কেমন হবে পড়ার ঘর
- লাইফস্টাইল ডেস্ক
বসার ঘর, শোবার ঘর পরিপাটি রাখতে কত না আয়োজন থাকে। কোনটা কোনখানে মানাবে, কোনটার রঙ যুতসই হয়নি এ নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। তবে এর চেয়েও বেশি গুরুত্বের যে ঘরটি তা নিয়ে একেবারে ভাববেন না, তা কি হয়? পড়ার ঘরের কথা বলছিলাম। বিশাল পৃথিবীর বুকে এক টুকরো আপন জগত বললে খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না, যদি আপনি পড়–য়া কিংবা বইপ্রেমী হন।
ঘরের সাজসজ্জা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের অনেক ধরনের জল্পনা, কল্পনা কাজ করে মাথায়। ঘরের রঙ কেমন হবে, আসবাবপত্র কী হবে, তারপর আয়তনের বিষয়টিও তো ভেবে দেখতে হয়। ভাবনার তো আর শেষ নেই, এর মধ্য থেকেই জেনে নেওয়া যাক পড়ার ঘর সাজানোর নানা দিক।
যারা ফ্ল্যাটে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে পড়ার ঘর বড় করার সুযোগ কম থাকে। তাই, পড়ার ঘর বড় না ছোট হবে, সেটি নির্ভর করছে আপনার নিজস্ব বাড়ি না ফ্ল্যাট বাড়ি তার ওপর। পড়ার ঘরের আসবাবপত্র হবে অন্যসব ঘর থেকে কিছুটা ভিন্ন। কারণ এখানে আপনার একই সঙ্গে প্রয়োজন মনোযোগ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। চেয়ার, টেবিল, ল্যাম্প, ডিভান, ক্যাবিনেট ইত্যাদি আসবাব থাকতে পারে এ ঘরটিতে। ঘরটি যতটুকু সম্ভব খালি থাকলেই ভালো, সেক্ষেত্রে বেশি আসবাবপত্র না থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। বই বা অন্যান্য জরুরি খাতাপত্র রাখার জন্য শেলফ বা তাকগুলো এমনভাবে বসাতে হবে যাতে তা দাঁড়িয়ে বা বসে হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বা শুয়ে পড়ার জন্য আপনার ঘরে রাখতে পারেন একটি ডিভান। খেয়াল রাখতে হবে চেয়ার এবং টেবিলটি যেন আরামদায়ক হয়, তাহলে কাজে মনোযোগ দিতে সুবিধা হবে। আপনার কম্পিউটারটি ডেস্কটপ হোক অথবা ল্যাপটপ, এটি রাখা এবং ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করুন। একটি ছোট সাইড টেবিল রাখতে পারেন চা, কফি বা টুকটাক জিনিস রাখার জন্য। ঘরের ওয়ালে ঝোলাতে পারেন আপনার পছন্দের একটি ছবি। ঘরের এক কোণে রাখুন ছোট টবে একটি গাছ যা চোখ এবং মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া। বলা যায়, পড়ার ঘর যদি না হয় মনের মতন, পড়াশোনায় আসে তবে ছন্দপতন।
কেমন হবে পড়ার ঘরের রঙ
পড়ার ঘরের সিলিংয়ের রঙ সাদা রাখলেই ভালো। তাতে ঘরের আলো বেশি খোলে। রঙ না করে পড়ার ঘর কাঠের তৈরি হলেও বেশ ভালো লাগে। সে ক্ষেত্রে মেঝে কাঠের তৈরি হওয়াই ভালো। ঘরের দেয়ালের রঙ সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে। এ ঘরে কখনোই অতি উজ্জ্বল কিংবা অতি গাঢ় রঙ ব্যবহার না করাই ভালো। লাল, কমলার মতো উজ্জ্বল রঙ পাঠকের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। শুধু তাই নয়, গাঢ় রঙ পড়ার ঘরকে ছোট আর অন্ধকার করে তোলে। সেক্ষেত্রে দেয়ালে ন্যাচারাল কালার ব্যবহার করে ঘরটি আরামদায়ক করে তুলতে পারেন। সবুজ, ক্রিম, অফহোয়াইট, হালকা হলুদ রঙ লাগাতে পারেন। আসলে যে রঙই করুন না কেন, তা যেন হয় ন্যাচারাল আর আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই।
বুকসেলফ
পড়ার ঘরের প্রধান অনুষঙ্গ হলো বই ও বইয়ের সেলফ। ঘরভর্তি বই থাকবে তাহলেই না মজা। এখনকার দিনে বিভিন্ন ডিজাইনের বুকসেলফ তৈরি হয়েছে। ছোটদের কাছে পড়ার ঘরকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নানা রঙের বুকসেলফ এসেছে বাজারে। বয়স অনুযায়ী বুকসেলফ রাখা উচিত। কারণ, বয়স্করা যেহেতু গল্পের বই বা খবরের কাগজ পড়তেই বেশি ভালোবাসেন, তাই তাদের ক্ষেত্রে একটু ছড়ানো বুকসেলফ হলেই ভালো হয়। খবরের কাগজের রেকর্ড রাখার জন্য একটি আলাদা জায়গা তৈরি করা উচিত বুকসেলফে। তবে বই রাখার জন্য ভারী আলমারি ব্যবহার না করাই ভালো। দেয়াল আলমারি বা ছোট ছোট আকর্ষণীয় ডিজাইনের বুকসেলফ কিনে তা ঘরে রাখতে পারেন। এছাড়া দেয়ালে টানানোর মতো বহু ডিজাইনের ক্যাবিনেট কিনেও বই রাখতে পারেন। নিজস্ব ডিজাইন অর্ডার দিয়েও বানাতে পারেন আকর্ষণীয় বুকসেলফ। তবে যেভাবে বা যে ডিজাইনেরই সেলফ বানান না কেন, তা যেন সহজে পরিষ্কার করা যায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ সেলফ পরিষ্কার না থাকলে পোকা-মাকড় তাতে বাসা বানাবে আর পরোক্ষভাবে ক্ষতি হবে বইয়ের। আরেকটি বিষয়, যাদের ঘরে ছোট শিশু আছে, যারা স্টাডি রুমে ঢুকতে পারে এমন বাসায় বুকসেলফ একটু উঁচুতে হওয়াই ভালো। যাতে তা শিশুদের নাগালের বাইরে থাকে।
টেবিল-চেয়ার কেমন হবে
টেবিল এবং চেয়ারের প্রসঙ্গ। বর্তমানে পড়াশোনার চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোট থেকেই বেশিরভাগ সময়টাই কাটে পড়াশোনার ঘরে। তাই চেয়ার এবং টেবিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ পড়াশোনার ঘরে। ছোটদের ক্ষেত্রে যারা স্কুলে সবে ভর্তি হয়েছে বা একটু বড়, তাদের জন্য টেবিল সবসময় আকর্ষণীয় হওয়া উচিত। কাঠের টেবিল না হয়ে প্লাইউডের রঙিন টেবিল হলে সেখানে পড়াশোনা করে মজা পায় ছোটরা। চেয়ারটিও মানানসই হতে হবে টেবিলের সঙ্গে। খেয়াল রাখতে হবে, চেয়ারে বসলে পুরো পিঠ যেন সাপোর্ট পায়। চেয়ার একটু শক্ত হওয়াই ভালো। অন্যদিকে একটু বয়স্ক যারা, তাদের কাছে পড়াশোনার ঘরই হচ্ছে টেনশন মুক্ত হওয়ার জায়গা। তাই তাদের ক্ষেত্রে ইজি চেয়ার বা রিভলভিং চেয়ার হলেই ভালো। টেবিলের ক্ষেত্রে আরও একটা জিনিস বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই সেখানে যেন একটা কম্পিউটার রাখার ব্যবস্থা থাকে। কারণ, এখন পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার শেখাটাও বাধ্যতামূলক। পড়ার ঘরে টেবিল ল্যাম্প থাকাই ভালো। অবশ্যই সেটা যেন সাদা হয়। না হলে চোখের ওপর জোর পড়তে পারে। পড়ার ঘরের জানালা একটাই থাকা উচিত এবং সেটা টেবিলের সামনা সামনি হলেই ভালো হয়। কারণ এতে সকালবেলা সরাসরি বাইরের আলো টেবিলের ওপর এসে পড়ে। এই জানালা যতটা বড় করা সম্ভব, ততই ভালো। এতে দমবন্ধকর পরিবেশ তৈরি হয় না। কারণ, সারা দিন দেয়ালের দিকে না তাকিয়ে কিছু সময় জানালার বাইরে আকাশ বা গাছপালা দেখলে মন ভালো থাকে। পড়াশোনা একঘেয়ে হয়ে যায় না। বয়স অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হয় পড়ার ঘরের রঙ এবং আসবাবপত্রকে।
পড়ার ঘরের ভিন্নতা
একজন মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পড়–য়ার যে ধরনের পড়ার ঘরের প্রয়োজন, একজন ডাক্তারের পড়ার ঘর হবে তার থেকে আলাদা। পেশা অনুযায়ী পড়ার ঘর হওয়া উচিত। একজন ডাক্তারের এবং একজন সাহিত্যিকের পড়ার ঘরের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। যারা ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত, তাঁদের স্টাডি ঘরের রঙ সাদার ওপরেই হওয়া উচিত। কারণ, ডাক্তাররা যে সমস্ত বই পড়াশোনা করেন, তার বেশিরভাগটাই খুব রঙিন হয়। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘরের রঙ সাদা করা উচিত। চেয়ারটাও একটু আরামদায়ক হলেই ভালো হয়। কারণ, সারা দিন প্র্যাকটিসের পর রাতে যখন পড়াশোনা করতে বসবেন, তখন একজন ডাক্তারের আরামেরও প্রয়োজন। আবার সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রেও পড়ার ঘরের কিছু বৈশিষ্ট্য রাখা উচিত। কে কী ধরনের লেখা লিখছেন, তার ওপর নির্ভর করবে ঘরের রঙ। যদি সম্ভব হয়, তা হলে কিন্ডারগার্টেন বা ছোট শিশুদের জন্য খেলার ঘর এবং পড়ার ঘর এক রাখা উচিত। তাতে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।
পড়ার ঘরটি ছোট হলে মাল্টিপারপাসে ব্যবহার করা যায় এমন আসবাবপত্র রাখতে হবে। যেমন, একই সঙ্গে টেবিল, সেলফ আর ক্যাবিনেট বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।