রামীণ চেক এবং সুতির চাদরে বাটিকপ্রিন্ট বা এম্ব্রয়ডারির কাজ করা চাদর। এ ছাড়া হ্যান্ডস্টিচ স্কিন, এ্যাপলিক, প্রিন্টেড ডিজাইন, হ্যান্ডপেইন্ট, ব্লক, ডাই এদের জন্য চমৎকার মানানসই।
শীত ফ্যাশনে ব্লেজারঃ
শীত উতযাপনে ব্লেজার এক অনন্য ভূমিকা রাখছে। ব্লেজার এখন শুধু অফিসিয়াল পোষাক ই নয় বরং অফিসিয়াল গন্ডি পেড়িয়ে ফ্যাশন সচেতনদের পছন্দের জায়গা দখল করে আছে।তরুণ প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্নতা এসেছে এর ডিজাইনে। ফরমাল ও ক্যাজুয়াল ব্লেজারে ছেয়ে আছে রাজধানীর তৈরি পোশাকের দোকানগুলো।খরচ একটু বেশি হলেও চাহিদার কমতি নেই দর্জি দোকানগুলোতে। প্রিয় তারকাদের পরা ব্লেজারের ডিজাইন অনুযায়ী ব্লেজার বানাতে অনেকেই বায়না ধরছেন দোকানগুলোতে।তবে হাল ফ্যাশনের রেডিমেইড ব্লেজার কিনতে চাইলে যেতে হবে আর্টিস্টি, ক্যাটস আই, ফ্রিল্যান্ড, এক্সটেসি ইত্যাদি দোকানগুলোতে।
কাপড় কিনে পছন্দের ডিজাইনের ব্লেজার বা কমপ্লিট বানাতে চাইলে যেতে হবে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড কিংবা রমনা ভবনে। কলার বা পকেটের ডিজাইনের মধ্যে আছে পাইপিং, অ্যাঙ্গেল পকেট, রুল কলার, তালিপকেট ইত্যাদি ডিজাইনের ভিন্নতা।ওভার কোটের ডিজাইনের মধ্যে আছে শার্ট কলার, ওপেন কলার. স্যুট কলার ইত্যাদি। ক্যাটালগ দেখে পছন্দসই ডিজাইনটি বেছে নেওয়া যাবে। স্বাভাবিক গড়নের একটি ব্লেজার বানাতে সাধারণত দুইগজ কাপড় লাগে। প্যান্টসহ বানালে সোয়া তিনগজ আর প্যান্ট ও কোটিসহ বানাতে কাপড় লাগবে চারগজ। ওভারকোট ও লঙ কোটে কাপড় লাগবে তিনগজ।তুলনামূলক কমদামে ব্লেজার বা কমপ্লিট বানাতে চাইলে ঢুঁ দিতে পারেন রাজধানীর নিউমার্কেট এর কাপড়ের দোকানগুলোতে। তবে ব্লেজার উচচবিলাসীদের ফ্যাশন হিসেবেই বেশী পরিগণিত।
শীত ফ্যাশনে কোটিঃ
ওয়েস্টকোট বা কোটি যাই বলি না কেন সধারণত পশ্চিমাদের পোশাক হলেও বর্তমানে সারাবিশ্বে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা সময় ছিল যখন কোটি কেবলমাত্র ব্লেজার, স্যুট কিংবা ওভার কোটের নিচেই বেশি শোভা পেত। কিন্তু এখনকার সময়ে কোটির ফ্যাশনে ঘটেছে বিশাল পরিবর্তন। ফ্যাশনের অন্যতম উপাদান হিসেবে কোটি তরুণ-তরুণীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। কোটিও হতে পারে হালকা শীতে ফ্যাশনের অন্যতম পোষাক।ফরমাল, ক্যাজুয়াল, পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস-স্কার্ট, ফ্লোর টাচ লং সিøভ অথবা আনারকলি পোশাকের সঙ্গেও ব্যবহৃত হচ্ছে কোটি।
কোটির ডিজাইন এবং মানে এসেছে বৈচিত্র্য। ফ্যাশনের বাজারে ছেলেদের গোলগলা এবং ভি-গলা এই দুই ধরনের কোটিতে প্রচলিত রয়েছে। কোটিগুলো সাধারণত এক রঙা কিংবা চেক চেক হতে পারে। কোটির সঙ্গে যদি গলায় সিল্কের মাফলার অথবা কোটির পকেটে যদি একটা সিল্কের রুমাল গুঁজে দেয়া যায়, তবে এই হালকা শীত নিবারণের সঙ্গে ফ্যাশনও হবে মনের মতো। কোটির বৈচিত্র্যটা রয়েছে মেয়েদের বেলায়ও। ফ্যাশন ভেদে মেয়েদের কোটি ছোট-বড় হয়ে থাকে।
রঙ এবং কাজের বেলায়ও মেয়েদের কোটি বাড়তি দৃষ্টি কাড়ে। মূলত টিন এজ বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে কোটির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। কোটির কথা বললে অনেকের মনে যে রূপটা ভেসে ওঠে তা হলো হাতাকাটা, দৈর্ঘ্যে ছোট, মোটা কাপড়ের ওপর নক্সা, সামনের দিকে কাটা এক পোশাক। বর্তমানে মেয়েদের কাছে সামনের দিকে কাটা কোটি এবং টিউনিকের মতো ডিজাইন করা কোটির বেশ প্রচলন রয়েছে। এ সমস্ত কোটিতে কখনো ব্লক-প্রিন্ট আবার কখনো বা জারদৌসি অথবা জরির কাজের আঁচর পড়ছে। কোনটিতে আবার সিম্পল লেস এবং ব্রাশ পেইন্টের ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এবং ফ্যাশনকে মাথায় রেখে আমাদের ফ্যাশন ডিজাইনাররা বিভিন্ন বয়সী নারীদের জন্য প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কোটি ডিজাইন করে যাচ্ছেন। কোটি মূলত ঢাকাসহ সারাদেশেরে বিপণিবিতানগুলোতে পাওয়া যায়। ঢাকার বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, রাপা প্লাজা, সুবাস্তু আর্কেডসহ বিভিন্ন শপিংমলে বিভিন্ন ধাঁচের কোটি পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশী ব্র্যান্ডের শোরুম থেকে নিজের পছন্দসই কোটি বেছে নিতে পারেন আজই।
শীত কে কেন্দ্র করেই যেন ফ্যাশন সচেতন মানুষগুলো হয়ে উঠছেন আরো ফ্যাশনেবল।আপনি ও আপনাকে রাঙ্গিয়ে নিতে পারেন শীত ফ্যাশনে। কাছের মানুষের কাছে হয়ে উঠুন নবরূপা ও আকর্ষনীয়।