হিমাচলের অজানা গ্রাম চাম্বা
- রেশমি প্রামাণিক
হিমাচলে গিয়ে সিমলা, ডালহৌসি, কসৌনি তো সবাই যায়। এবার এই চম্বা গ্রামটি থেকে ঘুরে এলে কিন্তু বেশ হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ঘোরার প্ল্যান থাকলে চাম্বাকে লিস্টে রাখতে পারেন। কারণ এই সময়টাতে এখানকার আবহাওয়া থাকে অত্যন্ত মনোরম। ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির পারফেক্ট কম্বিনেশন এই জায়গাটি। এছাড়াও সংস্কৃতির দিক দিয়েও ভরপুর চাম্বা। এখন সেখানকার জনসংখ্যা ২২ হাজারের কাছাকাছি।
চাম্বা জানা জরুরি
নামটি বড় মিষ্টি। চাম্বা। না না, নিউমার্কেটের কোনও দোকানের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটি হিমাচল প্রদেশের একটি ছোট্ট পর্যটনক্ষেত্র। পর্বতের পিছনে চাম্বা গ্রাম, গ্রামে থাকেন খাসাস আর আদুমবারাস আদিবাসী। আদিই বটে। সেই দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে নাকি এই আদিবাসীরা এই গাঁয়ে বাস করে। সাধারণ লোকে ওদিকটা বিশেষ যাতায়াত করতেন না। কিন্তু আদিবাসীদের লোকগীতি এই ছোট্টো গ্রামটির সঙ্গে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সিমলা নেহি বসনা, কসৌনি নেহি বসনা, চাম্বা যানা জরুর। আর সেখানে একবার গেলে গানের প্রতিটি পংক্তির সত্যতা উপলব্ধি করবেন। প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য ঢেলে দিয়ে বড় আদরে তৈরি করেছে এই চাম্বাকে।
জলের পর জঙ্গল
ব্রিটিশ আমলে চাম্বার কালাতোপ জঙ্গল শিকারীদের প্রিয় জায়গা ছিল। এখন অবশ্য এটি অভয়ারণ্য। শিকারী বন্ধ হলেও জঙ্গলের সৌন্দর্য আর অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানি একই রকম রয়ে গেছে। গাইডের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জঙ্গলে হেঁটে বেড়ান, গল্প করুন, গল্প শুনুন কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। ভাগ্যে থাকলে শেয়াল, লেপার্ড, লেঙ্গুর, হিমালয়ের বিখ্যাত ব্লাক মার্টেন দেখতে পাবেন। দেখতে পাবেন হাজার প্রকৃতির পাখি।
নদীর ধারের গ্রামটি
চাম্বার উত্তরে আছে চন্দ্রভাগা আর দক্ষিণে ইরাবতী নদী। তাই নদীর পাড়ে সময় কাটানো চাম্বার একটি ঐতিহ্য। নদীর স্রোতের ঝিরিঝিরি শব্দে মন আকুল হতে না হতেই এখানকার মণিমহেশ হ্রদ আপনাকে যেন নাম ধরে ডাকবে। বলবে আয়, একবার আমার রূপের ছটাটাও দেখে যায় এই হ্রদের উৎস পীর পিঞ্জলের মণিমহেশ কৈলাশ শৃঙ্গ। আর হিন্দুদের পবিত্র মণিমহেশ যাত্রা এই হ্রদকে ঘিরেই হয়। চার হাজার ৮০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই হ্রদ এবং তীর্থযাত্রার সঠিক সময় অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস।
বাঁধের বাধা
চাম্বায় গেলে সেখানকার চামেরা বাঁধের আকর্ষণ কিছুক্ষণের জন্য তার রূপের আকর্ষণে আপনাকে বেধে ফেলবে। ইরাবতী নদীর এই চামেরা বাঁধ চত্বরে গিয়ে ঘণ্টা খানেক কাটাতে পারেন। ভালো লাগবে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, এই বাঁধের গুরুত্বও এলাকায় যথেষ্ট রয়েছে। ৫৪০ মেগাওয়াটের থেকেও বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এই বাঁধ থেকে।
ভক্তিতেই শক্তি
কোনও জায়গায় ঘুরতে গেলে সেখানকার মন্দিরগুলো একেবারেই মিস করবেন না। প্রতিটি মন্দিরের পিছনে লুকিয়ে আছে একটি করে ইতিহাস। এই যেমন চাম্বার বিখ্যাত চামুণ্ডা দেবী মন্দিরের কথাই ধরা যাক। ১৭৬২ সালে মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন রাজা উমেদ সিং। মন্দিরটি কাঠের তৈরি। মন্দিরের ভিতর পাশাপাশি অবস্থান করেন শিব এবং শক্তি। চামুণ্ডা মন্দির থেকে ধরমশালার দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। তাই মন্দির দর্শনের পর ধরমশালা থেকে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়।
ভুরি সিং মিউজিয়াম
চাম্বার রাজাররাজার রুমাল, অস্ত্র আর অ্যান্টিক কালেকশন দেখতে ভুরি সিং মিউজিয়াম যাওয়া দরকার। সেখানকার জাদু মিউজিয়ামেই মিলবে। ১৯০৮ সালে তৈরি হয় এই মিউজিয়াম। হিমাচল প্রদেশের অনেক খুঁটিনাটি ইতিহাস ধরা আছে এই মিউজিয়ামে।
সূত্র: এই সময়