সখী ভালোবাসা কারে কয়?
রবিউল কমল : ভালোবাসাকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা খুব কঠিন একটি ব্যাপার। কারণ একেকজন একেকভাবে ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কারো কারো মতে ‘এটি একটি আবেগ যার কারণে আমাদের কাউকে ভালো লাগে।’ আবার কারো মতে, ‘কাউকে মন থেকে স্নেহ, মায়া, মমতা দেয়াই ভালোবাসা।’ অনেকের মতে, ‘ভালোবাসা হচ্ছে সিগারেটের মত, যার পরিণাম হচ্ছে পোড়া ছাই।’ আবার অনেকে কাউকে দেখে পছন্দ হলে বলে ফেলেন, ‘আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।’ আসলে এটা ঠিক নয়। এটা ভালোবাসা নয়। এটা হচ্ছে ভালো লাগা।
আবেগ, যেটি আমাদেরকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, ত্যাগ-তিতীক্ষা-ধৈর্য্য শেখায়। ভালোবাসা শুধুমাত্র প্রণয় থেকে হয় না। ভালোবাসা স্নেহ, মায়া, মমতা থেকেও আসে। নতুন একটি শিশুর জন্ম হলে মা তাকে লালন পালন করে। শিশুটি সময়ে অসময়ে জ্বালাতন করে – কাঁদে, ঠিকমত ঘুমায় না, খায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও যে কারণে মা তার সন্তানটিকে ফেলে রেখে যেতে পারে না তা হল – ভালোবাসা। অনেক সময় ভালোবাসা আসে শ্রদ্ধা, সম্মান থেকে। যেমন: আমরা আমাদের বাবা-মা, দাদা-দাদীকে শ্রদ্ধাভরে ভালবাসি। প্রণয় অর্থেই হোক, আর মায়া-মমতা-সম্মান অর্থেই হোক, ভালবাসা মানে হল কারো ভাল চাওয়া।
প্রণয়ের দিক থেকে ভালোবাসাকে চিন্তা করলে দেখা যায় – যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসে তখন তারা একে অপরের ব্যাপারে কেয়ার করে, ভাবে। একজন আরেকজনের ব্যাপারে এমনকি খুবই ছোটখাট বিষয় নিয়েও মাথা ঘামায়। একজন আরেক জনের ক্ষতি দেখতে পারে না বরং সবসময় তার ভাল চিন্তা করে। একজন আরেকজনকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। একে অপরকে সবসময় দেখতে ইচ্ছে করে, একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মনের ভিতর আগলে রাখতে ইচ্ছে করে। একজন আরেকজনকে দেখলে বুকের ভেতরে একটা শান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একজন আরেকজনের দিকে তাকালে মনে হয় যেন, ‘দুচোখ ভরে দেখি।’ ভালোবাসা মানে শুধুই আপন করে পাওয়া – একে অপরের প্রতি অধিকার সৃষ্টি।
ভালোবাসার অন্যতম আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ত্যাগ স্বীকার করা। ভালোবাসার মানুষটির জন্য অনেক সুবিধা ছেড়ে দেয়া বরং অনেকটা আনন্দের বিষয় হয়ে থাকে। যেমন: বাবা-মায়েরা নিজেদের জন্য খরচ না করে সন্তানদের জন্য খরচ করে। বাবা-মায়েদের ভালোবাসা আসলে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
ভালোবাসা দেখানোর প্রয়োজন হয় না, ভালোবাসা এমনিতেই প্রকাশ পায়। ভালোবাসার জন্য তাড়াহুড়ো করা উচিৎ নয়। চাইলেই কাউকে ভালোবাসা যায় না। জোর করে কাউকে ভালোবাসা যায় না। এজন্য মনের ভেতর থেকে অনুভূতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন।