চলো ঘুরে আসি নাপিত্তছড়া
শাকিল নূর : বেড়ানোর জন্য সুন্দর সময় শীতকাল। এসময় প্রকৃতিতে অন্যরকম সৌর্ন্দয্য ছড়িয়ে থাকে। কিছুদিন আগে ঘুরে এলাম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ার বাজার এলাকার পাহাড়ের সবুজ সৌর্ন্দয্যের মাঝে প্রাকৃতিক ঝরনা নাপিত্তাছড়া।
আমরা ক-জন মিলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে রওনা করলাম। চট্টগ্রামের মিরসরাই পার হয়ে নদুয়ারহাটে পৌছালাম। সাথে কিছু হালকা খাবারের ব্যবস্থা করে নিলাম। নয়দুয়ার বাজারের স্থানীয় দোকানিদের কাছে জেনে নিলাম “নাপিত্তাছড়া” সর্ম্পকে আরো বিস্তারিত। জানলাম একটি নয়, তিন তিনটি ঝরনা আছে সেখানে।
ঝরানা পানির ঝিরিঝিরি পথ, আর বড় বড় পাহাড় শিলা পার হয়ে যেতে হয় নাপিত্তছড়া! সাবধানে পথ চলতে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামের পথ ধরে হাটা পথে নাপিত্তাছড়া ঝরনার দিকে চললাম। পাহাড়ী গ্রামেরে পথ বেয়ে চলতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ পড়ে। আরও কিছুপথ হাটার পর পেয়ে গেলাম পাহাড়ী ঝরনা পানির ঝিরিঝিরি পথের দেখা। দু-পাশে সবুজ বন তার মাঝে আকাঁবাকা সরু পানির ধারা! এ পথে যেতে পাহাড় ট্র্যালকিং করে এগুতে হয়। ঝরনার পানি আর অসাধারণ বন্য পরিবেশের পথ মনকে ভরিয়ে তুলছিল, প্রতিটা মহুর্ত ছিল উপভোগ্য।
পাহাড়ী ঢল উপেক্ষা করে ঝিরি ধরে খুব সাবধানে আমাদের হাঁটতে হবে। ঝিরি ও পাহাড়ী পথে চলতে চলতে এক সময় একটি গভীর জলাশয়ের কাছে এসে পৌঁছাই। পাহাড়ের ধার ঘেষে পার হয়ে সামান্য সামনে এলেই দেখা মিলে কুপিকাটা ঝরনা। যেভাবে পানি পড়ছে তাতে ঝরনার কাছে যেতে সবাই নেমে পড়লাম পানির মাঝে। আমরা আবার পাহাড়ী পথে উঠে ঝিরিতে নামি, আরো ১০/১৫ মিনিট কিছুদূর গেলে মূল ঝিরি থেকে মিঠাছড়ি নামে হাতের বামে একটি ঝিরি দেখা যায়। এ ঝিরি ধরে অল্প কিছুদূর এগিয়ে ঝিরি মুখে সুন্দর একটি ঝরনা দেখতে পাই – নাম বাঘবিয়ানী ঝরনা, ঝরনাটি অন্যগুলোর চেয়ে বেশ সুন্দর, এর বিশেষ বৈশিষ্ট হল পানি কিছুদূর পর দুই ভাগে ভাগ হয়ে নিচে নেমে আসে। মিঠাছড়িতে আসার সময় উচুঁ খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়। এই সময় ভ্রমন করতে আসা সবার সতর্ক থাকা জরুরি।
এবার আমাদের লক্ষ্য শেষ ঝরনা ট্রেইলের মূল আকর্ষণ বান্দর খুম। আবার মূল ঝিরিতে এসে সামনের দিকে এগোতে থাকি। অল্প দূরত্বেই ঝরনা আর এ ঝরনা থেকেই প্রবল বেগে পানি ধেয়ে আসছে। বাঘবিয়ানী ঝরনা থেকে ২৫/৩০ মিনিটের পথ হেটে পৌছাতে হয় শেষ ঝরনা যা পরিচিত বান্দরকুম বা বান্দরছিড়ায় নামে। আমরা ধীরে ধীরে ঝরনার কাছে পৌঁছাই। ভালো পানি থাকায় ঝরনাটি খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। এ ঝরনাটি অন্যান্য ঝরনা থেকে কিছুটা আলাদা।
বান্দরকুম ঝরনটিই নাপিত্তাছড়ায় অবস্থিত তিনটি ঝর্নার মধ্যে সবচেয়ে উচুতে। আসার পথে আমরা প্রথম যে পাহাড়ে উঠেছিলাম, তার ডান দিক হয়ে সহজ রাস্তা ধরে আধঘন্টার মাঝেই ঝিরিপথের শুরুর স্থানে পৌছে গেলাম। স্বল্প খরচে ঘুরে আসার জন্য সুন্দর একটি জায়গা নাপিত্তাছড়া ঝরনা।
যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাসে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসে এলে পথিমধ্যে মীরসরাই নেমে গেলে সুবিধা হবে। মিরসরাই থেকে সিএনজি নিয়ে নদুয়ার বাজার। শ্যামলী, হানিফ, টি.আর ট্রাভেলস্ সহ অনেক বাস চট্টগ্রাম যায়। নন-এসি ভাড়া ৪৮০ টাকা। এসি গ্রীন লাইন, সোহাগ, দেশ ট্রাভেলস সহ অনেক বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ১২৫০-১৪৫০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে শুভপুর বা অলংকার থেকে বাসে নয়দুয়ারীবাজার যেতে পারবেন, চয়েস বা লোকাল বাসে চেপে। নাপিত্তাছড়া ভ্রমণের সুবিধার জন্য সাথে গাইড নিতে পারবেন। গাইডের জন্য মওসুম ভেদে ৫০০-১০০০ টাকা লাগতে পারে। নাপিত্তাছড়া ঘুরে আসা যায় একদিনে, তাই থাকার দরকার হয় না।
সাথে নিতে পারেন :
নদুয়ার হাটে দুপুরের খাবার, বিশেষ করে ভাত খাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। মিরসরাই বা নয়দুয়ার থেকে কিছু খাবার সাথে নিয়ে নিবেন। যেহেতু পাহাড়ি রাস্তা, সেহেতু সাথে কিছু ঔষধ নিয়ে গেলে ভালো হয়। কিছু জায়গায় পাহাড় ট্র্যা ক করতে হয়, সেজন্য দড়ি নিলে ভাল, না নিলেও সমস্যা নেই। বনজঙ্গলে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, ক্রিম, জোঁক দমনের লবণ, সংঙ্গে নিতে পারেন।