মন হারায় মনপুরায়

মন হারায় মনপুরায়

মো. সাইফ : দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ-নাম ‘মনপুরা’! বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলাটির নাম ভোলা। ভোলা সদর থেকে দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গপসাগরের কাছে মেঘনার কোল ঘেঁষে ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে জেগে উঠা দ্বীপটিই হচ্ছে মনপুরা দ্বীপ। সাগরের ছোয়ায় থাকা এ দ্বীপকে অনেকে ‘সাগরকন্যা’ বলেও ডাকেন। লোকমুখে প্রচলিত মনপুরা ৮০০ বছরের পুরাতন দ্বীপ। পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল এখানে। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এখনো অতটা জনপ্রিয়তা না পেলেও রূপ-লাবণ্য দিয়ে পর্যটকদের মন কেড়ে নেওয়ার যথেষ্ট উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মনপুরায়।

কেন যাবেন মনপুরায়

ইট-কাঠের শহরে ভোরের সূর্যোদয়ের স্নিগ্ধতা উপভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। মনপুরায় আঁধার-কাটা আলোর সকাল দেখে সন্ধ্যায় সূর্যবিদায়ের রক্তিমক্ষণকেও খুব কাছাকাছি থেকে উপভোগ করা যাবে। রাতে সেখানে রহস্যময় নিরবতা যেন দ্বীপের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দেয়।

এখানে রয়েছে হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। ছবি: লেখক।
এখানে রয়েছে হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। ছবি: লেখক।

শীতের শুরুতে সাইবেরিয়া থেকে প্রচুর অতিথি পাখি বেড়াতে আসে মনপুরায়। দেশ-বিদেশী অতিথি পর্যটকদের জন্য পাখি দেখার সুযোগটা দ্বীপের বাড়তি আকর্ষণ। প্রায় ৬৫০ জাতের পাখি বাংলাদেশে আসে শীতকালে যার একটি বড় অংশই এখানে আসে।

মনপুরা দ্বীপ হলেও অন্যান্য দ্বীপ থেকে এর বৈশিষ্ট্য কিছুটা আলাদা। চারিদিকের সবুজ গাছপালা এতই বেশি যে একে প্রথমে দেখলে ঠিক চর মনে হবে না। এখানে রয়েছে হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সংখ্যা কোটি-ছাড়িয়ে।

উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন ক্রসডেম এলাকা এবং ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন ম্যানগ্রোভ বনকে এখানকার মানুষরা বলে থাকেন হরিনের অভয়াশ্রম! এখানে প্রায় সবসময়ই হরিণের দেখা মেলে। এছাড়া বানর ভালুকসহ আরো কিছু বন্য প্রাণীর দেখাও পাওয়া যায় সেখানে।

সী-ট্রাকসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার নোঙ্গরের জন্যে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন থাকলেও সেটি আপাতত কোনো কাজে লাগানো হচ্ছে না। বরং পর্যটক এবং এলাকাবাসীরা বিকেলের দিকে সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখতে সেখানে যান। সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যও দেখা যায় এখান থেকে।

এখানে প্রায় সবসময়ই হরিণের দেখা মেলে।
এখানে প্রায় সবসময়ই হরিণের দেখা মেলে।

বিশেষ আকর্ষণ

প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও মনপুরার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে তিনটি বিশেষ আইটেম-খাসি পাঙ্গাশ,মহিষের দুধের কাঁচা দই ও শীতের হাঁস। এছাড়া মেঘনার টাটকা ইলিশের সুব্যবস্থা তো আছেই। স্থানীয়দের মতে, এখানকার খাঁটি দুধ খেয়ে আর রূপে মুগ্ধ হয়ে মন ভরে যেত মানুষের। তাই এর নামকরণ হয়েছে মনপুরা।

প্রতিবন্ধকতা

পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মনপুরা এখনো জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থার দুরবস্থা। নদীপথে যাওয়া সম্ভব হলেও অনেক সময় লাগে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আশানুরূপ উন্নতি চোখে পড়েনি। এখানে ভালো মানের থাকার হোটেল কিংবা মোটেলের সংখ্যা খুবই কম।

যেতে চাইলে

ঢাকা সদরঘাট থেকে প্রতিদিন দুইটা করে লঞ্চ থাকে মনপুরায় যাবার জন্য। বিকেল ৫.৩০ ও ৬.৩০ মিনিটে দুটি লঞ্চ থাকে। যোগাযোগ করার নম্বর:

এম.ভি ফারহান ৩- ০১৭৮৫৬৩০৩৬৬

এম.ভি ফারহান ৪- ০১৭৮৫৬৩০৩৬৮

এম.ভি টিপু – ০১৭১৮-৭৪২২৯৯

এম.ভি পানামা – ০১৭১১৩৪৯২৫৭

মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাটে নেমে সেখান থেকে মটরসাইকেল অথবা ভ্যানযোগে যেতে হবে আবাসনের জন্যে। এছাড়া পুরো দ্বীপ ঘোরার সবচেয়ে ভালো বাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল। সারাদিনের জন্যে ভাড়া নেওয়া যায়। তারাই পর্যটকদেরকে পুরো জায়গা ঘুরিয়ে দেখায়।

থাকতে চাইলে

সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্যও দেখা যায় এখান থেকে।

চোর ডাকাত, জন্তু জানোয়ারের ভয় একেবারেই নেই তাই ক্যাম্পিং করার আদর্শ জায়গা মনপুরা দ্বীপ। তাবু খাটিয়ে আলো জ্বেলে গল্প করতে করতেই রাত কাটিয়ে দেওয়া যাবে নির্বিগ্নে। এছাড়া অল্প সংখ্যক কিছু হোটেল রয়েছে, চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন। যোগাযোগের নম্বর:

হোটেল আইল্যান্ড- ০১৭১১৭০১২৮৬

হোটেল দ্বীপ- ০১৭১-৩৯৬৫১০৬

কারিতাস হোটেল- ০১৯২৩৩৭৬৩৬৫

জেলা পরিষদ ডাকবাংলো- ০১৯৩৪১৭৫৩৬৯

প্রেস ক্লাব গেষ্ট হাউস – ০১৯১-৩৯২৭৭০৬

তথ্যঋণ: উইকিপিডিয়া,বেড়াই বাংলাদেশ, ভ্রমণ অভিজ্ঞতাfavicon594

Sharing is caring!

Leave a Comment