ভ্রমণ হোক যখন তখন
- মো. সাইফ
প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যেতে হলে প্রচুর টাকা লাগে। এই কারণে ইচ্ছে থাকলেও বাজেট-স্বল্পতার দরুণ পিছিয়ে যান অনেকেই। তবে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে,অনেক প্রস্তুতি এবং অর্থ থাকলেই ভ্রমণ আনন্দায়ক হবে এটা ভুল ধারণা, বরং হঠাৎ করেই পূর্বপরিকল্পনাবিহীন একটি ভ্রমণ আপনাকে দেবে নতুন অপ্রত্যাশিত কোনো অভিজ্ঞতা।
পাঁচটি কারণে আপনার ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ-এমনকি অর্থ অথবা পরিকল্পনা না থাকলেও আপনার ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ। আসুন তাহলে জেনে নিই সেই পাঁচটি কারণ।
-
থিংক আউট অফ দ্যা বক্স
যখন আপনি কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করেই নতুন কোনো গন্তব্যে ছুটবেন তখন আপনি নতুন করে ভাবতে শিখবেন। নতুন জায়গাটিতে গিয়ে কিভাবে থাকবেন, স্থানীয়দের সাথে কিভাবে মিশবেন, কিভাবে স্বল্প খরচে ঘুরবেন এইসব উপায় আপনাকেই বের করতে হবে। আর সেটা করতে গিয়ে দেখবেন, প্রচলিত চিন্তাভাবনা গুলো থেকে আপনি ভিন্ন ভাবে ভাবতে শুরু করেছেন !
-
নতুন খাবার এর টানে
যারা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বড় খাদ্যপ্রেমী। খাবারের টানেই তারা নতুন জায়গায় ঘুরতে যান। তাদের জন্য হঠাৎ ভ্রমণ সুফল বয়ে আনতে পারে। নতুন জায়গার নতুন খাবার তাকে রোজকার খাবারের থেকে আলাদা স্বাদের জগতে নিয়ে যেতে পারে। অন্তত রুচি বদলে ভিন্ন স্বাধ গ্রহণের তাগিদ থেকে হলেও ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ।
-
রোমাঞ্চকর অনুভূতি
প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো ভাবে “এডভেঞ্চার” পছন্দ করেন। নিজেকে রোমাঞ্চকর অপ্রত্যাশিত কিছু অনুভূতি দিতে ভ্রমণের চেয়ে ভালো মাধ্যম আর কি হতে পারে! যখন আপনি জানেন আপনার কাছে তেমন টাকা পয়সা নেই, আবার আপনি ঘুরতে যেতে চান তখন নিজের ইচ্ছে-ডানাকে উড়াতে আপনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে হলেও সেখানে যেতে চাইবেন। চ্যালেঞ্জিং ভ্রমণ আপনার জন্য হয়ে উঠবে এডভেঞ্চারময়।
আমরা সবসময়ই নিজেদের একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে কিংবা রুটিনের মধ্যেই আটকে ফেলতে চাই। যখনই আমরা খোলসের বাইরে গিয়ে ঘুরতে যাবো তখন পরিকল্পনাহীন সে ভ্রমণে অনেক নতুন কিছুই ঘটবে, অনেকক্ষেত্রেই সেখানে নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এর মধ্যেই কিছু সেরা মুহুর্ত উপহার পাবো যেগুলো হয়ত আগে থেকে পরিকল্পনা করে গেলে পাওয়া যেত না।
-
স্বাধীনতার স্বরুপ বুঝতে পারা
চাইলেই যে কোনো কিছু করা যায়। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সাহসের অভাবে বড় কোনো উদ্যোগ নিতে পারি না। আপনি যখন স্বল্প পরিমাণ অর্থকে সম্বল করে নিজের মতো ঘুরে আসতে পারবেন, তখন নিজেকে অনেক স্বাধীন মনে হবে। নতুন ভাবেই নিজেকে চিনতে পারবেন। আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে চাইলে আপনিও পারেন সাহস করে হারিয়ে যেতে। এই ধরনের ভ্রমণের পর নিজেকে অনেক বাস্তবিক-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মনে হবে আপনার কাছে। তাই এই ধরনের অপরিকল্পিত ভ্রমণ এ যাওয়া উচিৎ যা আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করবে সমৃদ্ধ।
মার্ক টোয়েন একটি গুরুত্বপূর্ন কথা বলেছিলেন-‘এখন থেকে কুড়ি বছর আপনি হতাশ হবেন যা করেছেন তার বিনিময়ে যা কিছু করতে পারেননি সেটা ভেবে। এমন অনেক কিছু থেকে আপনি এখন নিজেকে বঞ্চিত রাখছেন যা না পাওয়ার কষ্ট ভবিষ্যতে আপনাকে পোড়াবে। নিজের ইচ্ছাগুলোকে বুঝুন,স্বপ্ন দেখুন,নিজেকে আবিষ্কার করুন।’ এখন আপনার হাতে যদি ভ্রমণ করার মতো সময় থাকে এবং ইচ্ছা থাকে তাহলে সাত-পাঁচ না ভেবে আপনার উচিৎ হবে ‘চলোনা ঘুরে আসি অজানাতে—’ গাইতে গাইতে ঘুরতে চলে যাওয়া। মাঝে মধ্যে একটুখানি সাহসী পদক্ষেপে নিজের ইচ্ছা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেস্টা করা উচিৎ, নয়ত কুড়ি বছর পর নিজের স্বপ্নফুলগুলো ঝরে যাওয়ার বেদনায় নীল হয়ে থাকতে হবে ।