অন্দরে বৈশাখ
- রিক্তা রিচি
ঘড়ির কাটা টিক টিক করে ঘুরছে, আর দিনপঞ্জিকা জানিয়ে দিচ্ছে বৈশাখ প্রায় এসে গেছে। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। এই দিন বাঙালি নিজেকে বৈশাখী রঙে রাঙানোর পাশাপাশি ঘরকেও সাজিয়ে তোলেন নানা সাজে।
কিন্তু কেন? কারণ আছে। বছরের প্রথম দিনে আথিতিয়তার শেষ নেই। আর অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য প্রথমেই সাজাতে হবে বসার ঘর এবং খাবার ঘর। কীভাবে এই বৈশাখে সাজাবেন আপনার গৃহটি-দেখে নিন এক পলকে।
প্রাণবন্ত বসার ঘর
বৈশাখে বসার ঘরের সজ্জায় দেশীয় জিনিসের ব্যবহারে ঘর হয়ে উঠে প্রশান্তিময়। এ যেন দেশীয় শিল্পের ছোঁয়া। অতিথিদের বসার জন্য বাসায় ব্যবহার করতে পারেন দেশীয় বেতের সোফা। মেঝেতে রাখা যেতে পারে শতরঞ্জি। বসার ঘরের দেয়ালে ঝুলাতে পারেন টেরাকোটা ও মুখোশ। দেয়ালে মুখোশের ব্যবহার চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার আমেজ বয়ে নিয়ে আসবে। ঘরে উৎসবের আমেজ আনতে সোফার পাশের কোনাটি সাজাতে পারেন দেশীয় জিনিসের শৈল্পিক সজ্জায়। বিভিন্ন রঙের ফুল এবং ইনডোর প্লান্টস দিয়ে সাজাতে পারেন বিভিন্ন আকৃতির মাটির পটার। নতুনকে আমরা সর্বদা শুভেচ্ছা জানাই এবং বরণ করি ফুল দিয়ে। আপনার ঘরের ফুলদানিটি সাজিয়ে তুলুন ফুল দিয়ে। কারুকাজ সম্বলিত এবং বাহারি ডিজাইনের মাটির ফুলদানি পাবেন মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেটে এবং দোয়েল চত্বরে। এছাড়া ঢাকা কলেজের সামনেও মাটির তৈরি জিনিসপত্র ও ফুলদানি পাবেন। চিরাচরিত বাঙ্গালির বিশ্বাস মোমের আলো ঘরে বয়ে নিয়ে আসে মঙ্গলবার্তা। ঘরকে আরো প্রশান্তিময় করতে একটি মাটির পাত্রে পানি নিয়ে পছন্দমত ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তার মধ্যে জ্বালিয়ে রাখুন নানা রঙের মোমবাতি। আহ! এযেন মাদকতা ছড়িয়ে দিবে। তাছাড়া ল্যাম্পশেডের ব্যবহার করেও বসার ঘরকে আকর্ষনীয় করতে পারেন।
.
রুচিসম্মত খাবারঘর
ঘরে বৈশাখী আমেজ আনতে মাটির তৈজসপত্রের বিকল্প নেই। পহেলা বৈশাখে বাঙালি মেতে উঠে পান্তা ইলিশ খাওয়ায়। পান্তা, ইলিশ, দেশীয় ভর্তার সমাহারে ভড়ে উঠে খাবার টেবিল। তার সঙ্গে মাটির প্লেট, জগ, গ্লাস, বাটি, পিরিচ ইত্যাদি এনে দেয় পরিপূর্ণ বাঙ্গালিয়ানা। আপনি আপনার খাবার টেবিলকে সাজাতে পারেন মাটির তৈরি তৈজস দিয়ে। মাটির তৈরী থালা, বাসন, জগ ইত্যাদি বৈশাখের আনন্দে ভিন্ন মাত্রা এনে দিবে। চামচ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন কাঠ, বাশ বা নারকেলের মালার তৈরি চামচ। টেবিল ম্যাট হিসেবে বাশ বা চটের তৈরি ম্যাট মাটির বাসনের সাথে ভালো মানাবে। খাবার টেবিলের মাঝখানে মাটির পাত্রে কিছু তাজা ফুল রাখতে পারেন। এসব তৈজসপত্র পাবেন মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেট এবং দোয়েল চত্বরে। এছাড়া আড়ংয়েও পাবেন।
.
শোবার ঘরের সাজ-সজ্জা
গ্রীষ্মের প্রখরতাপে জীবন হাঁপিয়ে উঠে। তাই প্রয়োজন শীতলতা। অন্দরসজ্জায় গাছের ব্যবহার ঘরকে শীতল করে। গাছ ঘরের ভেতরের তাপ শোষণ করে ঘরকে ঠাণ্ডা করে তোলে। বৈশাখী সাজেও অন্দরমহলকে সাজাতে পারেন ক্যাকটাস, পাতাবাহার, বিভিন্ন ধরনের গাছ, বড় গাছের গুড়ি এবং মাটির বিভিন্ন ধরনের নান্দনিক শিল্পকর্ম দিয়ে। মাটির আসবাব পত্র আমাদের চোখকে প্রশান্তি এনে দেয়। তাই ভারী আসবাবের বদলে ঘরকে সাজিয়ে তুলুন মাটির তৈরি সরা, পটারি, কলস ইত্যাদি দিয়ে। শোবার ঘরেও রাখা যাতে পারে মাটির বিভিন্ন শিল্পকর্ম। বিছানায় ব্যবহার করতে পারেন নকশীকাথার হালকা কাজ করা সুতির চাদর। আলো বাতাসের চলাচলের জন্য ঘরে ব্যবহার করুন হালকা রঙের পর্দা।