শ্বাশুড়ীর মন পেতে হলে
রবিউল কমল: বেশ ঘটা করেই জুড়ে গেল দুটো জীবন। বাবার বাড়ির পরিচিত পরিমণ্ডল ছেড়ে মেয়েটি হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলেন অচেনা ভুবনে। তাঁর পরিচয়টা আর শুধু মা-বাবার আদরের মেয়েতেই সীমাবদ্ধ রইল না। তিনি আরেকটি পরিবারের বউ। নতুন পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে স্বামী তো বটেই, শাশুড়ীর সহায়তা পেলে সমস্যার ডালপালা ছড়াবে না। দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে যাবে। শুরুতে শাশুড়ীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু কৌশলী, একটু বোঝার মতো বুদ্ধি থাকতে হবে।
রাব্বি আর রিনার (ছদ্মনাম) বিয়ে হলো। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে প্রথম কয়েক মাস দ্বিধাদ্বন্দ্বে কেটেছে রিনার। কী করবেন কিংবা কী করবেন না, তা নিয়ে মনে সব সময় একটা আতঙ্ক কাজ করত। চুপটি করে ঘরে বসে থাকাও যেমন যায়নি আবার আগ বাড়িয়ে কিছু করলে শাশুড়ি কীভাবে নেবেন ব্যাপারটা! রিনা বলেন, ‘নতুন অবস্থায় কিছু না করলেও দোষ হতো। আবার আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলেও ভুল হয়ে যেত। একদিন শাশুড়ীকে মুখ ফুটে বলেই ফেললাম কথাটা। আমার শাশুড়ি বিষয়টি বুঝতে পেরে খুশি হয়েছিলেন। পরে আমাকে সবকিছু নিজের হাতে করে করে শিখিয়েছেন। সংসারের যেকোনো সমস্যায় আমি আমার শাশুড়ীকে মায়ের মতোই পাশে পেয়েছি।’
নতুন জীবনের দরজায় পা রাখা সব মেয়েকেই একদিন এমন পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, ‘ভিন্ন পরিবেশে বড় হওয়া মেয়েটির নতুন পরিবেশকে বুঝে নেওয়ার জন্য তাই নিজের কিছু সময় প্রয়োজন। বোঝাবুঝির সে পর্বটি সেই পরিবারে এসেই যে শুরু করতে হবেই এমনটি নয়। মেয়েটি যদি বুদ্ধিমতী হয় তাহলে আগে থেকেই সবার সম্পর্কে খানিকটা খোঁজখবর করে নিতে পারে। আর বাকিটুকু শ্বশুরবাড়ি এসে শাশুড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শিখে নিতে পারে। তবে শাশুড়িকেও আন্তরিকতার সঙ্গে ছেলের বউকে গ্রহণ করতে হবে।’
‘নতুন অবস্থায় কিছু না করলেও দোষ হতো। আবার আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলেও ভুল হয়ে যেত। একদিন শাশুড়ীকে মুখ ফুটে বলেই ফেললাম কথাটা। আমার শাশুড়ি বিষয়টি বুঝতে পেরে খুশি হয়েছিলেন। পরে আমাকে সবকিছু নিজের হাতে করে করে শিখিয়েছেন। সংসারের যেকোনো সমস্যায় আমি আমার শাশুড়ীকে মায়ের মতোই পাশে পেয়েছি।’
মনিকা’স বাঁধনের স্বত্বাধিকারী মনিকা পারভীন দীর্ঘদিন ধরে দম্পতিদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি মনে করেন, নিজেকে সুন্দর ও সুখী সংসারের একজন হিসেবে দেখতে চাইলে মেয়েটিকে হতে হবে শাশুড়ির মনের মতো বউ। আবার শাশুড়িকেও বুঝতে হবে মেয়েটির চাওয়া-পাওয়া। কেননা, এই পরিবারে তিনি নতুন। তিনি যদি সঠিকভাবে সহায়তা করেন, তাহলে নতুন বউয়ের নতুন জীবন অনেকখানি সাবলীল হবে।
কিছু পরামর্শ:
০১. বিয়ের পর নতুন পরিবারের সবাইকে আপন করে নিতে হবে। তাই বলে যে মায়ের বাড়ি ‘পর’ হয়ে গেল তা কিন্তু নয়। সবার প্রতি আপনার আন্তরিকতা আপনার শাশুড়ির চোখকে নিশ্চয়ই এড়াবে না।
০২. রাতারাতি হয়তো আপনি আপনার শাশুড়ীর প্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন না। সে জন্য আপনাকে জানতে হবে তাঁর পছন্দ-অপছন্দগুলোও। তাঁর পছন্দের কাজগুলো করার সুযোগ না পেলেও অন্তত তাঁর অপছন্দের বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন।
০৩. নতুন বউ হিসেবে সব মেয়েই কয়েকটা দিন বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। শাশুড়িরাও সে সুযোগ দিতে কার্পণ্য করেন না। আপনি সে সময়টা বুদ্ধিমতীর মতো কাজে লাগান। দেখে নিন, বুঝে নিন নতুন সংসারের কর্মতালিকা। সে অনুযায়ী শাশুড়ীর পিছু পিছু থাকতে ভুল করবেন না।
০৪. আপনার প্রতিটি দিন হোক শেখার দিন। কোনো কিছু ভুল করার চেয়ে জিজ্ঞাসা করে শাশুড়ি থেকে শিখে নিন। আপনার শেখার আগ্রহে শাশুড়ি বিরক্ত নয়, বরং খুশিই হবেন।
০৫. পরিবারের বিশেষ কোনো রীতিনীতি থাকলে তা জেনে নিতে ভুল করবেন না। দেবর-ননদ থাকলে তাদের কাছ থেকে গল্পচ্ছলে জেনে নিতে পারেন। আপনি যখন সেই মতো চলবেন, সেটি শাশুড়ীর চোখে আপনার জন্য বাড়তি পাওনা।
০৬. কোনো পারিবারিক বা সামাজিক আয়োজনে যোগ দেওয়ার আগে শাশুড়ীর কাছ থেকে পরামর্শ নিন। সেটি হতে পারে পোশাক কিংবা উপহার-সম্পর্কিত। এতে শাশুড়ি বুঝবেন যে তাঁর মতের গুরুত্ব রয়েয়ে আপনার কাছে।
০৭. সংসারের যেকোনো সমস্যায় অন্য কারও কাছে না গিয়ে শাশুড়ীর কাছেই আসুন। সংসার পরিচালনার বহুদিনের যে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা তাঁর থেকে পাবেন, তাতে লাভবানও হবেন। সাহায্য নিতে পারেন শ্বশুরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকেও। তবে তা যেন কখনোই শাশুড়িকে টপকে না হয়। কোনো বিষয় না বুঝলে শাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিন।
০৮. তাঁর পছন্দের বিকেলের ধোঁয়া ওঠা কফির কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দার আরামকেদারার পাশে বসে যেতে পারেন। হৃদ্যতা বাড়াতে হৃদয়ের কাছেই যে যেতে হয়!