সন্তানকে মাতৃভাষা শেখান
রবিউল কমল : ইংরেজিতে পড়াশোনা করলেও বাড়িতে বাংলা ভাষার চর্চা বজায় রাখা জরুরি। সন্তানকে মার্তৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলার দায়িত্ব বাবা-মা ও পরিবারের অন্যদেরকেই নিতে হয়। ইংরেজির প্রয়োজনীতা অপরিসীম। তবে তার জন্য সন্তান যেন মার্তৃভাষাকে অবহেলা না করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন।
সন্তান জন্মানোর পরেই সে প্রথম কথা বলে মার্তৃভাষায়। ছোট্র মুখে আধো অস্পষ্ট ‘মা’, ‘বাবা’, ‘দাদা’ এই শব্দগুলো শোনার জন্যই তো এতাদিন মুখিয়ে ছিলেন! কিন্তু এগুলোর বদলে যদি ওরা প্রথম ইংরেজিতেই কথা বলতে শুরু করতো, তাহলে বোধহয় অনেক বাবা-মা খুশি হতেন। আসলে দিনদিন শহুরে মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েদের মধ্যে মার্তৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা বেড়েই চলেছে। বাড়িতে বা বাইরে সন্তান ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে অনেক বাবা-মায়ের গর্বে বুক ফুলে ওঠে! বাংলা শেখাটা তাদের কাছে নিতান্তই নিয়ম।
আবার স্কুলের পরীক্ষায় সব বিষয় ছেড়ে ইংরেজিতে সে কত নম্বর পেল, তার গুরুত্বও বাবা-মায়ের কাছে অপরিসীম। তবে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে: ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রয়োজনীতার কথা সর্বজনবিদিত। আন্তর্জাতিক স্তরে তো বটেই এমনকি দেশের মধ্যেও এই ভাষাটি ছাড়া কাজ-কর্ম করা মুশকিল! ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে হলেও ইংরেজির শরাণাপন্ন আপনাকে হতেই হবে। তাই ইংরেজিতে সাবলীলভাবে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা অবশ্যই জরুরি। আর এজন্য ছোট থেকে ভিত তৈরি করাও প্রয়োজন। যেহেতু ভাষাটি বিদেশি তাই বাঙালীদের সবাই যে এই ভাষায় খুব দক্ষ হবেন এমনটা নয়।
তবে ইংরেজির প্রয়োজনীতার কথা ভেবে মার্তৃভাষাকে কখনোই অবহেলা করা ঠিক হবে না। সন্তানকে তার নিজের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতেই হবে। আর বাংলা ভাষার মাধ্যমেই তা সবচেয়ে ভালোভাবে সম্ভব। সন্তানকে ইংরেজি বিশারদ করে তুলতে যদি রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের লেখার ইংরেজি অনুবাদ পড়ান, তাহলে লেখাগুলোর সঙ্গে তার কোনো মানসিক যোগাযোগই তৈরি হবে না। আবার যদি স্টেটাস সিম্বল হিসেবে যদি সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করান, তাহলে সেটিও কোনো বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নয়। খুব ছোট বয়সে পাশ্চত্য সিনেমা বা গানের কুপ্রভাব যাতে আপনার সন্তানের উপর না পড়ে সেটাও দেখার দায়িত্ব আপনার।
অনেক বাবা-মায়েরাই ভাবেন দু’চারটি চলতি ইংরেজি বলতে পারলেই বোধহয় তার সন্তান ভীষণ স্মার্ট। কমিউনিকেটিভ ইংরেজির প্রয়োজনীতা আছে অবশ্যই। কিন্তু জোর করে ইংরেজি শেখার ঠেলায় অনেক বাচ্চাই একধরনের ‘হাইব্রিড’ সংস্কৃতিতে বড় হয়। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে তার দক্ষ হয় না আবার বাংলাও ভুলতে বসে। এর সমাধানে বাড়িতে একধরনের ভারসাম্য পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। বাড়িতে নিজেরা বাংলায় কথা বলে, সন্তানের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলবেন না। সন্তানকে বাংলা সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন পড়ান। সে যদি বাংলায় দুর্বল হয়, তাহলে অবশ্যই তার প্রতি আলাদা করে সময় দিন। সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেও বাড়িতে মার্তৃভাষা চর্চার জায়গাটা যেন বজায় থাকে। আর এ দায়িত্ব বাবা-মাকেই নিতে হবে।