সেই ১৯৩৯ সাল থেকে ‘হাজির বিরিয়ানি’
- ওমর ফারুক পিয়াস
হাজি বিরিয়ানি (হাজীর বিরিয়ানি নামেও পরিচিত) পুরান ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম রেস্তোরাঁ যারা ছাগলের মাংসের বিরিয়ানি, বোরহানী (দই দিয়ে তৈরি নোনতা পুদিনা পানীয়) এবং কোমল পানীয় বিক্রি করে। ১৯৩৯ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি রেস্তোরাঁটি চালু করেছিলেন। পরবর্তীতে এর ব্যবসায় নাটকীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শহরের সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে।
মোঘল সাম্রাজ্যের সময় বাদশাহদের দরবারে সবচেয়ে প্রচলিত খাবার ছিল বিরিয়ানিসহ কাবুলি, খিচুড়ি, হালিম, বাকরখানি, রুটি, কাবাব, শরবত, দোলমাজাতীয় তরকারিসহ আরো নানা ধরনের খাবার। তাদের ঐতিহ্য এখনও বহাল রেখেছে পুরান ঢাকাবাসী। রমজান মাসে ইফতারে ঢাকার মানুষের সব থেকে পছন্দের খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতেই থাকে এসব খাবার। আর তাইতো প্রতিদিনই অসংখ্য খাদ্যরসিকেরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ভিড় জমায় পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে।
কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে তোররাবন্দি, মোরগ মোসাল্লাম, নার্গিস কোফতা, হারিরা, মাকুতি, মুতানজান, শিরমাল, গাওজাবান রুটি, গাওদিদা রুটি এই খাবার গুলো হারিয়ে গেলেও কিছু খাবার তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দিয়ে মানুষের মন জয় করে আসছে ।
মোঘল সাম্রাজ্যের শাহী খাবারের মধ্যে স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় ছিল বিরিয়ানি। আর বিরিয়ানি পূর্বদেশীয় মানুষদের কাছ থেকেও পেয়েছে সমান জনপ্রিয়তা। সেই জনপ্রিয়তা এখনো ধরে রেখেছে হাজির বিরিয়ানি। হাজির বিরিয়ানির প্রধান শাখা কাজী আলাউদ্দিন রোডে গিয়েই দেখা পাওয়া যাবে সাইনবোর্ড। হাজি বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধ বাজারের অন্যদের তুলনায় আলাদা। স্বাদ ও গন্ধ আলাদা হওয়ায় কিছু দিনের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। আর সেই সময় বিরিয়ানি পরিচিতি পায় হাজির বিরিয়ানি নামে। ১৯৯২ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ গোলাম হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং শৈলী ও ঐতিহ্যের কোনো পরিবর্তন না করেই পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে যান। সময়ের সাথে সাথে হাজী মোহাম্মদ গোলাম পারিবারিক ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ব্যবসাটি তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ শাহেদের হাতে তুলে দেন। আর বর্তমানে ব্যবসা দেখাশোনা করছেন তার নাতি মোহাম্মদ সাহেদ হোসেন।
হাজী বিরিয়ানির দোকানে শুধুমাত্র বিক্রি হয়ে থাকে কাচ্চি বিরিয়ানি। হাজীর বিরিয়ানি তৈরির মূল উপাদান হচ্ছে- চাল, ছাগলের মাংস, সরিষার তেল, রসুন, পিঁয়াজ, গোল মরিচ, জাফরান, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, লবণ, লেবু, দই, চীনাবাদাম, ক্রিম, কিশমিশ এবং সামান্য পরিমাণ পনির (গরু বা মহিষের)। রন্ধনপ্রণালীটি রেস্তোরাঁর প্রতিষ্ঠাতা তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর করেছেন। হাজী মোহাম্মদ শাহেদ দাবি করেন, ‘আমি কখনো কিছু পরিবর্তন করিনি, এমনকি লবণের পরিমাণও পরিবর্তন করিনি। ব্যবসার প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ দেশীয় সব মশলা ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে এখন পর্যন্ত প্রায় একই রকম স্বাদ ও গন্ধ বিদ্যমান রয়েছে এই বিরিয়ানির।
হাজীর বিরিয়ানি দাম বর্তমানে হাফপ্লেট ৮০ টাকা ও ফুলপ্লেট ১৬০ টাকা। পুরান ঢাকা ব্যতিত হাজীর বিরিয়ানির আরো দুইটি শাখা আছে। একটি মতিঝিল বিমান অফিস ও অপরটি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতে।
যাবেন যেভাবে
পুরান ঢাকায় এসে হাজীর বিরিয়ানির স্বাদ গ্রহণ করতে চাইলে সবার প্রথমে আপনাকে বাসে করে নিউমার্কেট বা আজিমপুর যেতে হবে। ওখান থেকে আপনাকে রিকশা নিয়ে বংশাল হয়ে কাজী আলাউদ্দিন রোডে যেতে হবে। দরদাম করে রিকশাতে ভাড়া পড়তে পারে ৫০-৮০ টাকার মতো। এছাড়াও গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকাতে যাওয়ার জন্য অনেক বাস রয়েছে। অনেকে আবার তাদের নিজস্ব বাহন নিয়েও যায়। তবে পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট কিছুটা ছোট হওয়াতে বেশিরভাগ সময়ই অনেক যানজট থাকে এবং সেজন্য হাতে সময় নিয়ে যাওয়া উচিত।